Cvoice24.com

প্রতিবছর এরকম দুর্যোগ নিতে পারবো না, একটা স্থায়ী সমাধান চাই : বিভাগীয় কমিশনার

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:১৭, ২১ জুন ২০২২
প্রতিবছর এরকম দুর্যোগ নিতে পারবো না, একটা স্থায়ী সমাধান চাই : বিভাগীয় কমিশনার

মঙ্গলবার (২১ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৪তম সভা অনুষ্ঠিত হয়।

‘প্রতিবছর এরকম দুর্যোগ নিতে পারবো না, একটা স্থায়ী সমাধান চাই’— বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর বৃষ্টি হলেই পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের যুদ্ধ শুরু হয়। শুরুতে যখন তারা ঘর বানায় তখন আমরা কিছু বলছি না। পরে দুই তিন বছর পর উচ্ছেদ করছি; এটা তো ঠিক না। মূলত আমরা কেউই নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করছি না। উচ্ছেদ খুব কঠিন। উচ্ছেদ করার পর মাস খানেক মনিটরিংয়ে রাখতে হবে। পাহাড়ে বসবাসকারীদের স্থায়ীভাবে সরাতে ইউটিলিটি সার্ভিস যত কমানো যাবে, মানুষ সেখানে বসবাসে তত নিরুতসাহিত হবে।’  

মঙ্গলবার (২১ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৪তম সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরিতে বিদ্যুৎ সংযোগকেই দায়ী করে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে যারা বসবাস করছে তারা মূলত অবৈধভাবে স্থাপনা করছে। পাহাড়ে বসবাসকারীদের স্থায়ীভাবে সরাতে ইউটিলিটি সার্ভিস যত কমানো যাবে, মানুষ সেখানে বসবাসে তত নিরুতসাহিত হবে। পরে ধীরে ধীরে পাহাড় থেকে চলে যাবে। তাই বিদ্যুৎ বিভাগ যদি এমন কিছুর মাধ্যমে পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তাহলে মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা না পেয়ে সেখানে আর অবস্থান করবে না। 

তিনি আরও বলেন, ‘টিউবওয়েল থেকে পানি তুলতেও বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। এছাড়া টিভি দেখা থেকে শুরু করে মোবাইল ব্যবহার ও দৈনন্দিনের যাবতীয় কাজের ক্ষেত্রেও বিদ্যুৎ ছাড়া সম্ভব নয়। বিদ্যুতের অংশটা যদি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। তাহলে পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। 

বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে পানি ও গ্যাসের মতো সেবা সংস্থাগুলোর সংযোগ যাতে পুরোপুরি অপসারণ বা বিচ্ছিন্ন করা যায় সে বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা চাওয়া হবে বলে জানান তিনি। 

পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাবে কিনা— বিভাগীয় কমিশনারের এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (খুলশী) মো. শাহ রেওয়াজ মিয়া বলেন, ‘পাহাড়ে আমাদের কোনো বৈধ সংযোগ নেই। তবে তারা সাব মিটার দিয়ে লাইন টেনে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। এ খাতে সরকার অনেক রেভিনিউ (রাজস্ব) থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়টাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হয় তাই আমাদের কিছু করার থাকে না। এমনও দেখেছি মতিঝর্ণা এলাকায় ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে বসবাস করছে। অনেক বছর পর তারা বিদ্যুতের সংযোগ চায়। তখন একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের রেভিনিউর কথাও ভাবতে হচ্ছে।’

সভার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের কিছু সংযোগ পাহাড়ি অঞ্চলে আছে। তবে গ্যাস কোম্পানির যারা আছেন তারা বলছেন তাদের কোনো সংযোগ নেই সেখানে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিনিধিরাও জানিয়েছেন, ওয়াসার কোনো পানির সরবরাহের লাইন সেখানে নেই। 

আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ২০৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। পাহাড়ে যাদের জায়গা আছে তাদের অনুরোধ করবো উচ্ছেদ করার পর সেখানে যাতে নতুন করে কোনো বসতির ব্যবস্থা করতে না পারে; কোনো লোকজন ঢুকতে না পারে সেই ব্যবস্থাটা করবেন। একইসঙ্গে শূন্য হওয়া যে জায়গাগুলো আছে সেগুলোতে তারকাটার বেড়া ও গাছপালা লাগিয়ে জায়গা যেন দখল করে রাখে।’ 

সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভূমি) মো. মাসুদ কামালের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাকির হোসেন খান, নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) আবদুল ওয়ারীশ, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার পরিচালক মফিদুল হক, পরিচালক (মহানগর) হিল্লোল বিশ্বাসসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা।

সিভয়েস/ এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়