Cvoice24.com

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া, প্রতিবেদন গেল উচ্চ আদালতে 

সিভয়েস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ২৪ জুলাই ২০২২
চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া, প্রতিবেদন গেল উচ্চ আদালতে 

চট্টগ্রাম ওয়াসা ৮শ’ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপ লাইনের মাধ্যমে নগরের ৮০ হাজার গ্রাহকের কাছে ‘বিশুদ্ধ পানি’ সরবরাহ করছে। এসব পানির মান যাচাইয়ে প্রতিমাসে নিজস্ব উদ্যোগে পরীক্ষাও করে থাকে সংস্থাটি। তবে কখনো তাদের করা পরীক্ষায় পানি দূষিত হয়েছে বা ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে এরকম খবর প্রকাশ করেনি ওয়াসা। কিন্তু গত ৬ মার্চ উচ্চ আদালতের এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিত পানির মান যাচাইয়ে করা হয় চার সদস্যের কমিটি। আর তাতেই বেরিয়ে এলো ওয়াসার পানির মানের কি অবস্থা! 

চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহ করা গভীর নলকূপের পানিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ‘কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার’ উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এই ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন আন্ত্রিক ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি করে। কলিফর্ম মিশ্রিত পানি পানে ডায়রিয়া, আমাশয়, রক্ত আমাশয়, কলেরা, টাইফয়েড ছাড়াও ভাইরাল হেপাটাইটিস (জন্ডিস) রোগের সূচনা হয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া মিশ্রিত পানি পানের আগে অবশ্যই ১৫ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে এসব জটিল রোগ থেকে বাঁচতে। 

গত ৬ মার্চ এক রিটের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পরীক্ষা করতে চার সদস্যের কমিটি গঠনের আদেশ দেন উচ্চ আদালত। সেই আদেশের প্রেক্ষিতে ১৩ জুন থেকে ওয়াসার ২৪ পয়েন্টের নমুনা নেওয়া হয় শুরু করে কমিটি। পরে নমুনা পানিগুলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের মাইক্রোবায়েলজি বিভাগ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও পরিবেশ অধিদপ্তরে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে লাভলেইনে অবস্থিত চট্টগ্রাম ওয়াসার গভীর নলকূপের পানি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে পরীক্ষা করা হলে কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

সম্প্রতি পানির নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে পাঠিয়েছে তদন্ত কমিটি। কমিটির এক সদস্য বলেছেন, ‘লাভলেন এলাকায় অবস্থিত ওয়াসার গভীর নলকূপের পানি একটি ল্যাবে পরীক্ষার পর সে পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যা শোচনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি। অবশ্য পরিশোধনের মাধ্যমে ওয়াসা যেসব সারফেস ওয়াটার (ভূমির উপরিভাগের পানি) গ্রাহকদের সরবরাহ করছে সেগুলোতে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। উচ্চ আদালত থেকে পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

এদিকে যে গভীর নলকূপের পানিতে কলিফর্ম পাওয়া গেছে, সেই নলকূপে উৎপাদিত পানি সরবরাহ করা হয় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসন কার্যালয়, বন সংরক্ষকের কার্যালয় রাজাপুকুর লেন, বৌদ্ধ মন্দির সংলগ্ন এলাকায়।

এই গভীর নলকূপ থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৭৫ হাজার লিটার (দিনে ১৮ লাখ লিটার) পানি উৎপাদন করে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা হয় বলে জানিয়েছেন ওয়াসার মড–৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের পানির নমুনা নেওয়া হয়েছিল। তবে কোনো সমস্যা ধরা পড়েছে কিনা জানি না। আর কোনো সমস্যা থাকলে তো আমরা গ্রাহকদের ডায়রিয়াসহ নানা সমস্যা হতো। এমনকি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ও এই পানি ব্যবহার করেন। কখনো অভিযোগ পাইনি।’

নাম প্রকাশ না করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, ‘পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার সহনীয় মাত্রা শূন্য। এর বেশি হলেই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। মূলত পানিতে প্রাণিজ বর্জ্যের মিশ্রণ ঘটলে ধরে নিতে হবে যে, পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটি আছে।’

ওয়াসার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পানির উৎপাদন ব্যবস্থায় কোনো জীবাণুর উপস্থিতি থাকার কথা না। তবে পানি সরবরাহ লাইনে অনেক সময় ফুটো হয়ে যাওয়ায় ড্রেনের ময়লা পানি ঢুকে ওয়াসার পানিকে দূষিত করে ফেলে। এ কারণে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকতে পারে।'

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন— স্তন্যপায়ী প্রাণীর অন্ত্র এই ব্যাকটেরিয়ার উৎস। যদিও প্রকৃতিতে বা মাটিতে এ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি খুব স্বাভাবিক, কিন্তু পানিতে এ রকম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ঘটলে বুঝতে হবে সেই পানিতে প্রাণিজ বর্জ্যের মিশ্রণ ঘটেছে।কলিফর্ম মিশ্রিত পানি পানে ডায়রিয়া, আমাশয়, রক্ত আমাশয়, কলেরা, টাইফয়েড ছাড়াও ভাইরাল হেপাটাইটিস (জন্ডিস) রোগের সূচনা হয়। কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া মিশ্রিত পানি পানের আগে অবশ্যই ১৫ মিনিট ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করতে হবে। 

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেছেন, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ, ময়লা ও লবণাক্ততা চট্টগ্রামবাসীর নিত্যসঙ্গী। সরাসরি এখনও ওয়াসার পানি পান করতে পারি না। ফুটিয়ে পানি খেতে হয়। পানির কারণে ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ পানিবাহিত রোগ বেড়েই চলেছে। ২০১৮ সালে হালিশহরে পানিবাহিত রোগে বেশ কজন মারাও যায়। 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে ওয়াসার পানি নিয়ে নগরবাসীর অনেক অভিযোগ আসে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পতেঙ্গা, বন্দর, হালিশহর ও পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দাদের। এসব এলাকার অভিযোগ, ওয়াসার পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ রয়েছে। পুরাতন সঞ্চালন লাইনে পানি সরবরাহ করায় তা কাদা পানিতে একাকার হয়ে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত হচ্ছে। এছাড়া হালিশহর এলাকায় স্যুয়ারেজ লাইন এবং পানির লাইন একসঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। এ কারণে ওই এলাকার পানি ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, গত ৬ মার্চ উচ্চ আদালতে এক রিট আবেদেনের প্রেক্ষিতে ৩০ দিনের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য নিম্নলিখিত চার সদস্যের কমিটি গঠন করে পানির ২৪ পয়েন্ট থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। কমিটির সদস্যরা হলেন— চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একজন শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিসিএসআইআর ল্যাবরেটরির একজন প্রতিনিধি ও চট্টগ্রাম বিভাগ পরিবেশ ল্যাবরেটরির একজন প্রতিনিধি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়