Cvoice24.com

পানি না দিয়েও ৮ মাস ধরে নিয়মিত বিল নিচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:০০, ৩ আগস্ট ২০২২
পানি না দিয়েও ৮ মাস ধরে নিয়মিত বিল নিচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা

চট্টগ্রাম ওয়াসা।

‘বহু কষ্ট করে পানির সংযোগ নিয়েছি। যথা সময় বিলের টাকা পরিশোধ করছি। কিন্তু আট মাসেও এক ফোটা পানি চোখে দেখিনি। রান্না, গোসলসহ গৃহস্থালি কাজে অবর্ণনীয় কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই পানি কিনে আবার কেউ কেউ নলকূপের পানি দিয়েই প্রয়োজনীয় কাজ সারছেন। ভাড়াটিয়ারা বাসা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছেন। পানি না পেলেও ওয়াসা নিয়মিত বিল নিচ্ছে। আমাদের পানি দেওয়া হোক, না হলে টাকাগুলো ফেরত দেওয়া হোক।’   

পানি নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা এভাবেই বর্ণনা করেন নগরের আকবরশাহ থানার পশ্চিম খুলশীর আব্দুল হামিদ সড়কের বাসিন্দা আমান উল্লাহ আমান। তিনি ওই এলাকার একটি আবাসিক ভবনের মালিক। তাঁর সঙ্গে কথা বলতেই ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা ওয়াসার পানির বিল পরিশোধের রসিদ দেখান।

পাইপলাইনের সংযোগ নিলেও এ এলাকায় এখনও ওয়াসার কল পানিশূন্য। এর পাশাপাশি গেল আট মাস ধরে আছিয়া খাতুন, নুরুল আমিন ও ফয়েজ সংলগ্ন আবাসিক এলাকায় পৌঁছায়নি সুপেয় পানি। ফলে তীব্র তাপদাহে এসব এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। 

আব্দুল হামিদ সড়ক ছাড়াও নগরের প্রাণকেন্দ্র দক্ষিণ খুলশী, আকবর শাহ থানাধীন ফিরোজ শাহ ও কৈবল্যধাম বিশ্ব কলোনী এবং হালিশহরের কিছু এলাকার বাসিন্দাদের কাছে ওয়াসার পানি সংকট এখন পরিণত হয়েছে নিয়তিতে। বাধ্য হয়ে এসব এলাকার ভবন মালিকরা মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করে ঝুঁকছেন গভীর নলকূপের দিকে। যাদের এককভাবে গভীর নলকূপ বসানোর সামর্থ্য নেই তারা কয়েক জন মিলে বসাচ্ছেন ৩৯০ থেকে ৫০০ ফিটের গভীর নলকূপ। ভৌগলিক দিক দিয়ে এসব এলাকা কিছুটা উঁচু হওয়ায় পানির চাপও কম। ফলে দীর্ঘক্ষণ ধরে গভীর নলকূপ ব্যবহার হওয়ায় চাপ পড়ছে বিদ্যুতের ওপর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ৮ এপ্রিল পশ্চিম খুলশীর আব্দুল হামিদ সড়ক এলাকার শতাধিক গ্রাহক ওয়াসার পানির মিটারের সংযোগ নেন। বস্তি ও বহুতল ভবন মিলে এখানে প্রায় ২০ হাজারের বেশি বাসিন্দা বসবাস করেন। এলাকাটিতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, বিদেশি ও ইউএসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাস করেন। এছাড়াও ফয়েজ এলাকায় চিড়িয়াখানায় হওয়ায় এখানে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সমাবেশ ঘটে।

সংযোগ নেওয়ার পর ওই এলাকায় গ্রাহকরা চলতি বছরের মে পর্যন্ত এককালীন ৪ হাজার ৫৩৭ টাকার বিল পরিশোধ করেছেন। বিল দিয়েও পানি না মেলায় গত ২৪ মার্চ ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ সঙ্গে দেখা দেখা করেন ফয়েজ লেক আবাসিক মালিক কল্যাণ সমিতি নেতারা। দেখা করার সময় নেতারা এমডিকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৭ সালে আব্দুল হামিদ সড়ক এলাকায় পাইপ লাইন বসানোর বিষয়টি তুলে ধরেন। একই সঙ্গে আর্থিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কথা জানান। 

চিঠির প্রেক্ষিতে ওয়াসা এমডি এক মাসের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন। এরপর ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তা সেখানে গেলেও বিষয়টির সমাধান হয়নি। এদিকে মেসেজ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে এপ্রিল ও মে মাসের ৪৬৫ টাকা বিল নেয়। গত ২৮ জুলাই গ্রাহকদের কাছ থেকে জুন মাসের বিলের জন্য রশিদ পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও কোনো কর্মকর্তা ওই এলাকায় যাননি। তবে সর্বশেষ ১৩ জুলাই সংস্থাটি মাসিক বিল আদায়ের লক্ষ্যে গ্রাহকদের মোবাইলে খুদে বার্তা দেয়। 

তবে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ থাকায় সেখানে বিলের কপি নিয়ে কর্মকর্তারা যেতে পারছেন না বলে ওয়াসার এক নাম কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করার শর্তে বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ওই এলাকার পাশে আছিয়া খাতুন আবাসিক এলাকায় ২০ হাজার, নুরুল আমিন আবাসিকে ১৫ হাজার ও ফয়েজ লেক আবাসিকে ২০ হাজার বাসিন্দা রয়েছেন। পানি না মেলায় এসব এলাকায় মানুষও অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফয়েজলেক আবাসিক মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সামসুল কবির মুকুল সিভয়েসকে বলেন, পানির সংযোগ নেওয়া থেকে  শুরু করে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি মিটারের গ্রাহককে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকার পরও টাকা দিয়ে পানি পাই না। এখন আমাদের পানি না দিয়ে উল্টো লাইসেন্স দিয়ে গভীর নলকূপ স্থাপন করার জন্য বলছে। আমরা আবারও এমডির সঙ্গে দেখা করবো। তিনি সমাধান না করলে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করবো। 

ওই এলাকার একটি ভবনের কেয়ারটেকার মো. বেলাল সিভয়েসকে বলেন, আমাদের ভবনের ১০ টি ফ্ল্যাটের ৫০ জনের বসবাস। এই এলাকায় বেশ কিছু বহুতল ভবনের কাজ চলছে। কিন্তু আবাসিক এলাকা হিসেবে এখানে মান সম্মত ভাড়াটিয়া পাওয়া যায় না। অনেকে বাসা নিয়ে কয়েক মাস পর পরই ছেড়ে চলে যায়।

নগরের আকবরশাহ থানার পশ্চিম খুলশীর আব্দুল হামিদ সড়ক এলাকাটি ওয়াসার পানি সরবরাহ মড-২ (দামপাড়া) জোনের অন্তর্ভুক্ত। সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে মড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সজিব বড়ুয়া সিভয়েসকে বলেন, উঁচু এলাকা বর্তমানে ওই এলাকায় আমাদের পানির প্রেশারটা কম। এমন পরিস্থিতিতে আমরা একাধিকবার গ্রাহকদের সংযোগ স্থগিত করতে বলেছি। কিন্তু উনারা বিষয়টি সেভাবে আমলে নেয়নি। তবে সেপটেম্বর মাসে জাইকার অর্থায়নে আমাদের নতুন এক প্রকল্প চালু হলে ওই সব এলাকায় পানির ডাইভারভেশন সংযোগ দেওয়া হবে। আশা করছি সামনের মাসে এটির সমাধান হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে কথা হয় সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিমের সঙ্গে। তিনি সিভয়েসকে বলেন, আব্দুল হামিদ সড়ক ছাড়াও রোজ ভ্যালি, আকবরশাহ, ফয়েজ লেক, পূর্ব ফিরোজ শাহসহ এই জোনের গ্রাহকরা বিল দিলেও পানি পান না। আমার দুটি বাসায় প্রায় ২ হাজার ৪০০ টাকা বিল দেই, কিন্তু এক ফোটা পানি পাইনা। বিষয়টি সমাধানে একাধিকার ওয়াসার এমপির সঙ্গে দেখা করেছি। সিটি মেয়র রেজাউল করিম দিয়ে সরাসরি এমডিকে ফোন করেছি। এরপর সেখানে পানির বিষয়টি সমাধান হয়নি।

-সিভয়েস/আরকে/এআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়