Cvoice24.com

শ্রেণিভিত্তিক বর্জ্য অপসারণে ‘আগ্রহ’ নেই চসিকের, একবছর ধরে পড়ে আছে ফি’র তালিকা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:২৮, ১২ আগস্ট ২০২২
শ্রেণিভিত্তিক বর্জ্য অপসারণে ‘আগ্রহ’ নেই চসিকের, একবছর ধরে পড়ে আছে ফি’র তালিকা

চট্টগ্রামের সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য দুটি আবর্জনাগারে অপসারণ করে থাকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। প্রতি টন বর্জ্য অপসারণের জন্য ৫৭৫ টাকা করে ফি দিতে হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে। তবে বর্জ্যের ধরণ অনুযায়ী আলাদা করে কোনো ফি দিতে হয় না। কিন্তু দুইবছর আগে বর্জ্যের ধরণ অনুযায়ী অক্ষতিকর বর্জ্য অপসারণের ফি নির্ধারণ করে অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। 

তার পাঁচ মাস পর ২০২১ সালে ঢাকা উত্তর সিটির মতো চট্টগ্রামেও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য অপসারণ ফি বাড়ানো যায় কিনা তা জানতে চসিক থেকে মতামত চায় মন্ত্রণালয়। সেসময় চসিক কোনো উত্তর দেয়নি। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের তাগাদায় ওই বছরের ৩ অক্টোবর বর্জ্য অপসারণ ফি’র তালিকা তৈরি করে চসিক। কিন্তু তালিকা তৈরি করলেও তা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়নি সংশ্লিষ্টরা। 

এমনকি প্রস্তাবনাটি কোন অবস্থায় আছে তারও কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগ। যে কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে ঝুলে আছে প্রস্তাবটি। সেসময় চসিক বলেছিল, বর্জ্য অপসারণ ফি বাড়ালে চসিকের রাজস্ব আয়ও বাড়বে এবং যারা বর্জ্য অপসারণ করবেন তাদের উপরও চাপ কম হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের তাগাদা পাওয়ার পরও আগের নিয়মেই প্রতি টন বর্জ্য অপসারণের জন্য নির্ধারিত ফি আদায় করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু সব বর্জ্যের ধরণ এক না হওয়ায় অপসারণকারীদের কাজের চাপ বেশি বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। আর এ কারণে বর্জ্য অপসারণেও ধীরগতি নিয়মে কাজ চলছে চট্টগ্রামে। 

এদিকে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যগুলোকে সাত ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ফি বাড়ানোর জন্য একটি খসড়া তৈরি করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। তাদের প্রস্তাবে প্রতি টন নির্মাণ বর্জ্য অপসারণের জন্য আড়াই হাজার টাকা, অক্ষতিকর শিল্প বর্জ্য পাঁচ হাজার টাকা, পচনশীল বর্জ্য তিন হাজার টাকা, অপ্রয়োজনীয় (পেপার, প্লাস্টিক) বর্জ্য দুই হাজার টাকা, সিরামিক বজ্য পাঁচ হাজার টাকা, ধাতব বর্জ্য তিন হাজার টাকা, প্রশমিত রাসায়নিক বর্জ চার হাজার টাকা এবং বিবিধ বর্জ্যের জন্য আড়াই হাজার টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়। 

অন্যদিকে চসিকের প্রস্তাবিত বর্জ্য অপসারণ ফি ঢাকা উত্তরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক। নির্মাণ বর্জ্য অপসারণে দেড় হাজার টাকা, প্রতি টন অক্ষতিকর শিল্পবর্জ্য থেকে তিন হাজার টাকা, পচনশীল বর্জ্য দেড় হাজার টাকা, অপ্রয়োজনীয় (পেপার, প্লাস্টিক) বর্জ্য থেকে এক হাজার টাকা, সিরামিক বর্জ্য তিন হাজার টাকা, ধাতব বর্জ্য দুই হাজার টাকা, প্রশমিত রাসায়নিক বর্জ্য আড়াই হাজার টাকা এবং বিবিধ বর্জ্যের জন্য এক হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। এর সঙ্গে ভ্যাট যোগ হবে বলেও জানায় সংশ্লিষ্টরা। 

চসিক সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এবং রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য বর্জ্য অপসারণ ফি’র তালিকা করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। যদিও শুরু থেকে ফি বাড়ানোর দিকে আগ্রহী ছিলেন না কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের তাগাদায় ফি সহনীয় রেখে তালিকা করে চসিক। কিন্তু তালিকা করে নিজের কাছেই রেখে দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেম সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা চিঠি পাঠাবো তারপর অনুমোদন পেলে সেটা কার্যকর করা হবে। আমার জানামতে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়নি। তাছাড়া আমি তো নতুন করে দায়িত্ব নিলাম, বেশি দিন হয়নি। যদি না পাঠানো হয় তবে আবার নতুন করে পাঠাবো। যদি মন্ত্রণালয়ে থাকে তাহলে অনুমোদন নিয়ে আসবো। কারণ এখন যে ফি নেওয়া হয় তা অনেক কম।’

একই বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা এটা আগের নিয়মেই ভ্যাটসহ ৫৭৫ টাকা করে নিচ্ছি। এটা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে বাড়ানো হবে। মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে হয়তো এক হাজার টাকা করে বাড়ানো হতে পারে। তাও খুব একটা বেশি না। তবে এটা এখনো কার্যকর হয়নি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফি বাড়ালেও রাজস্ব আর কত বাড়বে। এমনিতেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আর কয় টাকাইবা দেয়। ফাইল তো আমার মাধ্যমেই যায় আমি দেখি অতো টাকাও আসে না।’

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, শপিংমল, ফুড এন্ড বেভারেজ কোম্পানি, ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের অক্ষতিকর বর্জ্য অপসারণের ফি নির্ধারণের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। যা অনুমোদনের জন্য একই বছরের ১৭ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। ওই খসড়াটি গত বছরের ৮ এপ্রিল চসিকের কাছে পাঠিয়ে মতামত চেয়েছিল মন্ত্রণালয়। তখন চসিক কোনো উত্তর দেয়নি। সর্বশেষ ওই বছরের ৩ অক্টোবর তালিকা করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ চসিক প্রধান নির্বাহীকে তাগাদা দিয়ে নির্দেশনা দেয়। এর প্রেক্ষিতে বর্জ্য অপসারণ ফির তালিকা তৈরি করে চসিক। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তা ঝুলে আছে।

সিভয়েস/এসআর/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়