Cvoice24.com

দরপত্রে থমকে আছে ওয়াসার অটোমেশন প্রকল্প

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:৩৮, ১৩ আগস্ট ২০২২
দরপত্রে থমকে আছে ওয়াসার অটোমেশন প্রকল্প

‘ভুতুড়ে’ বিলের অভিযোগ মাথায় নিয়ে গ্রাহকদের ডিজিটাল বিলিংয়ে স্বপ্ন দেখিয়েছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। ২০১৯ সাল থেকে ডিজিটাল বিলিংয়ের চিন্তা মাথায় নিয়ে বছরঘুরে সংস্থাটি লালখান বাজার, হাইলেভেল রোড ও বাঘঘোনা এলাকায় পরীক্ষামূলক ডিজিটাল মিটার বসিয়ে সফলতাও পায়। ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় ধরে একটি পাইলট প্রকল্পও হাতে নেয় সংস্থাটি। এই প্রকল্পের অধীনে চলতি বছরের জুনে মেহেদীবাগ-গোলপাহাড় চান্দগাঁও এলাকায় ৩ হাজার স্মার্ট মিটার বসানোর কথা। জুন গড়িয়ে আগস্ট এলেও এই কাজের কোন হদিস নেই। এখনো থমকে আছে দরপত্র মূল্যায়নে। অথচ গত ৩০ জানুয়ারি সংস্থাটি এ কাজের জন্য দরপত্র সংগ্রহ করে।

ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এসব ডিজিটাল মিটার বসানোর কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে দরপত্র মূল্যায়ন, মাঠ পরিদর্শনের জন্য কমিটি হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই ‘উপযুক্ত’ প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করবেন তারা। এরপর প্রতিষ্ঠানটির নমুনা মিটার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হবে। পরে নির্ধারিত মানের মিটার তৈরির জন্য সময় দেওয়া হবে প্রতিষ্ঠানকে। সবমিলিয়ে আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় প্রয়োজন তাদের।

জানা গেছে, ২০১৯ সালে অটোমেশনের যাওয়ার চিন্তা করেছিল ওয়াসা। সেই হিসেবে অ্যানালগ ও ডিজিটাল দুটি ডিভাইস সংযুক্ত করার পরিকল্পনা সাজানো হয়। তবে ক্যাবল কাটা পড়ার বিষয়টি মাথায় এনে বিলিং সিস্টেম পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ডিজাইল ডিভাইসের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। এরপর ২০২০ সালের শুরুতে নগরের লালখান বাজার ও হাইলেভেল রোড ও বাঘঘোনায় বসানো হয় পরীক্ষামূলক মিটার। ওই বছরের মিটার কার্যকারিতায় সফলতা পেয়ে পাইলট প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রাথমিক ব্যয় ধরে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি দরপত্র আহ্বান করে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত দরপত্র সংগ্রহ করে সংস্থাটি। সম্প্রতি দরপত্র উন্মুক্তের জন্য সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. শফিকুল বাশারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া দরপত্র মূল্যায়নে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) তাহেরা ফেরদৌস বেগমকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এছাড়াও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (টিএমপি) নুরুল আমিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে ওয়াসা। দরপত্র মূল্যায়ন, ডিজিটাল মিটার পরিদর্শন, মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমের কাজও শুরু করেছে এসব কমিটি। 

প্রাথমিকভাবে কমিটি নগরের পানির সরবরাহ মড-২ (দামপাড়া) জোনের আওতায় নগরের চান্দগাঁও, মেহেদিবাগ ও গোলপাহাড় এলাকায় ৩ হাজার মিটার রিডার মেশিন বসানোর পরিকল্পনা করেছে।  আগামী ডিসেম্বর থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় এসব মিটার বসানোর কথা রয়েছে।

এদিকে বর্তমানে ইউনিট প্রতি পানির মিটার রিডার যাচাইয়ে বাড়ি বাড়ি যেতে হয় ৪২ জন পরিদর্শককে। প্রায় ৭৮ হাজার গ্রাহকের মিটার দেখার পর বিল অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সার্ভারে যুক্ত করতে হয় তাদের। পরে শিট আকারে বিলের রশিদ সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেন তারা। টাকা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ উল্লেখ করে গ্রাহকদের মোবাইলে খুদে বার্তাও পাঠাতে হয়। 

তবে মাঠ পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়ে একমাসের বিলের ওপর আন্দাজ নির্ভর বিল ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ গ্রাহকদের। নগরের দক্ষিণ খুলশী, ফয়েজ লেক, আব্দুল হাকিম সড়ক সংলগ্ন পশ্চিম খুলশী, আকবরশাহ থানা এলাকার ফিরোজ শাহ কলোনী, কৈবাল্যধাম বিশ্ব কলোনী, দক্ষিণ পতেঙ্গাসহ বেশ কিছু এলাকার গ্রাহকরা পানি না পেয়েও মাসের পর পর মাস বিল দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। কোথাও আবার পানির চাপ খুবই কম। এসব এলাকার গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ।

এমনকি বাণিজ্যিক ভবন ও শিল্প-কারখানায় মাসে লাখ লাখ টাকার পানির বিল হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ওই সব কারখানায় ইউনিট রেট করে বিল আদায় করা হচ্ছে নামকাওয়াস্তে। কোনো কোনো কারখানায় অবৈধ লাইন আছে। অভিযানে তাদের কাছ থেকে আনুমানিক বিল আদায় করা হচ্ছে। এর কারণে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সংস্থাটি।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পানির বিল কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা নিশ্চিতসহ সময় সাশ্রয়ী হবে বলে মনে করছেন সংস্থাটিরর কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে ডিজিটাল মিটারের ফলে কেন্দ্রীয় সার্ভার থেকে বিলিং কার্যক্রমে মনিটরিং করা সম্ভব হবে। বিলের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের কাছে যেতে হবে না।  

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ইউনিট পানি পরিশোধন করতে গিয়ে সংস্থাটির খরচ পড়ে ২৭ টাকা। প্রতি লিটারে আবাসিক গ্রাহকদের দিতে হয় ১৩ টাকা। তবে খরচের সঙ্গে পানির দাম সমন্বয় করতে গিয়ে চলতি বছরে দ্বিতীয় দফায় আবাসিক পানির দাম ৬ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে আবাসিকে গ্রাহকদের ১৩ টাকার স্থলে ১৮ টাকা করে বিল পরিশোধ করতে হবে। অন্যদিকে বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ৩১ টাকা ৮২ পয়সার স্থলে ৩৭ টাকা করে দিতে হবে। বর্তমানে ওয়াসার আবাসিক সংযোগ রয়েছে ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক সংযোগ রয়েছে ৭ হাজার ৭৬৭টি। এর মধ্যে ৯৩ শতাংশ আবাসিক এবং ৭ শতাংশ বাণিজ্যিক গ্রাহক। এর মধ্যে নগরে দৈনিক ৫শ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে।

জানতে চাইলে ওয়াসার সিস্টেম এনালিস্ট মো. শফিকুল বাশার সিভয়েসকে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রাহকদের মাঝে সুপেয় পানি পৌঁছে দিতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে অনেক সময় মিটার যাচাই করে বিল আদায় করতে গিয়ে আমাদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। ইউনিট প্রতি বিল আদায় করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে সঠিক তথ্য উঠে আসে না। সার্বিক ব্যবস্থাটি অনেক পুরনো। ডিজিটাল মেশিন মিটার রিডার স্থাপনের ফলে কেন্দ্রীয়ভাবে বিল করা সম্ভব হবে। আগামী পাঁচ বছরের জন্য ব্যবহার উপযোগী এসব মিটার কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনটি এলাকায় সফলতা পেলে ক্রমান্বয়ে পুরো নগরীতে ডিজিটাল মিটার রিডার বসানো হবে। যদিও মাঝখানে করোনার কারণে কিছুদিন কাজ থমকে ছিল।

  
সিভয়েস/আরকে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়