Cvoice24.com

শিডিউলে লোডশেডিং এক ঘণ্টা, বাস্তবে ৮ ঘণ্টা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৫২, ১৪ আগস্ট ২০২২
শিডিউলে লোডশেডিং এক ঘণ্টা, বাস্তবে ৮ ঘণ্টা

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের ২৫ দিন পার হতে চললেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। ঘোষিত সূচিতে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের কথা বললেও বেশিরভাগ এলাকায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে।  চাহিদা ও সরবরাহ ঘাটতির কারণে গ্রাহকদের নিয়ম মেনে লোডশেডিং দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খোদ সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। লোডশেডিং কমিয়ে আনতে ভিন্ন ভিন্ন দিনে শিল্প অঞ্চলগুলোতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনটি কার্যকর করতে আরও কিছুদিন সময় চান তারা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন গতকাল শুক্রবার সাড়ে নয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। এক্ষেত্রে চাহিদার পুরোটা পাওয়ায় নগরের কোনো এলাকায় লোডশেডিং হয়নি বলে দাবি পিডিবির কর্মকর্তাদের। তবে  চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় গতকাল দুপুর ১২ টা থেকে বিকেলে ৩টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের মাত্রা ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে সকালেও কিছু এলাকায় টানা এক থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লোডশেডিং হয়েছে। 

নগরের হাইলেভেলে রোডের বাসিন্দা মো. নুরুল আবছারের দুই সন্তান। একজন তৃতীয় শ্রেণি ও আরেকজন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়া-আসায় তাদের পড়াশোনা ব্যহত  বলেন, বন্ধের দিন সকালে বিদ্যুৎ চলে গেছে। গরমে বাচ্চাদের পড়াশোনা করতে কষ্ট হচ্ছে। কতক্ষণ হাত পাখা দিয়ে বাতাস করা যায়। অনেক সময় শেষ রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ঠিক মতো ঘুমাতে পারি না।   

আবু আজাদ নামে এক গ্রাহক অসহনীয় গরমে অসন্তোষ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। তিনি পোস্টে লিখেছেন, ‘এখন রাত চারটা। বেহেস্তে লোডশেডিং চলতেছে টানা তিন ঘণ্টা ধরে। বাচ্চাগুলো ভ্যাপসা গরম আর মশার কামড়ে ছটফট করছে। কিছুক্ষণ পরই হয়তো আজান হবে। ময়মুরুব্বিরা ভালো করে দোয়া করে দেবেন। যাতে জাহান্নামের দরজার খোঁজটা পেয়ে যাই; তারা থাকুক ওদের বেহেস্তে।’

পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের আগ্রাবাদ অংশে রবিবার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত কোন কোন এলাকায় তিন থেকে চার ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে সূচি রাখা হয়েছে। তবে নগরের আগ্রাবাদ এলাকার বসবাস করে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমায়া জাহান সিভয়েসকে বলেন, এক ঘণ্টার কথা থাকলেও আধা ঘণ্টা পরে পরে বিদ্যুৎ চলে যায়। একবার গেলে দেড় ঘণ্টায়ও আসতে চায় না। অনেক সময় প্রয়োজনীয় কাজ না পেরে রেখে দিতে হয়। 

এর আগে গেল ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পরিকল্পনা সাজায় পিডিবি। ওই সময় লোডশেডিং এর পরিমাণ ১০০ মেগাওয়াট নির্ধারণ ধরা হয়েছিল। এর ছয় দিন পর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েবসাইটে চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের বিতরণ বিভাগের অধীন পাঁচটি সার্কেলের সূচি প্রকাশ করে। ওই সূচিতে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার নতুন পরিকল্পনা করা হয়। এরপর বিদ্যুতের যাওয়া-আসায় দ্বিতীয় বারের মতো পরিকল্পনা করতে গিয়ে হোঁচট খান পিডিবির কর্মকর্তারা। শহরের কিছু কিছু এলাকায় সাত থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের বিষয়ে অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীন সরবরাহ এলাকায় গ্রাহকদের অভিযোগের অন্ত ছিল না। সেখানে গ্রাহকদের সাত থেকে আট ঘণ্টার বিদ্যুৎ পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

সর্বশেষ আগামী রবিবার (১৪ আগস্ট) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-বাকলিয়া অংশে ছয় ঘণ্টার লোডশেডিং এর সূচি প্রকাশ করে। তবে সূচির বাইরে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের (বিতরণ) প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম। 

তিনি সিভয়েসকে বলেন, চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে আমাদের সূচি করতে হচ্ছে। কিন্তু সরবরাহ অনুযায়ী বিদ্যুতের প্রাপ্তির বিষয়টি আমাদের হাতে নেই।  জাতীয় গ্রিড থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ না পেলেই আমাদের লোডশেডিংয়ে যেতে হবে। সূচি দিয়ে লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। 

এদিকে দেশের অন্যান্য শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে গতকাল চট্টগ্রামের ষোলশহর, কালুরঘাট, মুরাদপুর, অক্সিজেন, নাসিরাবাদ, মোহরা ও হাটহাজারী এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটির বন্ধ ছিল। তবে প্রথম দিন চট্টগ্রাম তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

৮ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার জলুর দীঘিরপাড় এলাকায় শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে শনিবার দুপুর একটা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে আটবার। প্রতিবার এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছাড়াই ছিল গ্রাহকরা। এই উপজেলায় রাত ১১ টার পরে শিল্প কারখানায় চালু হয়। ফলে রাতে বিদ্যুতের ওপর চাপ বেড়ে যায়। 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর উপ-মহাব্যবস্থাপক (বোয়ালখালী জোনাল অফিস) মো. এমরান গনি সিভয়েসকে বলেন, চাহিদার স্বল্পতার কারণে এমনটা ঘটছে। সময়ে সময়ে মেগাওয়াটের বিষয়টি ওঠানামা করছে। দেখা যাচ্ছে এখন কোনো লোড নেই, কখনও আবার পাঁচ থেকে সাত মেগাওয়াট ঘাটতি রয়েছে। কখনও আবার রাত ১১ টা পর্যন্ত কোনো লোডশেডিংয়ের সূচি নেই। এরপর আবার লোডশেডিং হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে।

এর বাইরে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর অধীন সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও হাটহাজারী কিছু অংশে তিন ঘণ্টার বিদ্যুতের শিডিউল থাকলেও পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য এই বিতরণ বিভাগের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার নুর মোহাম্মদ আজম মজুমদারকে একাধিকবোর ফোন করেও পাওয়া যায়নি।  

সিভয়েস/আরকে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়