Cvoice24.com

সিআরবিতে হচ্ছে না হাসপাতাল, রেলমন্ত্রীকে দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের তাগিদ চট্টগ্রামের এমপিদের

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:২০, ১৬ আগস্ট ২০২২
সিআরবিতে হচ্ছে না হাসপাতাল, রেলমন্ত্রীকে দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের তাগিদ চট্টগ্রামের এমপিদের

চট্টগ্রামের সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প সীতাকুণ্ডের কুমিরায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়ায় রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দলীয় শীর্ষ নেতারা।

মঙ্গলবার সকালে রেলওয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চট্টগ্রামের সংসদ সদস্যদের স্বাক্ষরযুক্ত একটি চিঠি তুলে দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষাউপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সেখানে সিআরবির হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ায় সবার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়ে দ্রুত ওই উদ্যোগ বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়েছেন। এদিকে রেলওয়ে মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন ফেসবুকে সাক্ষাতের একটি ছবি পোস্ট করেছেন। 

ওই পোস্টে রেলমন্ত্রী লিখেছেন, ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক সিআরবি এলাকায় পিপিপি’র আওতায় হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি কর্তৃক সীতাকুণ্ডের কুমিরায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়ায় রেলপথ মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে  চট্টগ্রামের সকল এমপিদের স্বাক্ষরযুক্ত একটি অভিনন্দনপত্র রেল ভবনে জমা দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ,এমপি । শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, এমপি ও  ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এমপি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, চট্টগ্রামের সকল এমপির স্বাক্ষরের চিঠি নিয়ে সিআরবিতে হাসপাতালটি অন্য স্থানে নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছি। স্বাক্ষাতের সময় আমি, হাছান মাহমুদ ও নওফেল উপস্থিত ছিলেন। হাসপাতালটি সিআরবিতে না হওয়ার বিষয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। আমরা আশা করছি সেখানে (সিআরবি) হাসপাতালটি হবে না। রেলমন্ত্রী আমাদের এ বিষয়ে আশস্ত করেছেন।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আপনি জানেন প্রাচ্যের রানী হিসেবে খ্যাত সাগর, পাহাড়, নদীবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি আমাদের চট্টগ্রাম। নান্দনিক সৌন্দর্যে ঘেরা এ নগরের রূপ মাধুর্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত কেন্দ্রীয় রেলভবন তথা সিআরবি। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সিআরবি ভবনটি শুধু চট্টগ্রামেই নয়, পুরো দেশের মধ্যে স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। এখানে রয়েছে অসংখ্য রেইনট্রি। যেগুলোর কোনো কোনোটির বয়স পেরিয়ে গেছে শত বছরের বেশি। এটি ব্যস্ততম নগরী চট্টগ্রামের অক্সিজেন সরবরাহের উৎস হিসেবেও পরিচিত।

সম্প্রতি এক গবেষণায় সিআরবিতে প্রায় ২২৫টি দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। শতবর্ষী বৃক্ষরাজি, পাহাড়, টিলা ও উপত্যকায় ঘেরা বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান হিসেবে সিআরবি চট্টগ্রামের মানুষের মনে আলাদা স্থান করে নিয়েছে। এখানে বৃক্ষরাজির শীতল ছায়াতলে বিশেষ করে অনিন্দ্য সুন্দর শিরীষতলায় আয়োজিত হয় বাংলা নববর্ষ, বসন্ত উৎসব, রবীন্দ্র নজরুল জয়ন্তীসহ বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসমূহ।  

মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদ হিসেবে আত্মোৎসর্গ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ। তিনিসহ ১১ জনের সমাধি রয়েছে এ সিআরবিতে। অপূর্ব নিসর্গ, শহীদদের সমাধিস্থল, মুক্তবায়ুতে নিরিবিলি পরিবেশে সকাল-বিকাল পরিবার পরিজন নিয়ে হাঁটাচলার এবং শারীরিক কসরতের অন্যতম নিরাপদ স্থান হিসেবে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে সিআরবি এখন অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। সভ্যতার অগ্রগতি ও মানুষের লোভের আঘাতে প্রকৃতি আজ তার রূপ ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে প্রণীত ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) এটিকে কালচারাল হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। ৮টি নির্দেশনার উল্লেখ রয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। উল্লেখযোগ্য নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সিআরবির কোনো অংশ ব্যবহার করা যাবে না এবং এখানে কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না। শুধু পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পাখর অভয়ারণ্য, জাদুঘর, প্রজাপ্রতি উদ্যান প্রতিষ্ঠা করা যাবে। সব কিছু মিলিয়ে সিআরবি এখন চট্টগ্রামের সব মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার জায়গায় পরিণত হয়েছে।  

এখানে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগটি সংশ্লিষ্ট গেজেটের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। বিষয়টিতে  চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ ভীষণভাবে কষ্ট পেয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতাল স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়ায় চট্টগ্রামবাসী আশ্বান্বিত হয়েছেনম স্বতির নিশ্বাস ফেলেছেন। চট্টগ্রামে এক সময় পাহাড়, দীঘি ও পুকুর ছিল। ছিল শাল রেইনট্রি ইত্যাদি বৃক্ষ আচ্ছাদিত রাস্তা বা মহাবর্ত্ম। ছিল বাটালি হিল, কাচারি পাহাড়। পাকিস্তান আমলে বাটালি হিল ধ্বংস করা হয়েছে। কাচারি হিলের উপরও হামলা করেছিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। এ কাচারী পাহার কেটে থৈরি করা হয় নিউ মার্কেট, জেনারেল পোস্ট অফিস ও স্টেট ব্যাংক। এভাবেই চট্টগ্রামে নিসর্গ, সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে কালক্রমে। এখন অবশিষ্ট রয়েছে শুরুমাত্র সিআরবি।

পরিবেশ অধিদপ্তর এখানে হাসপাতাল নির্মাণ না করা ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে মতামত প্রদান করেছেন। প্রদত্ত মতামতে তারা উল্লেখ করেছন মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক ঘটনার সাথে সিআরবি এলাকাটি জড়িয়ে রয়েছে। মহানগরী সাংস্কৃতিক প্রাণ কেন্দ্র এটি। পরিবেশগত দিক ছাড়াও ইহিতাস-এতিহ্য ও সাংস্কৃতিক বিবেচনায় সিআরবি এলাকাটি প্রস্তাবিত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও নার্সি ইনস্টিটিউটের উপযুক্ত নয় মর্মে প্রতীয়মান।

এছাড়া এলাকাটিতে এসব প্রতিষ্ঠান নির্মিত হলে এসব প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে  আরও বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি হবে। যা সংশ্লিষ্ট এলাকাটির পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনার জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম নাগরিক সামাজিক ব্যানারে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প অন্যত্র স্থানান্তরের দাবিতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানের পাশপাশি ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবর একটি আবেদন প্রেরণ করেন। এছাড়া ওই বছরের ৬ আগস্ট তারিখে তারা আপনার (রেলমন্ত্রী) বরাবর আবেদন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বেশ কিছু নিবন্ধ ও মতামতও প্রকাশিত হয়েছে।

চিঠিতে চট্টগ্রামের সকল জনসাধারণের পক্ষ হতে মন্ত্রী এমপিরা সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ স্থগিত করে রেলওয়ের অন্যত্র জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান রেলমন্ত্রীকে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় রেলওয়ে হাসপাতাল ও সংলগ্ন খালি জমি, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি স্টাফ কোয়ার্টারের ছয় একর জমিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) প্রকল্পের চুক্তি সই ও অনুমোদন হয়। ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেড নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৬ একর জমিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ ও ৫০ আসনের নার্সিং ইনস্টিটিউট করবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ১২ বছর। ৫০ বছর পর হাসপাতালটি রেলওয়েকে হস্তান্তর করা হবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়। তবে হাসপাতালের নির্মাণের খবর পেয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন একজোট হয়ে আন্দোলনে নামে।  

সিভয়েস/আরকে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়