Cvoice24.com

চট্টগ্রাম নগরে রিকশায় কবে বসছে বারকোড?

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৪০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
চট্টগ্রাম নগরে রিকশায় কবে বসছে বারকোড?

মানব চালিত তিন চাকার বাহন রিকশা। বাংলাদেশে যে পরিমাণ রিকশা আছে তা অন্য কোনো দেশে নেই। গবেষণা বলছে, চট্টগ্রামে ১৯১৯ সালের দিকে মিয়ানমারের রেঙ্গুন থেকেই প্রথম রিকশা আসে। এরপর ত্রিশের দশকে ঢাকার রাস্তায় রিকশা নামে ভারতের কলকাতা থেকে। চট্টগ্রাম শহরে কি পরিমাণ রিকশা রয়েছে তার কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রায় লাখ খানেক রিকশাকে বৈধতা দেয় সিটি করপোরেশন। যদিও প্রায় তিন লাখের মতো ‘অবৈধ’ রিকশা চলছে নগরজুড়ে। আর এসব রিকশায় যানজট বাড়ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। 

এমন ধারণা থেকে গতবছর (২০২১ সালে) অবৈধ রিকশার দৌরাত্ম্য কমাতে এবং যানজট নিরসনে রিকশায় বারকোড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। তবে বছরঘুরে এলেও এখনো বারকোড বসেনি কোন রিকশায়। চসিক বলছে,  চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে বারকোড সংবলিত রিকশার লাইসেন্স দিতে পারবে সংস্থাটি। 

জানা গেছে, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন মেয়র থাকাকালীন বারকোড বসানোর প্রস্তাব দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি)। নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি’র বিনিময়ে চসিক থেকে বারকোড কিনে নেবেন রিকশা মালিকরা। সেসময় মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়, যে রিকশার বারকোড থাকবে না সেসব রিকশা জব্দ করে ধ্বংস করা হবে। নগরে শুধুমাত্র বৈধ রিকশা চলাচল করবে। তাতে করে নগরের অবৈধ রিকশার দৌরাত্ম্য কমবে এবং যানজট সহনীয় পর্যায়ে আসবে। পররর্তীতে করোনার কারণে থমকে যায় এ উদ্যোগ। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে যানজট কমাতে সভায় বসে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ও চসিক। সেই সভায় রিকশার বারকোড বসানোর বিষয়ে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজও শুরু করে সংস্থাটি (চসিক)। সেসময় সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ছিলেন শ্যামল কুমার নাথ। তিনি জানিয়েছিলেন, চট্টগ্রামে প্রায় ৩ লাখ রিকশার মধ্যে ২ লাখ ৩০ হাজার রিকশাই অবৈধ।  

চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছর কেমিস্ট সিজিডি কনসোর্টিয়াম নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে বারকোড বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদেরকে ১ লাখ ৬ হাজার রিকশার বারকোড তৈরির জন্য ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত চসিক থেকে দেওয়া ৫০ হাজার রিকশার বারকোডের ডাটা এন্ট্রির কাজ শেষ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বারকোড নেওয়ার জন্য চসিক থেকে ফি নির্ধারিত না হওয়ায় কাজ শেষ করতে পারেনি কেমিস্ট সিজিডি কনসোর্টিয়াম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিবন্ধন ফি’র বিষয়টা অর্থ স্ট্যান্ডিং কমিটির মাধ্যমে চূড়ান্ত হলেই চসিককে কাজ বুঝিয়ে দিবে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে চসিক মেয়র ভারতে অবস্থান করায় কাজটি স্থগিত রয়েছে। তবে অক্টোবরের ১০ তারিখে এ নিয়ে সভা হবে বলে জানিয়েছেন কেমিস্ট সিজিডি কনসোর্টিয়ামের সহ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান। 

তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের কাজটা প্রায় রেডি। ডাটা এন্ট্রির কাজও শেষ। এখন বারকোডের জন্য কত টাকা করে পেমেন্ট নিবে তার সিদ্ধান্ত এখনো দিতে পারেনি চসিক। সামনের বোর্ড মিটিংয়ে এ নিয়ে বসবে। তখনই মূলত সিদ্ধান্ত আসবে। এরপরই মূল কাজ শেষে জমা দেওয়া হবে।’

যেভাবে অবৈধ রিকশা শনাক্ত করবে পুলিশ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে (চসিক) থেকে দেওয়া হবে নগরে চলাচলকারী বৈধ রিকশার বারকোড। নিদির্ষ্ট অ্যাপসের মাধ্যমে বারকোড স্ক্যান করে শনাক্ত করা হবে বৈধ রিকশা। যে রিকশার বারকোড থাকবে না সে রিকশা উচ্ছেদ করা হবে। এ উচ্ছেদ কার্যক্রম যৌথভাবে পরিচালনা করবে চসিক ও সিএমপি। 

এ বিষয়ে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা আ স ম মাহতাব উদ্দিনকে ফোনে না পেয়ে কথা হয় সভায় উপস্থিত থাকা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পশ্চিম জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ট্রাফিক তারেক আহমেদের সঙ্গে। 

তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘যানজটের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে রিকশা। যেহেতু রিকশা যানবাহনের মধ্যে পড়ে না তাই এটা নিয়ে আমরা কোনো কাজ করি না। আবার কোনটি অবৈধ রিকশা, তা সিটি করপোরেশন শনাক্ত করতে পারবে। আমার মতে চট্টগ্রামে যতগুলো বৈধ রিকশা আছে ততটাই থাকা উচিত। নতুবা শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। চসিক যদি এ উদ্যোগ (বারকোড দেওয়া) হাতে নেয় তবে আমাদের সিএমপির তরফ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হবে। সিটি করপোরেশন আমাদের আলাদা জায়গা করে দিলে অবৈধ রিকশা ধরার অভিযান চালিয়ে জব্দ করে রাখতে পারব।’

তবে যানজট নিরসনে চসিকের এ উদ্যোগ কতটা সফল হবে তাই নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘অবৈধ রিকশার কোনো সঠিক হিসাব নেই। যখন অবৈধ রিকশা উচ্ছেদ করা হবে দেখা যাবে রিকশা মালিক সমিতি বা তাদের কোনো সংগঠন এসে আন্দোলন করতে পারে। তার বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়েছে যখন বারেক বিল্ডিং থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত রিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়। তখন রিকশা শ্রমিক মালিকদের সঙ্গে আমাদের একাধিক বৈঠক হয়। এরপরই ওই সিদ্ধান্ত আসে।’

একই বিষয়ে সিটি মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম সিভয়েসকে বলেন, ‘এটার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শুধু নিবন্ধন ফি’র বিষয়টা অর্থ স্ট্যান্ডিং কমিটির মাধ্যমে চূড়ান্ত হলে আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা বারকোড সংবলিত রিকশার লাইসেন্স দিতে পারবো।’

এদিকে, করোনার আগে নগরের বারেক বিল্ডিং থেকে দেওয়ান হাট পর্যন্ত প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু করোনার পর নানান কারণে সেই কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। বর্তমানে চলমান ফ্লাইওভারের কাজের কারণে তা বন্ধ আছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়