Cvoice24.com

ওয়াসার কোপ পড়ছে পিসি রোডে

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ৭ নভেম্বর ২০২২
ওয়াসার কোপ পড়ছে পিসি রোডে

প্রায় পাঁচ বছর পর গত ফেব্রুয়ারিতে সংস্কার হওয়া সড়কটিতে। ওয়াসার কোপের ফলে আবারও বিষ ফোঁড়ায় পরিণত হওয়ার শঙ্কা।

চট্টগ্রামের লাইফলাইন খ্যাত সড়কটির নাম ‘পোর্ট কানেক্টিং সড়ক’। বছর খানেক আগেও ছিলো এবড়ো-থেবড়ো। সঙ্গে ধুলোবালি যুক্ত হয়ে তৈরি হয়েছিল নরক অবস্থা। এ রোডে যাতায়াতকারী হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগের কারণে নরক যন্ত্রণায় ভুগেছে বছরের পর বছর। প্রায় পাঁচ বছর পর গত ফেব্রুয়ারিতে ওই নরক যন্ত্রণা থেকে উদ্ধার হলেও সড়কটিতে এবার খড়গ নামছে ওয়াসার। স্যুয়ারেজর প্রকল্পের পাইপ লাইন বসাতে চলতি মাসেই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হবে সড়কটিতে। ওয়াসার কোপের ফলে আবারও বিষ ফোঁড়ায় পরিণত হতে পারে সড়কটি। 

জানা গেছে, নগরের মধ্য হালিশহরের চৌচালা এলাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য ১৯৬২-৬৩ সালে ১৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল ওয়াসা। নানা জটিলতা কাটিয়ে সেই জমিতে ২০২১ সালে হালিশহরের ১৬৩ দশমিক ৮৫৫ একর জমিতে কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। 

ওয়াসার তথ্যমতে, ছয়টি জোনে ভাগ হয়ে চলবে পুরো প্রকল্পের কাজ। প্রথমে হালিশহর থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত পাইপ স্থাপন করা হবে। পরের ধাপে পাইপ স্থাপন করা হবে পূর্ব-পশ্চিম মাদারবাড়ি থেকে নিউ মার্কেট মোড় পর্যন্ত। এরপর ক্রমান্বয়ে লালখান বাজার থেকে কাজ শুরু পাঠানটুলী মোড় পর্যন্ত হয়ে পাইপ বসানো হবে। ডিসেম্বর নাগাদ শুরু হয়ে ধারাবাহিকভাবে এ কাজ ২০২৬ সাল পর্যন্ত চলবে।

নগরের সড়ক নিয়ে ওয়াসা, সিডিএ বা টিঅ্যান্ডটির খোঁড়াখুঁড়ির কারণে দুর্ভোগ রাস্তা খোঁড়ার কথা আসলেই আতঙ্ক ভর করে নগরবাসীর মনে। তবে ওয়াসা-চসিক দুই সংস্থাই বলছে, নগরবাসীর ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে ৪ কৌশলে পাইপ স্থাপনের কাজ করা হবে। 

ওয়াসা বলছে, রাস্তা পুরোপুরি না কেটে রাস্তা বোয়িং করে ভ্যাকিউমের মাধ্যমে ভেতর দিয়ে পাইপ টেনে নেওয়ার চেষ্টা থাকবে। তবে তা নির্ভর করছে মাটির ধরনের উপর। অন্যদিকে, খোঁড়াখুঁড়ির দুর্ভোগ লাঘবে পাইপ বসানোর পরপর চসিককে রাস্তা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সংস্কার কাজে চসিক সময় নিলে নিজস্ব ঠিকাদার দিয়েই কাজ সারিয়ে নেবে ওয়াসা।  

চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও স্যুয়ারেজের প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘বিগত দিনগুলোতে পানির পাইপ লাইন বসানোর সময় নগরবাসী অনেক অসুবিধায় ভুগেছে। আগামীতে এই সমস্যাগুলোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাথে সমন্বয়ের জন্য ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চসিককে ২৭ কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

নগরবাসীর ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে ৪ কৌশলে পাইপ স্থাপনের কাজ করা হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রথম চেষ্টা থাকবে রাস্তাকে পুরোপুরি না কেটে রাস্তা বোয়িং করে ভ্যাকিউমের মাধ্যমে ভিতর দিয়ে পাইপ টেনে নিয়ে যাওয়া। তবে বিষয়টি রাস্তার মাটির ধরনের উপর নির্ভর করছে। অন্যদিকে, রাস্তায় পাইপ বসানোর পরপর চসিককে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। চসিক কাজে সময় নিলে আমাদের ঠিকদারদের দিয়ে সড়ক সংস্কারে কাজ হবে। চসিক যদি সদ্য কোনো রাস্তা সংস্কার করিয়ে থাকে তাহলে সেই রাস্তায় তিন মাস ওয়াসা হাত দেবেনা। দুই প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটা নির্দিষ্ট সময় গ্যাপ দিয়ে কাজ শুরু করবে।

একই কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ওয়াসার সাথে রাস্তায় পাইপ স্থাপন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই সংস্থার সমন্বয় জনভোগান্তি কমিয়ে পাইপ বসানো হবে। এছাড়াও সদ্য তৈরি করা রাস্তায় এখন ওয়াসা কাজ করতে পারবে না। তিনমাসের একটা গ্যাপ দিতে হবে। তাছাড়া ওয়াসা রাস্তায় কোদাল বসানোর আগে সম্পূর্ণ প্রোগ্রাম আমাদের কাছে থাকবে।

উল্লেখ্য, নগরের হালিশহর রিং রোড এলাকায় ১৬৩ একর জমিতে ক্যাচমেন্টে-১ এর পরিশোধনাগার এরিয়া হিসেবে ধরা হয়েছে। মালয়েশিয়ান কারিগরি প্রতিষ্ঠান জেবিও এরিনকো ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় মাঠ পর্যায়ের কার্যাদেশ পায়। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে কাগজে-কলমে স্যুয়ারেজের কাজ শুরুর কথা থাকলেও সেই বছরের নভেম্বরে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। অনুমোদনের সময় ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ওয়াসা ২০১৯ সালের নভেম্বরে কারিগরি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে আইনি জটিলতা ও করোনা মহামারির কারণে দুই বছরে বেশি সময় ধরে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়। চলতি বছরে ছয়টি জোনে ভাগ হয়ে শুরু করে সংস্থাটি।

এই প্রকল্প অনুযায়ী নগরের বর্জ্যসমূহ দুইটি ধাপে সংগ্রহ করা হবে। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের আওতায় রান্নাঘর, গোসলের পানি এবং টয়লেটের বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের বাসায় স্যুয়ারেজের পাইপলাইন বসানো হবে। ওই পাইপলাইনের মাধ্যমে গৃহস্থালি বর্জ্যসমূহ সরাসরি ক্যাচমেন্ট এরিয়ার পরিশোধনাগারে চলে যাবে। সেখানে এসব পানি পরিশোধিত হয়ে নদী ও সাগরে গিয়ে পড়বে। স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনার কাজ অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ তাই ২০২৬ সালে শেষ হবে বলে আশা করছে ওয়াসা। 

সিভয়েস-ডিসি
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়