Cvoice24.com

সরকারি প্রতিষ্ঠানের কব্জাবন্দি গণপূর্তের ৬ বাড়ি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ১৮ নভেম্বর ২০২২
সরকারি প্রতিষ্ঠানের কব্জাবন্দি গণপূর্তের ৬ বাড়ি

বামে অবৈধ দখলদারদের দখলে পাঁচলাইশের ৩২ নম্বর বাড়ি ও ডানে সার্সন রোডের ৩ নম্বর পরিত্যক্ত বাড়িটি।

বহু আগে থেকেই পরিত্যক্ত চট্টগ্রামের ওআর নিজাম রোডের ৯৩৮ নম্বর বাড়িটি। তবে বাড়িটি দখলে নিয়ে রেখেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেখানে থাকছেন চমেক কলেজের হোস্টেল ব্যবস্থাপনার কর্মকর্তারা। একইভাবে সার্সন রোডের ৩ নম্বর পরিত্যক্ত বাড়িটি গণপূর্তের বিরুদ্ধে রিট করে দখলে রেখেছে একটি কোম্পানি। আবার পাঁচলাইশের ৩২ নম্বর বাড়িটিও সরকারি একটি বাহিনীর অফিস। এরকম আরও তিনটি বাড়ি পরিত্যক্ত ঘোষিত হলেও থেকে গেছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। প্রায় ছয় বছর আগে পরিত্যক্ত এসব বাড়ি ভেঙে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমেটরি নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি বাড়ি সরকারি লোকজন দখল করে রাখায় থমকে গেছে গণপূর্তের ৪৭৭ কোটি টাকার এই প্রকল্প। চিঠি চালাচালিতেই আটকে আছে বাড়ি উদ্ধারের কাজ।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দফায় দফায় উদ্যোগ নিয়েও বাড়িগুলো খালি করতে পারে নি কর্তৃপক্ষ। 

জানা গেছে, ২০১৭ সালে ৪৭৬ কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা (প্রায় ৪৭৭ কোটি) ব্যয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, কাতালগঞ্জ, ওআর নিজাম রোড, জাকির হোসেন রোড এবং সার্সন রোডে গণপূর্ত বিভাগের ১৫টি পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমেটরি নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় গণপূর্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ। এসব পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর ১৪টিতে হবে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ৫৭৬টি আবাসিক ফ্ল্যাট ও একটি বাড়িতে হবে ৬৪টি ডরমেটরি। এ প্রকল্পের আওতায় ১৫শ’ বর্গফুটের ৪১৪টি, ও ১২৫০ বর্গফুটের ১৬২টি ফ্ল্যাট এবং ২৫০ বর্গফুটের ৬৪টি ডরমেটরি নির্মাণ করা হবে। যদিও গত বছরের (২০২১ সাল) জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। পরবর্তীতে আরেক দফা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। 

১৫টি পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে নয়টিতে প্রকল্পের কাজ চলমান। সেগুলো হচ্ছে— পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ১৫, ৫২, ৬৬, ৮৪, ৯৫, ১১৪, ১১৫, ১২৭ নম্বর এবং কাতালগঞ্জের ৩৮ নম্বর বাড়ি। এসব বাড়ির কাজ শেষ পর্যায়ে বলেও জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। অবৈধ দখলদারদের দখলে থাকায় বাকি ছয় বাড়ির একটিতেও কাজ শুরু করতে পারে নি সংস্থাটি।

এ ছয় বাড়ির একটি ওআর নিজাম রোডের ৯৩৮ নম্বর বাড়ি, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ৩২, ৪৯ নম্বর বাড়ি, নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকার ২২/(বি)১ নম্বর বাড়ি, জাকির হোসেন রোডের ১০৩৩ নম্বর এবং সার্সন রোডের ৩ নম্বর বাড়ি। তারমধ্যে পাঁচলাইশের ৪৯ নম্বর বাড়ি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আঞ্চলিক অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ২২/বি-১ বাড়ির দখলদারকে উচ্ছেদের জন্য ২০১৯ সালের ৮ মে তারিখ নির্ধারিত হলেও পুলিশ ফোর্স না পাওয়ার অজুহাতে দখলে নিতে পারেনি গণপূর্ত বিভাগ। এরপর এখন পর্যন্ত এসব বাড়ি উদ্ধারে আর কোনো অভিযান চালাতে দেখা যায়নি গণপূর্ত বিভাগকে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ওআর নিজাম রোডের পরিত্যক্ত ওই বাড়িটিতে একসময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক এক অধ্যক্ষ থাকতেন। এখন কলেজের স্টাফদের দখলে রয়েছে। গত বছরেও কয়েক দফা খালি করার পদক্ষেপ নিলেও শেষ পর্যন্ত আমরা খালি করতে পারিনি। আবার পাঁচলাইশের ওই বাড়ি সরকারি একটি বাহিনীর দখলে। সেটি খালি করার জন্য গত কয়েকবছর ধরে কেবল চিঠি চালাচালিই হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। চলতি মেয়াদ শেষ হলেও মনে হয় না প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ হবে।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের দখলে থাকা ওআর নিজাম রোডের ৯৩৮ নম্বর বাড়ির বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শাহানা আকতার সিভয়েসকে বলেন, ‘এটা আমাদের কলেজ এরিয়ার মধ্যে। আমাদেরই সম্পত্তি। এমনকি মন্ত্রণালয়েরও অর্ডার আছে। পরিত্যক্ত বলে সেখানে আমাদের ছেলেদের হোস্টেল ম্যানেজমেন্টের কয়েকজন স্টাফ থাকেন।’

দখলে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের এরিয়ার মধ্যে আছে। গণপূর্তকেও বলা হয়েছে যে তারা কাজ করলেও এটা আমাদের দিয়ে দিতে হবে। এমনকি এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে।’

চট্টগ্রাম গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘পরিত্যক্ত এসব বাড়িগুলোতে কিছু সরকারি সংস্থার কাছে আবার কিছু অবৈধ দখলদারদের কাছে। যে কারণে সবগুলো বাড়ি এখনো খালি করা হয়নি। যেহেতু সব বাড়ি খালি হয়নি তাই আমাদের প্রকল্পের কাজও শেষ হয়নি। তবে যে নয়টি বাড়ির কাজ করা হয়েছে সেগুলোর কাজও শেষ পর্যায়ে আছে। অগ্রগতি বলতে এইটুকুই। আমি দায়িত্ব নিয়েছি প্রায় ছয় থেকে সাত মাস হচ্ছে।’

দখলে থাকা ছয় বাড়ি উদ্ধার কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তো প্রতিনিয়তই চিঠি দিচ্ছি। কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তেমন একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আর এ কারণেই কাজও মাঝপথে আটকে আছে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়