Cvoice24.com

মিটারের ‘ভূত’ তাড়াতে ওয়াসার নতুন টোটকা

দেবাশীষ চক্রবর্তী

প্রকাশিত: ১৭:২৮, ৭ ডিসেম্বর ২০২২
মিটারের ‘ভূত’ তাড়াতে ওয়াসার নতুন টোটকা

‘ভূতুড়ে’ বিল নিয়ে বিদ্যুৎ, ওয়াসার সঙ্গে গ্রাহকদের তিক্ততা দীর্ঘদিনের। এবার গ্রাহকদের সেই তিক্ততা থেকে রেহাই দিতে নতুন পন্থা বের করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এবার গ্রাহকেরা নিজেই বিল তৈরি করতে পারবেন— এমন উদ্যোগের পথে হাঁটছে সংস্থাটি।

ওয়াসা বলছে, গ্রাহক নিজস্ব মিটারের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের (হোয়াটস অ্যাপ, ইমু, অথবা ই-মেইল) সহায়তায় রাজস্ব কর্মকর্তার কাছে পাঠালেই তৈরি হয়ে যাবে বিল। পরে গ্রাহকের মোবাইলে পাঠানোর পর ব্যাংক, বিকাশ, নগদ অথবা রকেটের মাধ্যমে পরিশোধ করবেন। নতুন এ নিয়মটি চলতি মাসেই প্রাথমিকভাবে নগরের হালিশহরের  বি-ব্লক এলাকায় প্রয়োগ করে দেখছে ওয়াসা। এমন উদ্যোগে সিস্টেম লস, ভূতুড়ে বিল, গড়বিল থেকে রেহাই পাবে বলে মনে করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘ভূতুড়ে বিল’, ‘গড়বিল’ এসবের কারণে গ্রাহকের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক সেবা সংস্থাটির। রিডিংম্যান থাকার পরেও এমন অভিজ্ঞতা মানতে নারাজ কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে বিল পরিশোধ প্রক্রিয়ায় আধুনিকায়নও প্রয়োজন। সব পরিস্থিতি বিবেচনায় গ্রাহকের বিল গ্রাহককেই বানানোর সুযোগ দিতে চায় সংস্থাটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাজস্ব কর্মকর্তার কাছে মিটার রিডিং পাঠাবেন। সেই মিটার রিডিং অনুযায়ী তৈরি বিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেই যাবে গ্রাহকের কাছে। পরে গ্রাহক মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে বিল পরিশোধ করবেন। গত অক্টোবরে মাসে বিলিং পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয় ওয়াসার মাসিক সভায়। এরপর প্রাথমিকভাবে এ কার্যক্রম শুরু করতে নির্ধারিত এলাকায় চালানো হয়েছে ক্যাম্পেইন। ছাপানো হয়েছে দুই হাজারের অধিক পোস্টার। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জুমায় জুমায় হাজির হয়ে উদ্যোগটির ব্যাপারে জানাচ্ছেন।

তবে এমন উদ্যোগ কতটুকু সফল হবে সেই প্রশ্নও রয়েছে খোদ ওয়াসার কর্মকর্তাদের মনে। নাম না প্রকাশের শর্তে ওয়াসার এক কর্মকর্তা সিভয়েসকে বলেন, ‘দিনকে-দিন অফিস ব্যবস্থায় আধুনিকীকরন আসছে। তবে এই ‘নিজের বিল নিজেই করুন’ ব্যবস্থায় সরাসরি স্মার্ট মোবাইলের সাথে যোগসূত্র আছে। কিন্তু কথা হল সবার কাছে কি স্মার্ট মোবাইলের আছে? সাধারণত গ্রাহকদের ওয়াসার মাসিক বিল দেখে বাড়ির দারওয়ান বা কেয়ারটেকার। সেক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে; তাঁরা ছবি তুলে ওয়াসার দেওয়া নাম্বারে ছবি তুলে পাঠাতে পারবে?’

চট্টগ্রাম ওয়াসার রাজস্ব কর্মকর্তা এরফান সাজ্জাদ সিভয়েসকে বলেন, ‘চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটস অ্যাপে গ্রাহকদের পাঠানো ছবি দেখে মাসিক বিল তৈরি করা হচ্ছে। বিল তৈরি হবার পর সেই ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হবে গ্রাহকের হোয়াটস অ্যাপ নাম্বারে। পরবর্তীতে মাসিক বিল চট্টগ্রাম ওয়াসার তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিকাশ, নগদ অথবা রকেটের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবে। এখনও পর্যন্ত ৭৫ জন গ্রাহক তাদের মিটারের ছবি পাঠিয়েছেন। গত মাসে হালিশহর এলাকা ঘুরে গ্রাহকদের মিটারের উপর তাদের কোড নাম্বার লিখে দেওয়া হয়েছে। যাতে কোড নাম্বার অনুযায়ী গ্রাহকের পরিচয় পাওয়া যায়।’ 

মাসিক বিলের আধুনিকীকরণ নিয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা অনেক সময় অভিযোগ পাই মিটার রিডার গ্রাহকের বাসায় না গিয়ে মন মতো টাকার অংক বসিয়ে দেয়। বিশেষত এই সমস্যা নিরসনের জন্য বিলিং পদ্ধতির পরিবর্তন করা হচ্ছে। তবে আমরা আগামী এক বছর গ্রাহকের তোলা ছবি দিয়ে বিলিং পদ্ধতি সার্ভেইল্যান্স (জরিপ) করবো। আগামী এক বছর পর আমরা চেষ্টা করবো গ্রাহকদের কাছে এই আধুনিকীকরণ ব্যবস্থাটি সহজলভ্য করার। তবে এই সিস্টেমে অভ্যস্ত না হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ওয়াসার সিস্টেম লস শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে চাই।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এ এস এম নাজের হোসেন সিভয়েসকে বলেন, ‘ওয়াসা যদি হোয়াটস অ্যাপ, ইমু, অথবা ই-মেইলে বিল পরিশোধে নতুন পদ্ধতি চালু করে এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক হবে বলে আমরা মনে করি। কারণ এতদিন মিটার রিডাররা গ্রাহকের বাসায় না গিয়ে মন মতো টাকার অংক বসিয়ে বিল তৈরি করতো। গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হতেন। কিন্তু বিল পরিশোধে নতুন নিয়ম চালু হলে গ্রাহকেরও অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। তবে হালিশহর এলাকায় নতুন পদ্ধতি যাচাই শেষে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ফলাফল দেখে ইতিবাচক মনে করলে যেন এটা বাস্তবায়ন করে- এটা নিশ্চিত করা দরকার।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়