Cvoice24.com

নলকূপে পানি তুলতে টাকা নিবেই ওয়াসা, না দিলে জরিমানা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৩২, ৫ জানুয়ারি ২০২৩
নলকূপে পানি তুলতে টাকা নিবেই ওয়াসা, না দিলে জরিমানা

আগে নগরের ভবন মালিকদের গভীর নলকূপ বসানোর জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে অনুমোদন নিতে হতো। আর প্রতি বছরে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে সেই লাইসেন্স নবায়ন করলেই ফুরিয়ে যেতো কাজ। কিন্তু এখন থেকে শুধু লাইসেন্স নবায়ন করেই গা ঝেড়ে ফেলতে পারবেন না ভবন মালিকরা। এবার নলকূপ থেকে পানি তুললেই গুনতে হবে বাড়তি টাকা। সেই টাকা পরিমাপের জন্য প্রতিটা নলকূপে বসানো হবে মিটারও। আর তাতে বেজায় নাখোশ নগরবাসী। ওয়াসার পানির গুনগত মান নিয়েই যেখানে প্রশ্ন— সেখানে আবার বাড়তি টাকা যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। যদিও ওয়াসার দাবি— রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করলে টাকা দিতেই হবে।

বাড়তি ফি নিয়ে নগরবাসীর প্রশ্ন— ‘মাটির নিচ থেকে পানি তুলতেও কেন তাদের টাকা দিতে হবে। এ পানির মালিকও কি ওয়াসা?’ 

এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ সিভয়েসকে বলেছেন, ‘পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬ এর ২৪ এর উপ–ধারা ২ অনুযায়ী প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চট্টগ্রাম ওয়াসা পানি তুলতে বাড়তি মূল্য নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া গ্রাহক বাড়ি বানাতে কোটি টাকা খরচ করতে পারলে পানির জন্য লাখ টাকা খরচ করতে এত উদাসীনতা কেন? তাছাড়া পানি একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। রাষ্ট্রের বিধি অনুসারে মাটির নিচের যে কোন সম্পদ ব্যবহার করতে গেলে অনুমতি ও ব্যবহারের সমান টাকা সরকারকে দিতে হবে। আমরা আগামীতে অভিযানে শুরু করবো। কেউ নলকূপ বসিয়ে ওয়াসার লাইসেন্স না করে থাকলে জরিমানা করা হবে। এরপরও গ্রাহক সচেতন না হলে পাম্প খুলে নিয়ে আসা হবে।’

এদিকে ক্রমবর্ধমান হারে গত দুই বছরে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় কমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। চট্টগ্রাম ওয়াসা পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের পরও শহরের অর্ধেকের বেশি মানুষ গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করছেন। চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জরিপ অনুসারে, হালিশহর এলাকায় ২০২১ সালে পানির স্তর ছিল ১৭০ ফিট। সেখানে ২০২২ সালে পানির স্তর ১০০ ফিট নেমে জায়গা করে নিয়েছে ২৭০ ফিট মাটির নিচে। অন্যদিকে কোতোয়ালী, নিউমার্কেট ও পাথরঘাটায় গত দুই বছরে পানির স্তর নেমেছে ২২০ ফিট থেকে ৩৮০ ফিট নিচে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে ভূগর্ভস্থ পানির অভাব দেখা দিতে পারে বন্দর নগর চট্টগ্রামে। 

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তররের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস সিভয়েসকে বলেন, ‘গত ২০২১ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত চট্টগ্রামে পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর জরিপ করতে গেলে দেখা যায় একই স্তরের অনুমোদনের অতিরিক্ত দুইশত বেশি নলকূপ বসানো হয়েছে। এখন একটা লেয়ারে এতো মানুষ পানি উঠাতে থাকলে পানি কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।’     

ওয়াসা জানিয়েছে— চট্টগ্রামে গভীর লাইসেন্স প্রাপ্ত নলকূপের সংখ্যা ৪ হাজার ৩শ’। তবে গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৭৪২টি নলকূপ। যা থেকে লাইসেন্স নবায়ন বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার। অন্যদিকে বাকি অর্ধেক নলকূপ অবৈধ রয়ে যাওয়ায় বিশাল অংকের রাজস্বহারা হচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।

মূলত এসকল অনিয়ম রোধ করতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানায় চট্টগ্রাম ওয়াসা।

তাই নলকূপ থেকে পানি তুলতে যে ফি নির্ধারণ করা হচ্ছে তার যৌক্তিকতা দেখিয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ সিভয়েসকে বলেন, ‘এখানে দুইটি বিষয় আছে; প্রথমত ওয়াসার পানির পরিমাণ নিয়ে সমস্যা নাই। চাহিদা অনুপাতে পানি পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। পানির দৈনিক উৎপাদন ৪৫ থেকে ৫০ কোটি লিটার। দ্বিতীয়ত বর্তমানে টিউবওয়েলের কারণে পানির বিলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বেশিরভাগ গ্রাহকই পানি বেশি ব্যবহার করে কম দেখানোর চেষ্টা করছে। মিটার পরিদর্শক মিটার অনুসারে মাসিক বিল করলেও গ্রাহক বলে আমরা আমাদের পাম্পের পানি ব্যবহার করি, ওয়াসার পানি আমাদের দরকার হয় না। কিন্তু গ্রাহক প্রায় সময় মিটার খুলে ওয়াসার পানি ব্যবহার  করছে। ফলে গ্রাহক ওয়াসাকে বিতর্কিত করে দেয়। তাছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার নিয়ে এখন থেকেই লাগাম টানতে হবে। না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভূগর্ভস্থ পানির অভাবে ভুগবে।’

তবে ওয়াসার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নাখোশ নগরবাসী। নিউমার্কেট এলাকার বিসমিল্লাহ বিল্ডিংয়ের জমিদার সাফায়েত খান সিভয়েসকে বলেন, ‘নতুন ভবন করার পর ৬০ হাজার টাকায় ওয়াসার পানির লাইন নিয়েছিলাম। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই ওয়াসার পানির মান ভালো থাকতো না। পরে ৪ লাখ টাকা খরচ করে ডিপ টিউবওয়েল বসাই। এ বছর লাইসেন্সের জন্য ৫৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। এখন শুনছি আমাদের আবার মিটার বসাতে হবে। মিটারের জন্য নাকি তিন হাজার টাকা দিতে হবে। পানি নিয়ে এভাবে সাধারণ মানুষের উপর জুলুম করতে থাকলে আমাদের এখন থেকে বৃষ্টির আশায় বসে থাকতে হবে।’  

ডিসি রোড এলাকার বাসিন্দা সাইফুদ্দিন সিভয়েসকে বলেন, ‘আমি এই এলাকায় প্রায় ৭-৮ বছর ধরে থাকি। প্রায় সময় আমাদের এলাকায় ওয়াসার পানি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে। গত তিনদিন ধরে বালতিতে পানি ভরলে দেখি সাদা ফেনা উঠে। সাথে নালার পানির মতো দুর্গন্ধও বের হয়। ওয়াসাকে অভিযোগ দিলে চার দিন পর ওয়াসার মানুষ এসে লিকেজ ঠিক করে। এই অবস্থায় আবার ওয়াসা ডিপের পানির জন্য টাকা দাবি করছে। পানির জন্য এত হয়রানিতে পড়তে হলে আমাদের পানি না খেয়ে বসে থাকতে হবে।’

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সিভয়েসকে বলেন, ‘ওয়াসা এমনিতে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী লাইনের পানি সরবরাহ করতে পারছে না। সেকারণে নগরবাসী বাধ্য হয়ে টাকা খরচ করে নলকূপ স্থাপন করে পানি উত্তোলন করছেন। সেখানে যদি নতুন করে ফি নেওয়া হয় তা হবে অমানবিক ও অন্যায়।’ৎ

এমন হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবছেন বলে জানান এস এম নাজের হোসাইন। 

-সিভয়েস/ডিসি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়