Cvoice24.com

নগরে গভীর নলকূপ নিয়ে অন্ধকারে ঢিল মারতে চায় চট্টগ্রাম ওয়াসা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:০১, ৮ জানুয়ারি ২০২৩
নগরে গভীর নলকূপ নিয়ে অন্ধকারে ঢিল মারতে চায় চট্টগ্রাম ওয়াসা

প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামে কোথায়, কতো— গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে তার কোন তথ্যই জানে না চট্টগ্রাম ওয়াসা। যদিও গভীর নলকূপ স্থাপনের আগে পাইপের ব্যাস অনুযায়ী নির্দিষ্ট ফি দিয়ে ‘লাইসেন্স’ দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বসে আছে সংস্থাটি। তবে, বাড়িতে স্থাপিত গভীর নলকূপে পানি উত্তোলনের বিপরীতে টাকা আদায়ের সিদ্ধান্তের পর নড়েচড়ে বসেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে নগরজুড়ে অভিযান চালাবেন তারা। লাইসেন্স ছাড়া সব গভীর নলকূপের মোটর তুলে নিয়ে এসে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন। 

অভিযান চালানোর কথা বললেও দীর্ঘদিন ধরে ম্যাজিস্ট্রেট সংকটে ভুগছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ছয় মাস অন্তর অন্তর ম্যাজিস্ট্রেট পদে শূণ্যতার কারণে অভিযানের ‘শৃঙ্খলা’ হারাচ্ছে সংস্থাটি। ফলে অবৈধ সংযোগের সঙ্গে সঙ্গে বাকির খাতা বাড়ছে সংস্থাটির। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের জন্য পরপর তিনবার দেনদরবার করেও মন্ত্রণালয়ের কোন সাড়া মিলেনি।

ওয়াসার সবশেষ তথ্যানুযায়ী, প্রতিষ্ঠাকালের পর থেকে ৪ হাজার ৩০০টি গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সবশেষ ২০২১-২২ অর্থ বছরে লাইসেন্স নবায়ন করেছে মাত্র ২ হাজার ৭ শত ৪২টি। যদিও এর বাইরে হাজার হাজার গভীর নলকূপ রয়েছে নগরজুড়ে বাসা-বাড়িতে। এমনকি বিভিন্ন কল-কারখানায় গভীর নলকূপ রয়েছে।  

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুসারে ২ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ এর পর থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসার আওতাধীন এলাকায় কোনো গভীর নলকূপ স্থাপন করা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। অনুমতি নিতে পাইপের ব্যাস অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৩০ হাজার ও সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা ফি দিতে হয় আবাসিক গ্রাহককে। আর নবায়নের ফি ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার পর্যন্ত। অন্যদিকে আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে সেই ফির হার নির্ধারিত যথাক্রমে ৫৫ হাজার ও ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। নবায়নে ৩৩ হাজার ৭৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা পর্যন্ত।

তবে সরকারি প্রজ্ঞাপন আর ফি নির্ধারণ করেই বসে আছে নগরবাসীর পানি ও পয়োনিষ্কাশনের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া সংস্থাটি। লাইসেন্স নিতে গ্রাহকদের যেমন গা ছাড়া ভাব ঠিক তেমনই কর্তৃপক্ষেরও। নগরজুড়ে হাজার হাজার অবৈধ গভীর নলকূপ বসানো হলেও তার কোন ‘খবর’ নেই ওয়াসার কাছে। তবে সম্প্রতি চট্টগ্রাম কোর্ট হিল ও নগরের ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে গভীর নলকূপ স্থাপনে ‘বাঁধ সাধে’ ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

যদিও গুঞ্জন রয়েছে— কখনো প্রশাসন, কখনো সিআরবি রক্ষা আন্দোলনকারীদের চাপে পড়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া গভীর নলকূপ স্থাপনের বিরুদ্ধে কখনো অভিযানে যেতে দেখা যায়নি তাদের।

সবশেষ গত (২৮ ডিসেম্বর) বোর্ডের ৭১তম সাধারণ সভায় গভীর নলকূপ থেকে পানি তুলতে আবাসিকে ইউনিট প্রতি ৬ টাকা এবং অনাবাসিক গ্রাহকদের জন্য ১২ টাকা ৩৪ পয়সা নির্ধারণ করে টাকা আদায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চলতি বছরের মার্চে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার রাজস্ব কর্মকর্তা ইরফান সাজ্জাদ সিভয়েসকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত লাইসেন্স ছাড়া কতো গভীর নলকূপ রয়েছে তার কোন জরিপ নেই। তবে এখন থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় গভীর নলকূপের বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহেদুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘বাইরের দেশে হাফ লিটার পানির দাম শত টাকার উপরে। সেখানে চট্টগ্রামের মানুষ লাখ টাকা খরচ করে একটা পানির পাম্প বসিয়ে বছরের পর বছর ভোগ করছে লাইসেন্স ছাড়া। তাই চট্টগ্রাম ওয়াসা এই বিষয়ে শক্ত অবস্থানে যাবে। যারা লাইসেন্স ছাড়া পানির পাম্প চালাবে তাদের পাম্প খুলে নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়