‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’, কঠিন বর্জ্য থেকে হবে জৈবসার-ডিজেল
সিভয়েস প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের পর এবার নেওয়া হচ্ছে ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ নামের আরেকটি প্রকল্প। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কঠিন বর্জ্য থেকেই উৎপাদন হবে জৈবসার ও ডিজেল। যদিও এখনো পর্যন্ত চসিকের বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সেই প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। তবে চসিক জানিয়েছে— নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করতেই ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ নামের এ প্রকল্পটি নেওয়া হতে পারে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) স্থানীয় সরকার বিভাগের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি প্রতিনিধি দল সম্ভাব্য জায়গা দুটি পরিদর্শন করেন।
চসিক সূত্রে জানা যায়, চীনের এশীয় পরিকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) এর সহায়তায় সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পটি নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চট্টগ্রাম নগরকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করে দুটি প্লান্ট স্থাপন করা হবে। একটি নগরের হালিশহর টিজি কলোনী ও অন্যটি নগরের এক নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলি ওয়ার্ডের নতুন ল্যান্ডফিল। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি প্লান্টে সাড়ে পাঁচশো কোটি টাকা করে আনুমানিক এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হবে এ প্রকল্প। এ নিয়ে আজ ২৪ জানুয়ারি সিটি মেয়রের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বসে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হামিদসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এসময় এ দুটি প্লান্ট স্থাপনের জন্য পাঁচ একর করে মোট দশ একর ভূমি বরাদ্দের প্রস্তাব জানালে সিটি মেয়র তাতে সায় দেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানায়— এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সংগৃহিত বর্জ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে জৈবসার ও ডিজেল উৎপাদন করা হবে। একইসঙ্গে এ প্রক্রিয়ায় বর্জ্য থেকে ক্ষতিকারক গ্যাস, ময়লা পানি ও দুর্গন্ধ থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এছাড়া বর্জ্য পরিবহনে সৌর বিদ্যুৎনির্ভর আধুনিক গাড়ি ব্যবহার করলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরো গতিশীল হবে।
প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের যান্ত্রিক শাখার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আকবর আলী সিভয়েসকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি প্রতিনিধি দল এ বিষয়টি নিয়ে মিটিং করেছেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে যা করা যেতে পারে মূলত তা নিয়ে। এখনো কোনো বিষয় চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে আলাপ আলোচনা চলছে। বাকিটা দেখা যাক কি হয়।’
একই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চসিকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আজকে একটা প্রকল্পের বিষয়ে কথা হয়েছে। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নগরের সংগৃহিত বর্জ্যগুলো প্রক্রিয়াজাত করে সেগুলো থেকে জৈব সার তৈরি করা। অর্থাৎ ময়লাগুলোকে কাজে লাগানো হবে।’
এদিকে, স্থানীয় সরকার বিভাগের ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করবেন বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
মেয়র বলেন, মেয়র পদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে আমি চট্টগ্রামের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে শৃঙ্খলার মধ্যে এনেছি। তবে বিভিন্ন আধুনিক দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অভিজ্ঞতালাভের মাধ্যমে আমি অনুধাবন করছি যে চট্টগ্রামে প্রতিদিন যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন হয় তা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা সম্পদে রূপান্তরের পাশাপাশি উন্নত পরিবেশ গড়ে তুলতে পারি।
এসময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম, যান্ত্রিক শাখার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আকবর আলী, নির্বাহী প্রকৌশলী মীর্জা ফজলুল কাদের, প্রকৌশলী জয়সেন বড়ুয়া ও চসিক কনসাল্টেন্ট গোলাম সরওয়ার উপস্থিত ছিলেন।