Cvoice24.com

চসিকের সৌন্দর্যবর্ধন নীতিমালা মার্চে!

শারমিন রিমা

প্রকাশিত: ১৯:১৭, ১৯ মার্চ ২০২৩
চসিকের সৌন্দর্যবর্ধন নীতিমালা মার্চে!

গত ছয় বছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে নগরের সড়ক, ফুটপাত ও স্থাপনার সৌন্দর্য বর্ধনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে সুনিদির্ষ্ট কোন নীতিমালা না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে উল্টো নগরের সৌন্দর্য গিলে খেয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। যদিও শর্তানুসারে সৌন্দর্যবর্ধন না করায় এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক।

পরবর্তীতে ২০২১ সালের শেষদিকে ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সৌন্দর্যবর্ধন নীতিমালা—২০২১’ শিরোনামে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি। সৌন্দর্যবর্ধনের এ খসড়া নীতিমালা নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়। নীতিমালাটি চলতি মাসের মধ্যে চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

চসিক সূত্রে জানা যায়, সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় চসিক। মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এটিই হবে এ সংক্রান্ত প্রথম নীতিমালা। খসড়া এ নীতিমালা নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে চসিকের কর্মকর্তারা। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে চলতি মাসের মধ্যে (মার্চে) চূড়ান্ত হবে সৌন্দর্যবর্ধন নীতিমালা। 

এর আগে দুই বছর ধরে নীতিমালাটির খসড়া প্রস্তুত করে চসিক। খসড়া নীতিমালার কিছু সংযোজন বিয়োজন শেষে প্রণীত নীতিমালায় ২৩টি অনুচ্ছেদ রাখা হয়েছে। এসব অনুচ্ছেদের আলোকে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের উদ্দেশ্য, প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রসমূহ, সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের ধরণ, সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প সংক্রান্ত কমিটি, সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প সংক্রান্ত কমিটির কার্যপদ্ধতি, সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আবেদন প্রক্রিয়া, প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়সমূহ, প্রকল্প যাচাই বাছাই ও অনুমোদন প্রক্রিয়া, সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের মেয়াদ, সালামি-ভাড়া-ফিস ও ইজারা মূল্য ইত্যাদি পরিশোধ, খসড়া চুক্তির বিষয়ে আইন শাখার মতামত গ্রহণ, সিটি করপোরেশনের সভায় চুক্তির খসড়া অনুমোদন, চুক্তিপত্র ইত্যাদি সম্পাদন, ইজারা চুক্তি নবায়ন, ইজারা চুক্তির মেয়াদ পূর্তিতে ইজারাকৃত ভূমি বা স্থাপনার দখল সমর্পণ, ইজারা চুক্তি বাতিল, মেয়াদ পূর্তির পূর্বে চুক্তি বাতিল ইত্যাদি, প্রযোজ্য আইন ও নীতিমালা অনুসরণ, ইজারাকৃত ভূমির স্বার্থ হস্তান্তর বা সাব-লীজ প্রদান, সৌন্দর্যবর্ধণ সংক্রান্ত বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব উল্লেখ করা প্রস্তুত করা হয়েছে নীতিমালাটি। 

চসিক সূত্রে আরও জানা গেছে, এ সংক্রান্ত তিনটি আইন পাস করাতে চাইছে চসিক। এরমধ্যে একটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মার্কেট উপ-আইন, সৌন্দর্যবর্ধন নীতিমালা এবং আয়বর্ধক প্রকল্পের চুক্তির খসড়া নিয়ে বৈঠক হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। এর আগে গত জানুয়ারিতে এ নিয়ে আরও একবার বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের আলোকে নীতিমালায় সংযোজন বিয়োজন করার জন্যই এ বৈঠক হয়। পরবর্তী বৈঠক আগামী দশ দিনের মধ্যে হবে বলেও জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন— চসিকের সচিব, রাজস্ব কর্মকর্তা এবং একজন স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট। 

এ বিষয়ে চসিকের এক কর্মকর্তা জানান, সৌন্দর্যবর্ধন চুক্তির ক্ষেত্রে এর আগে কোনো ধরনের নিয়ম নীতি ছিল না যে কারণে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ইচ্ছেমতো কাজ করেছে। আইন না থাকায় চুক্তি অনুযায়ী কেউ কাজ করেনি। এখন এ নীতিমালা চূড়ান্ত হলেও কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এ কর্মকর্তা। 

এ বিষয়ে চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ সিভয়েসকে বলেন, ‘সৌন্দর্যবর্ধন নীতিমালা এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি। খসড়া নিয়ে সম্প্রতি একটা বৈঠক হয়েছে। সেখানে কিছু সংযোজন বিয়োজন করা হয়েছে। আমরা তিনটা উপ আইন নিয়ে কাজ করছি। খসড়াটা ফাইনাল হলেই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আশা করছি চলতি মাসের মধ্যেই নীতিমালা চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে চসিকের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘নীতিমালার আলোকে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের অনুমোদনের ক্ষেত্রে যাবতীয় সবকিছু আগে যাচাই-বাছাই করা হবে। এটা একটা আইনের মধ্যে চলে আসবে। বলতে গেলে এটা একটা আয়বর্ধক প্রকল্পের নীতিমালা হবে। সিস্টেমের মধ্যে চলে আসলে করপোরেশনেরও আয় বাড়বে। ইচ্ছেমতো কেউ কাজ পাবে না। সব নিয়মের মধ্যে চলবে।’

অন্যদিকে, নীতিমালার আলোকে সৌন্দর্যবর্ধন সম্পর্কে বলা খসড়ায় বলা হয়েছে— নগরের বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট বা খালি জায়গার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এরূপ স্থায়ী বা অস্থায়ী প্রকৃতির নানা কার্যক্রম যেমন- দৃষ্টিনন্দন গাছ লাগানো ও পরিচর্যা, ফাউন্টেন স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষন, ফুটপাত এবং মিড আইল্যান্ড নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, প্রাথমিক চিকিৎসা বুথ, তথ্য কেন্দ্র এবং বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মহান সংস্কার, আলোকায়ন, চিত্রাংকন, পথচারীদের বসার বেঞ্চ স্থাপন, খেলারমাঠ ও জলাধার সংস্কার ও আধুনিকায়ন, সাইন/টিউিতে সড়ক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক আইন-কানুন, সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মুক্তিযুদ্ধেও চেতনা সম্বলিত ভাস্কর্য, স্থাপন ইত্যাদিকে বুঝাবে। এছাড়া স্থাপিত ডিজিটাল প্রচারণা ইত্যাদিও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় থাকবে।

এছাড়াও সৌন্দর্যবর্ধন নীতিমালা প্রণয়নের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা খসড়ায় বলা হয়েছে— সিটি কর্পোরেশনের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য হবে নগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। এছাড়া কর্পোরেশনের মালিকানাধীন জায়গা কিংবা স্থাপনাসমূহ নিজ দখলে রাখা, অবৈধ স্থাপনা কিংবা অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট জায়গা কিংবা স্থাপনায় কর্পোরেশনের নিরঙ্কুশ দখল প্রতিষ্ঠা করা।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়