১২ বছরে ১৩ বার শাস্তি, তবুও ‘টুকটাক সমস্যা’ বলছে সালেহ স্টিল
তারেক মাহমুদ ও দেবাশীষ চক্রবর্তী

সালেহ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
ঋতু যদিও এখন উষ্ঞতার। এমন তপ্ত গ্রীষ্মেও বায়েজীদের রুবি গেইট এলাকাকে মনে হবে যেন ঘন কুয়াশায় ঢাকা এক শীতের নগরী। তবে কুয়াশায় নয় ছেয়ে গেছে ইস্পাত পোড়ানো ধোঁয়ায়। বছরের পর বছর ধরে জরিমানা এমনকী একবার বন্ধও করে দেওয়া হয়েছিল সালেহ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের এ প্রতিষ্ঠানকে। গত ১২ বছরে প্রতিষ্ঠানটিকে ২৬ লাখ ৮৬ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়াও বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে চিঠি দিয়েছিলো পাশে থাকা স্কুলসহ দুই প্রতিষ্ঠান। এত শাস্তি ও সতর্কবার্তায় কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের বরং ন্যূনতম ব্যবস্থাও না নিয়ে দূষণকে তারা উল্লেখ করেছেন টুকটাক সমস্যা হিসেবে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সালেহ স্টিলের ১৫ থেকে ২০ ফুট দূরত্বের মধ্যে ক্ষুদ্র মাঝারি ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রয়েছে একটি বেসরকারি স্কুল, কয়েকটি আবাসিক ভবন এবং একটি আটা তৈরির কারখানা। এছাড়াও রুবি গেইট সংলগ্ন রাস্তাটি একটি ব্যস্ত সড়ক। এ সড়কটি নগরের দুই নম্বর গেইট এলাকা ও অক্সিজেন এলাকাকে সংযুক্ত করে। এছাড়াও সড়কটি চট্টগ্রামের তিন উপজেলা হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজানকে নগরের সাথে যুক্ত করে। ফলে সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২ জুলাই সালেহ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ ২ লাখ টাকা, ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই ২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, ২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ১৬ হাজার ২শ টাকা, ২০১৭ সালের ৮ মার্চ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট ৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা, ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা, ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল ১ লাখ টাকা, ২০২৩ সালের ১৫ মে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় বায়েজীদে অবস্থিত সালেহ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ নামের রড তৈরির প্রতিষ্ঠানকে। ১২ বছরে প্রতিষ্ঠানটি জরিমানা গুণেছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা।
আর্থিক শাস্তি ছাড়াও সালেহ স্টিলকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এর আগে ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন টেস্ট রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়, ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর এয়ার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (এটিপি) আধুনিকায়নের নির্দেশ দেয়া হয়, ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর এয়ার পলিউশন কন্ট্রোল সিস্টেম (এপিসি) আধুনিকায়নের জন্য ৩ মাস সময় দেয়া হয়, ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এয়ার পলিউশন কন্ট্রোল সিস্টেম (এপিসি) আধুনিকায়নের জন্য আড়াই মাসের সময় বেঁধে দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর।
সবশেষ চলতি বছরের পরিচালিত অভিযানটিতে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানার সাথে এবং কারখানার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে সিলগালাও করে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা অনেকে বলেছেন, কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতায় কারখানাটি খুলে যায় এবং বারবার একই দূষণ অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
সালেহ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নাম মোহাম্মদ জাভেদ অপগেনহাফেন। তিনি বাংলাদেশ ও বেলজিয়ামের দ্বৈত নাগরিক। সালেহ স্টিল ছাড়াও বাংলাদেশে তার আরও ৩টি প্রতিষ্ঠান আছে। যেগুলো হল ফু ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি, এজে করপোরেশন লিমিটেড, জেনারেশন নেক্সট।
তিনি ঢাকার ব্যবসায়ী হলেও প্রায় ৪ বছর আগে তিনি সালেহ স্টিল নামের এ প্রতিষ্ঠানটি কিনে নেন। এরপর থেকে পরিবেশ দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
-সিভয়েস/এসএস