Cvoice24.com

টাকা মেরে শেষমেশ চাকরি খোয়ালেন চসিকের সাইফুদ্দিন

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৪৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
টাকা মেরে শেষমেশ চাকরি খোয়ালেন চসিকের সাইফুদ্দিন

২০২২ সালের ১০ মে ব্যাংক কর্মকর্তা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ ৮জনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার চার্জশিটে  উঠেছিল চসিকের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিনের নাম। চসিকের বিভাগীয় মামলায় আর্থিক অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় সাময়িক বরখাস্তের পর এবার চাকরিটাই খোয়ালেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা  মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।

সাইফুদ্দিনে বিরুদ্ধে চসিকের বিভাগীয় মামলার তদন্তে ঠিকাদারের বিল থেকে কেটে নেওয়া ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্সের (আয়কর) টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। দুইদিন আগে গত সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে চাকরি হতে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের অফিস আদেশ জারি করেছেন চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ।

সেই অফিস আদেশে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হিসাব বিভাগের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক প্রমাণিত হওয়ায় এবং যথাসময়ে আয়কর ও ভ্যাটের কর্তৃনকৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়ায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চাকরি বিধিমালা ২০১৯ এর ধারা ৫০(খ)(ই) অনুযায়ী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চাকরি হতে অবসর প্রদান করা হল। 

চসিক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকের পরিবর্তে ঠিকাদারের অ্যাকাউন্টে চেক প্রদান, কাজ না করার পরও ঠিকাদারকে অগ্রিম টাকা দেওয়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা না দেওয়া এবং ভ্যাট ও আয়করের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়ার অভিযোগ ছিল প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (বর্তমানে বরখাস্ত) মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রথম দফায় ২০২০ সালে তদন্ত কমিটি গঠন করে চসিক। সে সময় তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ওই বছরের ১৭ নভেম্বর চসিকের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক এ কর্মকর্তাকে শোকজ (কারণ দর্শানোর নোটিশ) করেন। 

একইভাবে ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর চসিকের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম আরেকটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। পরবর্তীতে কয়েক দফা তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা (মামলা নং ০১/২০২১) দায়ের করা হয়। চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এবং প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহারকে প্রধান করে তিন দফায় এ বিভাগীয় মামলার তদন্ত করে চসিক। 

চসিক সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৮-২০১৯, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ঠিকাদার ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধিত বিলের বিপরীতে ভ্যাট বাবদ ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং আয়কর বাবদ ২ কোটি ২২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা কর্তন করে। কিন্তু এ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেননি প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। এছাড়াও ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে একই বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২৬ মাসের টাকাও (প্রতি মাসে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত) জমা দেননি এ হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। এসব অভিযোগেরও সত্যতা পান তদন্ত তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের (২০২২) ২১ সেপ্টেম্বর সাইফুদ্দিনকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সে সময় কর্পোরেশনের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল আলম এ বরখাস্তের আদেশ দেন। 

প্রসঙ্গত, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে গত বছরের অর্থাৎ ২০২২ সালের ১০ মে ব্যাংক কর্মকর্তা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় চসিকের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিনের নাম চার্জশিটে উঠে আসে। তদন্তে শেষে গত ২০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। এই মামলায় সাইফুদ্দিন উচ্চ আদালতে জামিন নিতে গেলেও তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলায় জামিন পান তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দাখিল করা অভিযোগপত্র মহানগর দায়রা জজ আমলে না নিয়ে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর এ মামলার শুনানি রয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চসিকের সদ্য চাকরিচ্যুত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়