চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
নতুন নগরপ্রধান বরণে নানা প্রস্তুতি
মিনহাজ মুহী, সিভয়েস২৪
নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন শপথ নেবেন আগামী রবিবার।
নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের আসনে বসছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। আগামী ৩ নভেম্বর রবিবার শপথগ্রহণের মধ্য দিয়ে মেয়র হিসেবে তাঁর নতুন যাত্রা শুরু হবে। ঢাকায় শপথগ্রহণের একদিন বাদে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আসবেন নতুন নগরপিতা বা নগরপ্রধান। তাঁকে বরণে এর মধ্যেই প্রস্তুত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ‘অভিভাবকহীন’ সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে একটি প্রশ্ন— ‘কেমন হবেন নতুন মেয়র?’ তবে পেশায় চিকিৎসক নগরপিতার কাছে সবার প্রত্যাশা ‘পরম সেবা শুশ্রুষায় রোগীকে যেভাবে সারিয়ে তুলেন তিনি; ঠিক একইভাবে সারিয়ে তুলবেন ‘রুগ্ন’ চসিককে।
জানা গেছে, নতুন মেয়রের আগমনকে ঘিরে মেয়রের কক্ষ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে। মেঝেতে বিছানো হয়েছে নতুন ফ্লোরমেট। মেয়রের জন্য বসানো হয়েছে নতুন চেয়ার, বার্নিশের পর ঝকঝক করা হচ্ছে সব আসবাবপত্র। ফুলের টবসহ ইন্টেরিয়র ডিজাইনে কিছুটা বাহ্যিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এছাড়া নগর ভবনে আয়োজন করা হয়েছে খতমে কোরআন ও খতমে গাউছিয়া।
সূত্র মতে, আগামী ৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে সকালে রেলপথে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা দিবেন ডা. শাহাদাত। দুপুরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে দলীয় নেতারা ফুল দিয়ে স্বাগত জানাবেন। পরে সেখান থেকে হযরত আমানত শাহ এবং হযরত বদর শাহ (রহ.) এর দরগাহ জেয়ারত করবেন তিনি। এরপর তিনি সিটি করপোরেশনের নতুন ভবনে (লালদিঘীর পাড়) একটি মিটিংয়ে উপস্থিত থাকবেন। পরে সেখানেই সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন।
সেখান থেকে বাদে আসর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে যাবেন। সেখানে খতমে কোরআন ও খতমে গাউছিয়া শেষে মোনাজাতে অংশ নিবেন। পরে সেখান থেকে বাসায় ফিরবেন। আর পরদিন থেকে নিয়মিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অফিস করবেন বলে জানা গেছে।
নতুন মেয়রকে বরণে প্রস্তুত জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘মেয়রের জন্য নতুন একটি চেয়ার বসানো হয়েছে। ফ্লোরে নতুন ফ্লোরমেট, সোফা-টেবিল বার্নিশ করে নতুন টব বসিয়ে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে।’
কাজে গতি ফেরার কথা জানিয়ে আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘মেয়র-প্রশাসক না থাকায় রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া সবকিছু ছন্দহীন ছিলো। নতুন মেয়র দায়িত্ব নিলে কাজের গতি ফিরবে। এতদিন প্রশাসক মহোদয় ছিলেন। তবে তিনি অনেক কিছুই এড়িয়ে গিয়েছেন। রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে তিনি হয়তো সেগুলো সামাল দিতে পারবেন।’
নতুন মেয়রকে বরণে প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘মেয়র মহোদয়কে বরণে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। উনি শপথ গ্রহণের পর কার্যালয়ে আসবেন। এরপর আমরা আমাদের আনুষ্ঠানিকতা সারবো।’
ডা. শাহাদাত হোসেনের একান্ত সচিব মারুফুল হক চৌধুরী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘আগামী ৩ নভেম্বর শপথ গ্রহণ হবে। আমাদের দিক থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমরা অতিথির একটি তালিকা জমা দিয়েছি। ১৫ থেকে ২০ জন শপথ গ্রহণের সময় উপস্থিত থাকতে পারেন। এতে পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক সিনিয়র নেতা এবং ঘনিষ্টজনরা আছেন। উপদেষ্টা মহোদয় অসুস্থ থাকায় মন্ত্রণালয় থেকে উপস্থিতির সংখ্যাটা একটু কমানোর অনুরোধ করা হয়েছে।’
বাসভবনের সড়ক সংস্কার, দ্বিগুণ ‘জ্যোতি’ সড়কবাতিতে
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের বাসা নগরের বাদশা মিয়া সড়কে। আদালতের রায়ে ‘মেয়র’ ঘোষণার পরই এবড়োথেবড়ো ওই সড়ক মসৃণতার ছোঁয়া লাগাতে নেমে পড়ে চসিকের প্রকৌশল বিভাগ। নতুন করে করা হয়েছে কার্পেটিং। এছাড়া একসময়ে আলোআঁধারিতে থাকা বাদশা মিয়া সড়কে এখন নিয়মতি জ্বলছে সড়কবাতি। সড়ক বাতির ‘জ্যোতি’ ছড়িয়েছে আগের চেয়ে দ্বিগুণ। বিদ্যুৎবিভাগ থেকেও সড়কবাতি দেখভাল করা হচ্ছে নিয়মিত।
‘স্বাগত’ ব্যানার ফেস্টুনে ভরা চসিক কার্যালয় এলাকা
ডা. শাহাদাত হোসেনকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার ফেস্টুনে ভরে গেছে নগরের টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয় সড়ক। দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যানার ফেস্টুন, তোরণ হয়নি। মেয়রের আগমনের ওপর নির্ভর করে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তা লাগানো হবে বলে জানা গেছে। যদিও ‘অতিরঞ্জিত’ বরণে আগেভাবেই মানা রয়েছে খোদ চসিক মেয়রের।
উন্মুখ ঠিকাদার সমিতিও
নতুন মেয়রকে বরণে প্রস্তুত চসিক ঠিকাদার সমিতিও। গত ১৬ বছর চসিকে টেন্ডারে দলীয়করণ হয়েছে অভিযোগ করে ঠিকাদার সালাউদ্দীন কাওছার লাভু সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘সময়টা খুবই কম। তবে আমাদের চাওয়া-প্রত্যাশা অনেক বেশি। চসিকে কাজের চেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত (বিরোধী দল) বেশি। এখানে কাজ নিয়ে বিভিন্ন মানুষের অনেক অভিযোগ রয়েছে। ডা. শাহাদাত একজন ভালো মানুষ। উনার কর্মকাণ্ড যাতে ভালোভাবে হয়। আশা করছি, নতুন মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর অসুস্থ একটা প্রতিষ্ঠানকে সুস্থ করার চেষ্টা করবেন।’
ঠিকাদার সালাউদ্দীন বলেন, ‘আগে কাজ পেতে অসুবিধা হতো। চসিকে গত কয়েক বছর প্রচণ্ডভাবে দলীয়করণ ছিল। যার কারণে আমরা কাজ পাইনি। আশা আছে, নতুন মেয়র এলে এসব অনিয়ম আর থাকবে না। উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানে যারা যোগ্য তারাই কাজ পাবেন।’
আবদুল হালিম স্বপন নামে চসিকের আরেক ঠিকাদার সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘শুধু আমরা নয়; চট্টগ্রামে গত ১৬ বছরে সেবা থেকে যারা বঞ্চিত ছিল তারা সবাই শাহাদাত ভাইকে নতুন মেয়র হিসেবে পেয়ে আনন্দিত। উনি কার্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমরা উনাকে সংবর্ধনা দিব। শুভেচ্ছা বিনিময় হিসেবে তিনি সবার সঙ্গে দেখা করবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য বিশাল আনন্দের। চট্টগ্রাম শহরে শাহাদাত ভাইকে যারা চিনেন তারা ভালো করেই জানেন তিনি কেমন মানুষ। তিনি যখন নগরের দলীয় দায়িত্বে ছিলেন তখন তিনি সেভাবেই কাজ করে দলের আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন। এখন তিনি পুরো চট্টগ্রাম নগরের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন। তাই দলের মতো করে চসিককেও আগলে রাখবেন। তাঁর সময়টা কম; এরপরও তিনি সেই সময়ে তাঁর সর্বোচ্চটা দিয়ে চসিককে সুস্থ করে তুলবেন।’