Cvoice24.com


জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে চসিকের সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন কাউন্সিলররা

প্রকাশিত: ১৩:১১, ৪ জুলাই ২০১৮
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে চসিকের সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন কাউন্সিলররা

ছবি : প্রতীকী

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহিত ৫ হাজার ৬’শ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক তদারকিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তবে এই কার্যক্রমে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা থাকলে তা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ আরো গতিশীল ও টেকসই হবে বলে মনে করছেন চসিক ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। 

কাউন্সিলররা মনে করেন, নগরীর ওয়ার্ড এলাকার সকল খাল, নালা, নর্দমা সংস্কার, মাটি উত্তোলন এবং পরিচ্ছন্নকরণ কাজে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দীর্ঘদিনের কর্ম দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাছাড়া কর্ম সংশ্লিষ্টতার কারণে চট্টগ্রাম নগরীর সকল খাল বা নালা-নর্দমার ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কেও চসিক কাউন্সিলর এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের সম্যক ধারণা আছে।  

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম নগরীর ৩৬টি খালের মাটি উত্তোলনে ২৮ কোটি ৮৫ লাখ ও খনন বাবদ ২৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, ৬ হাজার ৫১৬ কাঠা ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ১ হাজার ৭২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, নতুন ৮৫.৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে ৩১৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, ১৭৬ কিলোমিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে ২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা, ৪৮টি গার্ডার ব্রিজ প্রতিস্থাপনে ২৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা, বন্যার পানি সংরক্ষনে ৩টি জলাধার প্রস্তুত,৬টি কালভার্ট নির্মাণ, খালগুলোতে ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ নির্মাণ, ৫টি খালের মুখে টাইডাল রেগুলেটর নির্মাণ, ১২টি পাম্প হাউস স্থাপন খালের উভয় পাড়ে ১৫ ফুট রাস্তা নির্মাণ এবং ২০০টি ক্রস ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। 

প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুর জন্য প্রথম পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  ৫০০ কোটি  টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। 

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জলাবদ্ধ প্রবণ এলাকা আগ্রাবাদ-হালিশহর, বাকলিয়া-চান্দগাঁও এবং মুরাদপুর-বহদ্দারহাট এলাকার খাল খনন, নালা-নর্দমা সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তাই শুরু হওয়া বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার ১৬টি খাল নিয়েই এগুচ্ছে সংস্থাটি। এই ১৬টি খালের মধ্যে চাক্তাই খাল, বির্জা খাল, রাজাখালী খাল-১, রাজাখালী খাল-২, রাজাখালী খাল-৩, মরিয়ম বিবি খাল, হিজরা খাল, মহেশ খাল, কলাবাগিচা খাল, ডোম খাল, বামুনশাহী খাল (কোদাল কাটা খাল, কাটা খাল, সানাইয়া খাল, মধুছড়া খালও বামুনশাহী খালের অন্তর্ভুক্ত), চাক্তাই ডাইভারশন খান (বাকলিয়া খাল নামেও পরিচিত), নয়া খাল (বাইজ্জা খাল ও বালু খাল নামেও পরিচিত), খন্দকিয়া খাল এবং নাছির খাল। 

তবে চসিক কাউন্সিলররা মনে করছেন, জলাবদ্ধতা সমস্যা চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম একটি দুর্ভোগ। এ সমস্যাকে এখন চট্টগ্রামের ‘আঞ্চলিক দুর্যোগ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। চট্টগ্রামবাসীর এই দুর্ভোগ নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিক হয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সমন্বিত অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার ভিত্তিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা টেকসই, গুণগত মানসম্পন্ন এবং সময় সাশ্রয়ী হবে।

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে শুরু করা নালা, নর্দমার মাটি অপসারণ কার্যক্রমে নানামুখী জনদুর্ভোগ, ভোগান্তি সৃষ্টির কারণে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলররা জনরোষের মুখে পড়ছেন বলেও অনুযোগ উত্থাপিত হয়েছে। 

এ ব্যাপারে কথা বলা হলে ২৭ নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এইচ এম সোহেল বলেন, আমার এলাকায় প্রকল্পের কাজ চলছে। এখানে আমার এবং আমার অধীন ওয়ার্ড সুপারভাইজারের পুরো এলাকা চেনাজানা। নালার ময়লা উত্তোলন বা খাল খননের কাজে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। এতদিন সিটি কর্পোরেশনই এ কাজগুলো করে আসছে। কাজেই প্রকল্পের স্বার্থেই সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয় সাধন গুরুত্বপূর্ণ। কর্পোরেশনকে সমন্বিত করলে ১ মাসের কাজ ১০দিনে সম্পন্ন হবে। নালা-নর্দমা সংস্কার বা ময়লা উত্তোলন করে রাস্তায় ফেলে রাখা হচ্ছে। পরিবেশ দূষিত হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফুটপাতের স্ল্যাব উঠিয়ে ফেলা হচ্ছে। তা আর পূর্বের অবস্থানে সেট করা হচ্ছে না। জলাবদ্ধতার সময় লোকজন খোলা নালায় পড়ে আহত হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার জবাবদিহিতা রয়েছে। আবার একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি চাই কাজটি ভালভাবে করা হোক। 

২৪ নং উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে জনপ্রতিনিধিদেরকে সমন্বিত করা জরুরি। পরিচ্ছন্ন বিভাগ বা প্রকৌশল বিভাগকে সমন্বিত করা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জলাবদ্ধতা সমস্যার উত্তরণ চাই। চট্টগ্রাম নগরীর খাল, নালা, নর্দমার ভৌত অবস্থা সম্পর্কে সিটি কর্পোরেশন সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। কাজেই জনস্বার্থে যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে সেখানে জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। 
জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে জনপ্রতিনিধিদের সমন্বিতকরণ বিষয়ে ২৫ নং রামপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এরশাদ উল্লাহ বলেন, জনপ্রতিনিধিদের সমন্বিত করতে হবে-আমরা প্রথম থেকেই এ দাবি জানিয়ে আসছি। যে সংস্থাকেই জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব দেয়া হোক না কেন। প্রকল্পের গুণগত মান রক্ষার স্বার্থে জনপ্রতিনিধিদেরকে সমন্বিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  সমস্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে এলাকার জনপ্রতিনিধি বা কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। কর্পোরেশনের কাছে এসবের সম্যক ডাটা আছে, ম্যাপিং আছে।

তিনি মহেশখালের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, রামপুর এলাকার আজব খাল সরাইপাড়া-্ঈদগাহ হয়ে মহেশ খালে পড়েছে। সাথে যুক্ত আছে নন্দ খাল। মহেশখাল খনন বা যেকোন কার্যক্রমের সাথে তো এ খালগুলোর সংস্কার বা খনন সরাসরি সম্পৃক্ত। এরকম নগরীর সমস্ত খালগুলোর সাথে যুক্ত শাখা খালগুলোও খনন বা সংস্কার জরুরি। 

এ বিষয়ে ৩৭ নং উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউল আলম জানান, বন্দর উত্তর, আবাসিক এলাকাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকা নিয়মিত ভাবেই প্লাবিত হচ্ছে। মুন্সিপাড়া, আনন্দবাজার, আদর্শ পাড়ার মুখে স্লুইচ গেট স্থাপন করায় জলাবদ্ধতা অনেক কম হচ্ছে ড্রেন বড় করায় পানি দ্রুত নেমে যেতে পারছে। এখানে বৃষ্টির সাথে জোয়ারের পানি যুক্ত হয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আসলে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। জলাবদ্ধতার কষ্ট মেনে নিতে হচ্ছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও জনজীবন চলছে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধিদেরকে সম্পৃক্ত করা হলে প্রকল্প বাস্তবায়নকে নিঃসন্দেহে গতিশীল করবে।

সিভয়েস/ইউডি/এসএ/এমইউ
 

সিভয়েস প্রতিদেক  

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়