Cvoice24.com


দ্রুত পরিবহনে মেয়রের নতুন ট্র্যাক “মেট্রোরেল”

প্রকাশিত: ১৩:২৬, ২৬ জুলাই ২০১৯
দ্রুত পরিবহনে মেয়রের নতুন ট্র্যাক “মেট্রোরেল”

ফাইল ছবি।

আধুনিক চট্টগ্রাম নগরী বিনির্মাণের পূর্বশর্ত দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন । বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে  প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ম্যাচ র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) শীর্ষক এই মেট্রোরেল পরিবহন ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি (প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই)। 

বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড কনসালট্যান্ট লিমিটেড নামীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাক যোগ্যতা সমীক্ষা শুরু করার কার্যাদেশ দিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা চসিক। কার্যাদেশে অলংকার একে খান মোড় থেকে নতুন ব্রিজ শহীদ বশিরুজ্জামান চত্ত্বর হয়ে ফিরিঙ্গী বাজার ঘাট, বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত সড়ক, কালুরঘাট রেলওয়ে সেতু থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত সড়ক, জিইসি মোড় থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর সড়ক এবং অক্সিজেন মোড় থেকে কোতোয়ালী মোড় পর্যন্ত সড়কে মেট্রোরেল চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সমীক্ষা পরিচালনার  নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

এ ব্যাপারে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন,  চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। ৬০ বর্গ মাইলের এই শহরে প্রতিদিন  জনসংখ্যার চাপ বেড়েই চলেছে। সে বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ সরাসরি গণপরিবহনের উপর পড়ছে। সময়ের সাথে সাথে দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা চট্টগ্রামের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের কারণে আমরা আজ বিলাসী স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলছি। কর্ণফুলী টানেল একসময় কেউ স্বপ্নও দেখেননি। প্রধানমন্ত্রীর কারণে টানেল আজ স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা।  এই নগরে ম্যাচ র‌্যাপিড ট্রানজিট  হবে সেই স্বপ্নও এখন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর কারণে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সাহস পাচ্ছি। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এটি বাস্তবায়িত হবে। তবে মেট্রোরেল বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন উদ্যোগ গ্রহণ করলেও এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।

সিডিএ'র সমন্বয়কে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মেয়র বলেন, সিডিএ'র সাথে এখন চুল পরিমাণ দুরত্ব নেই। নগর উন্নয়ন ও দ্রুত পরিবহনে গৃহীত এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সিডিএ’র কাছ থেকে আমি "নো অবজেকশন" আশা করি। প্রয়োজনে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সমাজের নানা শ্রেণি পেশাজীবীদের মতামত, পরামর্শ গ্রহণ করা হবে। সবার মতামত নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। আরো আগে নগরে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা দরকার ছিল বলে মন্তব্য করেন মেয়র।

মেট্রোরেল প্রকল্প নিয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, প্রকল্প শুরুর আগে অপরাপর সংস্থার সাথে সমন্বয় করলে তা দীর্ঘ মেয়াদী টেকসই ও জনপ্রত্যাশা পুরণে কার্যকর হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তিনি আরো বলেন, এটি চলমান প্রকল্প। মেট্রো রেল নির্মাণে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ বন্ধ না রাখাই ভাল।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, নগরজুড়ে মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সড়কগুলো অন্তর্ভুক্ত করে ৩টি মেট্রো রেল লাইন নির্মাণের সুপারিশ রয়েছে। ২৬.৫০ কি.মি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রেল লাইন-১'র আওতায় কালুরঘাট- বহদ্দার হাট-চকবাজার-লালখান বাজার-দেওয়ান হাট-পতেঙ্গা-শাহ আমানত বিমানবন্দর সড়ক প্রস্তাবনা রয়েছে। ১৩.৫০ কি.মি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রেল লাইন-২ র আওতায় সিটি গেইট-একে খান বাস স্টপ-নিমতলী বাস স্টপ-সদরঘাট-ফিরিঙ্গি বাজার- নতুন ব্রিজ শহীদ বশিরুজ্জামান চত্ত্বর পর্যন্ত সড়কের প্রস্তাবনা রয়েছে। ১৪.৫০ কি.মি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রেল লাইন-৩'র আওতায় বাংলাদেশ অক্সিজেন -মুরাদপুর-পাঁচলাইশ-আন্দরকিল্লা-কোতোয়ালি-ফিরিঙ্গী বাজার এবং পাঁচলাইশ-একে খান বাস স্টপ পর্যন্ত সড়কের প্রস্তাবনা রয়েছে।

এ ব্যাপারে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, তবে রেল লাইন-২ ও রেল  লাইন-৩ নির্মাণে অন্য প্রকল্পের সাথে কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকলেও রেল লাইন-১ নির্মাণে দুটি প্রতিবন্ধকতার উল্লেখ করেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এর একটি বহদ্দার হাট-লালখান বাজার সড়কাংশে ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং দ্বিতীয় প্রতিবন্ধকতা লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর সড়কে চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ।

মেট্রো রেল লাইন নির্মাণের এই প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে করণীয় নির্ধারণে আজ শুক্রবার বিকালে চসিক সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রামে চলমান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল কর্তৃপক্ষ ও নানা শ্রেণি পেশাজীবীদের সাথে মতবিনিময় করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। মত বিনিময়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষসহ সংশ্লিষ্টরা স্ব স্ব মতামত ব্যক্ত করেন।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে মেট্রোরেল বাস্তবায়নে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ স্থগিত রেখে এমআরটি প্রকল্প অগ্রাধিকার দেয়া, এক্সপ্রেসওয়ের ডিজাইন পুনর্বিবেচনা করে উড়াল সেতু ও মেট্রোরেল সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে সুপারিশ দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, ম্যাচ র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পরিবহন ব্যবস্থার মোট দৈর্ঘ্য ৫৪.৫০ কি.মি। এতে তিনটি রেল লাইন নেটওয়ার্কে মোট ৪৭টি স্টেশন রাখা হবে। প্রতিটি মেট্রো রেল লাইনের জন্য একটি করে ডিপো থাকবে। ৬০ একর আয়তন বিশিষ্ট প্রতি ডিপোতে রোলিং স্টকের বিরতিকালীন বিশ্রাম, পরিচ্ছন্নকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা রাখা হবে। অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার, স্টেব্লিং ইয়ার্ড রাখা হবে।  ১ কি.মি দৈর্ঘ্যের টেস্ট ট্র্যাক ব্যবস্থা থাকবে।

-সিভয়েস/এসএ

উজ্জ্বল দত্ত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: