Cvoice24.com


৪৯ বছরে চট্টগ্রামে হয়নি স্মৃতির মিনার

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০
৪৯ বছরে চট্টগ্রামে হয়নি স্মৃতির মিনার

ছবি : সিভয়েস

সত্তরের নির্বাচনে জয়ী তৎকালীন পূর্ব বাংলার প্রিয়মুখ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জনস্রোতে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘...আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এদেশের মানুষের অধিকার চাই। আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়— তোমাদের কাছে অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো...।’ তার সেই বক্তব্যের অনুপ্রেরণায় সাত কোটি বাঙালি একত্রিত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ চাইলো। 

এর পরপরই পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর হামলা চালায়, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাওয়া হয় জেলে। তারই নির্দেশ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তীতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘোষণায় সমগ্র পূর্ব বাংলার সর্বসাধারণ নেমে পড়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাসের সেই যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ, সম্ভ্রম হারান দুই লাখ মা-বোন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গণকবর রচনা হয় চট্টগ্রামে। কিন্তু বিজয়ের ৪৯ বছর পরেও স্মৃতিবিজড়িত এই বাণিজ্যিক নগরীতে হয়নি কোনো স্মৃতিসৌধ।

কথা হয় গণহত্যা গবেষক অধ্যাপক ড. গাজী সালেহ উদ্দিনের সঙ্গে। সিভয়েসকে তিনি বলেন, ‘এতো বছর পর এসে ইতিহাস সংরক্ষণ নিয়ে কথা বলাটাও লজ্জার বিষয়। যুদ্ধে চট্টগ্রাম ছিল এক নম্বর সেক্টর। এখানে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আবর্জনার মতো সেই লাশ ফেলা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। অথচ এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে কোনো স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়নি কেউ। সরকারিভাবে তো নেওয়া হয়নি-ই, ব্যক্তি উদ্যেগেও না।’

স্মৃতিসৌধ নির্মাণে সরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগের অনিহায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এই গবেষক বলেন, ‘রক্ত যাদের গেছে শুধু তারাই বুঝে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কতটা জরুরি। আর যাদের যায়নি, এটা তাদের বোঝানোও সম্ভব না। যদি কেউ বুঝতো, তাহলে দেশ স্বাধীনের ৪৯ বছর পরেও কেন চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধ নিমার্ণ করা হয়নি— এর জবাব দিতে হতো না আজ। কিন্তু আফসোস! কেউ এ ইতিহাস সংরক্ষণের প্রয়োজনীতাই বুঝতে পারছে না।’

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও ইতিহাস সংরক্ষণে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে ড. গাজী সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘ফয়েস লেকের পাহাড়ের উপরে একজন পাকিস্তানি আর্মি ক্যাপ্টেনের বাংলো ছিল। সেখানে যুদ্ধের সময় এমন কোনো নৃশংসতা নেই যে, হয়নি। পরে এটি কনকর্ডের পার্ক হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে রায়েরবাজর বধ্যভূমি ও পাহাড়তলী বধভূমির জন্য জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে সব কাজের বাজেট হয়। কিন্তু সেখানেও একটি পক্ষ জমি দখল করে। ওটা নিয়ে আমি মামলা করার কারণেই এখন পর্যন্ত তাদের কাজ আটকে আছে। এছাড়াও চট্টগ্রামের সব বধ্যভূমি অনেক কষ্ট করে খুঁজে সেই স্থানের বিবরণ ও তার ইতিহাস নিয়ে একটি বই লিখে, সেটিও নিজের পয়সায় ছাপাতে হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘বধ্যভূমি সংরক্ষণ নিয়ে কারো কোনো তাগিদ না থাকায় এ কাজ আটকে আছে। এখন আমার ৭২ বছর বয়স। আমি কতটুকুই বা পারি! আসলে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যতদিন নিরসন না হবে, ততদিন এসবের কিছুই হবে না।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহম্মদ ইলিয়াস বলেন, ‘চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে জাদুঘর কিংবা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের ব্যাপারে কোনো প্রকল্প আসেনি। যদি সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা পাই তাহলে অবশ্যই তা দ্রুত সময়ে করা হবে।’

পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে স্মৃতিফলক ও জাদুঘর নির্মাণের অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি আসলে কাগজ দেখে বলতে হবে। ওটা নিয়ে একটা মামলা চলছে। কিন্তু তার বর্তমান অবস্থা না দেখে বলা সম্ভব নয়।’

সিভয়েস/এসবি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়