Cvoice24.com

মিতু হত্যা  
বাবুল নির্দোষ হলে চাকরি থেকে অব্যাহতি কেন? 

প্রকাশিত: ১২:২০, ৫ জুন ২০১৮
বাবুল নির্দোষ হলে চাকরি থেকে অব্যাহতি কেন? 

ছবি : সিভয়েস

‘বাবুল আক্তার নির্দোষ হলে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিলেন কেন? হত্যাকান্ডের ঘটনায় অবশ্যই জড়িত সে। এগুলো বাবুলকে বাঁচানোর জন্য পুলিশের কারসাজি। মামলার আইও (তদন্তকারী কর্মকর্তা) পরিবর্তনের জন্য আমি আদালতে আবেদন করবো।’ ক্ষোভের সঙ্গে এই কথাগুলো বলেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের শ্বশুড় নিহত মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

সিভয়েসের সাথে আলাপকালে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ বলেন, আমার মেয়ে মিতু হত্যাকাণ্ডের দুইবছর হলেও এখনো আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ঘটনার পর দীর্ঘ আলোচনার শীর্ষে থাকা সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার পুলিশের চাকরি ছেড়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করে কিভাবে? যদি বাবুল মিতু হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত না থাকে, তাহলে হঠাৎ পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি নিলেন কেন? 

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মামলার বাদী বাবুল আক্তারই এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। তিনটি বিষয়ে তা স্পষ্ট হয়েছে। প্রথমত: বাবুল আক্তারকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করার পর চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে। দ্বিতীয়ত: বাবুল আক্তার সেই বরখাস্তের আদেশটি লিখিতভাবে মেনে নিয়েছে। তৃতীয়ত: তাকে যদি জোর করে সেখানে স্বাক্ষর নেয়া হয়, তাহলে বাবুল আক্তার আদালতের আশ্রয় নিতে পারতো। সেই সুযোগও ছিল। কিন্তু সে আদালতে যায়নি। সে সবকিছু মেনে নিয়েছে। এই তিনটি বিষয়ের মাধ্যমে পরিষ্কার হয়েছে, এই হত্যার সঙ্গে বাবুল আক্তার জড়িত। বিষয়টি পুলিশও জানে। পুলিশের উচিত তাকে গ্রেফতার করা। এখন তাদের সঙ্গে কোনও সমঝোতা হয়েছে কিনা তা আমি বলতে পারবো না।’

তিনি আরো বলেন, ‘দুই বছরেও মামলার মূল আসামি কালু ও মুসাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। তারা কোথায়? পুলিশের সঙ্গে বাবুলের যা ঘটেছে, তাতে আমাদের অনেক কিছুই সন্দেহ হচ্ছে। এসব ঘটনা স্পষ্ট। বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করা হোক। তাহলে সব পরিষ্কার হবে। সে (বাবুল) দোষী কি দোষী নয়, সেটাও পুলিশের বলা উচিত। যদি সে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত না হয়, তাহলে তার চাকরি পুলিশ ফেরত দিক। সে স্বাভাবিকভাবে চাকরি করুক। আর যদি দোষী হয়, তাহলে তাকে গ্রেফতার করা হোক।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, স্ত্রী হত্যার পর সাবেক এসপি বাবুল আক্তার চাকরি ছাড়ার পর অনেক প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে জনমনে। এছাড়াও বাবুল বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করছেন সেটি সাধারণ মানুষের কাছে আরো প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ মাহমুদা খানম মিতু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা বড়ভাইয়ের নাম এখনো প্রকাশ করেনি পুলিশ। এছাড়া এসপি বাবুলকে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি নিয়েও ধোঁয়াশা কাটেনি এখন পর্যন্ত।

এ ব্যাপারে মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চট্টগ্রাম নগর ডিবির অতিরিক্ত উপ কমিশনার  মো. কামরুজ্জামান বলেন, বাবুল আক্তারের বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না। সে কেন চাকরি থেকে অব্যাহতি নিল। অথবা মিতু হত্যার সাথে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়টিও তদন্ত চলছে। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল হলেই আপনারা সব জানতে পারবেন।

জানা গেছে, মিতু হত্যায় মুছাকে প্রধান আসামি করে মুছার ভাই সাইদুর, মনির, শাহজাহান, ওয়াসিম, নবী, আনোয়ার, ও কালুর বিরুদ্ধে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের প্রক্রিয়া চলছে।

প্রসঙ্গত: গত বছর ৫ জুন সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ও আর নিজাম রোডস্থ বাসা থেকে শিশুপুত্র মাহিরকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাচ্ছিলেন মাহমুদা খানম মিতু। মাঝ রাস্তায় ওঁত পেতে থাকা ঘাতকেরা তাকে ছুরিকাঘাত করে ও সবশেষে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। নির্বিঘ্নে অপারেশন চালাতে গোপন রাখা হয় মিতুর পরিচয়। খুনিদের কাছে ‘জঙ্গিনেত্রী’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় মিতুকে। খুনের আগে ভাড়াটে ব্যক্তিদের নিয়ে পরিকল্পনা বৈঠকও করে মুছা। 

প্রথমে মিতুকে সামনে ও পেছন থেকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে নবী। এরপর গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ওয়াসিম ও মুছা। খুনের সময় ঘটনাস্থলে রেকি করে আনোয়ার। এ সময় ব্যাকআপ ফোর্স হিসেবে ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিল রাশেদ, শাহজাহান ও কালু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। প্রথমে জঙ্গিরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করেছিল পুলিশ। ঘটনার তিনদিন পর ৮ জুন হাটহাজারী থেকে আবু নছর গুন্নু নামে মাজারের এক খাদেমকে এ মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। ১১ জুন নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় শাহজামান রবিন নামে অপর একজনকে। মোবাইল ট্র্যাকিং ও ভিডিও ফুটেজে ঘটনাস্থলে তাদের থাকার তথ্য পেয়েই গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ জানায়। কিন্তু ঘটনার ২১ দিন পর ওয়াসিম ও আনোয়ার নামে কিলিং মিশনের দুই সদস্য গ্রেফতার হওয়ার পর মিতুর কিলিং মিশনে অংশ নেয়া সবার নাম প্রকাশ পায়। 

গ্রেফতারকৃত আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় সাতজন। এরা হলো মুছা, ওয়াসিম, নবী, আনোয়ার, রাশেদ, শাহজাহান ও কালু। এছাড়া অস্ত্র সরবরাহ করে ভোলা। এদের মধ্যে ওয়াসিম, আনোয়ার, ভোলা ও শাহজাহানকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেছে পুলিশ। 

এছাড়াও মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে দেয়ায় মুছার ভাই সাইদুল ও অস্ত্র জমা রাখায় ঠেলাগাড়ি চালক মনিরকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। নবী ও রাশেদ কথিত বন্দুক যুদ্ধে মারা গেছে। মুছার কোনো খোঁজ নেই। তাকে নিয়ে পুলিশ ও তার স্বজনদের মধ্যে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রয়েছে। বাকি রয়েছে কালু। তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এমন দাবি পুলিশ কিংবা তার পরিবার কোনো পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি।

সিভয়েস/এসএ/এমইউ


 

আবদুস সাত্তার 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়