Cvoice24.com

বর্জ্যের ভাগাড় সাতকানিয়া পৌরসভা

প্রকাশিত: ০৮:৫১, ১ জুলাই ২০১৮
বর্জ্যের ভাগাড় সাতকানিয়া পৌরসভা

সাতকানিয়া সরকারি কলেজ রােডে পৌরসভার স্তুুপ করা ময়লার ভাগাড়। ছবি: সিভয়েস

সাতকানিয়া পৌরসভা গঠনের ১৮ বছর পার হলেও ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা ঠিক করতে পারেনি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। দুর্গন্ধে দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছে পৌরবাসী। আবর্জনা ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশে যত্র তত্র খোলা জায়গায়।  

পৌরশহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ময়লা-আর্বজনা এনে স্তুপ করে ফেলা হয় সাতকানিয়া কলেজ রোড চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের ডাক বাংলোর সামনে ফসলী একটি জমিতে। ময়লা আবর্জনার স্তুপ করে ফেলার কারণে মশার উপদ্রবের পাশাপাশি বাতাসে ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধে নাকাল পৌরবাসী। অন্যদিকে স্তুপকৃত ময়লা পোড়ানোর সৃষ্ট ধোঁয়ার ফলে শিশুরা মারাত্মক শ্বাসকষ্টের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।  

পৌরসভার এ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী সহ হাজার হাজার মানুষের চলাচল। সাতকানিয়া মডেল হাই স্কুল, সাতকানিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ে যেতে আসতে নাক চেপে ধরতে হয়। দুর্গন্ধে বমি চলে আসলেও বাধ্য হয়েই এ রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে দৃশ্যত নানা উদ্যোগ নিলেও পৌর কর্তৃপক্ষের এমন কাজে অসন্তোষ পৌরবাসী। বর্জ্য সংগ্রহে অব্যবস্থাপনার দাবি স্থানীয় এলাকাবাসীর।

পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ভোর ৬টা থেকে ৯টার মধ্যে পৌর শহরের বিভিন্ন রাস্তা পরিষ্কার করে। কিন্তু ঘন্টা না যেতেই রাস্তাজুড়ে ফেলা হয় স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লা আবর্জনা। ময়লার স্তুপের কয়েক গজ সামনেই জেলা পরিষদের ডাক বাংলো। জনপ্রতিনিধি, উচ্চ পর্যায়ের সরকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ডাক বাংলোতে নিত্য আনাগোনা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে সবাই নীরব।  

এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এসব বর্জ্য অপসারনের দাবি জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। গতকাল শনিবার পৌরসভার কলেজ রোডে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশে একটি খালি জমিতে ময়লা আবর্জনা স্তুপ করে রেখেছে পৌর পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।  আবর্জনার স্তুপ বেশি হয়ে গেলে আবর্জনাগুলো রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দুর্গন্ধে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এ জেড এম হেলাল চৌধুরী জানান, পৌরসভার নিজস্ব ডাম্পিং স্টেশন থাকার প্রয়োজন ছিল। নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন সুযোগ না রেখে এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ময়লা-আবর্জনার স্তুপ করা উচিত হয়নি। সরকারি ডাক বাংলো, পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা, মকবুল সিরাজী শপিং কমপ্লেক্সসহ এমন একটি সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করেছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।

তিনি অভিযোগ করে জানান, আশ্চর্যের বিষয় হল সাতকানিয়া উপজেলার যিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন তিনি সবসময় সরকারি ডাক বাংলোতে অবস্থান করেন। ডাক বাংলো থেকে প্রতিদিন বের হয়ে তার চোখে এসব দৃশ্য ধরা পড়লেও অজ্ঞাত কারণে তিনিও নীরব ভূমিকা পালন করছেন।  

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। বিষয়টা আমার নজরে এসেছে। পৌর মেয়রের সাথে এ ব্যাপারে দ্রুত যোগাযোগ করব।

সাতকানিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম জানান, সাতকানিয়া সরকারি কলেজ, সাতকানিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাতকানিয়া মডেল হাইস্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর এ রাস্তা দিয়েই নিয়মিত যাতায়াত। এছাড়া হাট-বাজার, অফিস-আদালতসহ নানা কর্মব্যস্ততায় স্থানীয় এলাকাবাসীর একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ সাতকানিয়া সরকারী কলেজ সড়ক।

পৌর আওয়ামীলীগ নেতা ও স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, সাতকানিয়া সরকারী কলেজ রোডটি যেহেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক সেহেতু পৌরসভা কর্তৃপক্ষের উচিত এসব আবর্জনা অন্যত্র ফেলার ব্যবস্থা করা। তিনি আরো জানান, পৌরসভা গঠনের আগে এসব ময়লা আবর্জনা ফেলা হত না।  

সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়েরের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্জ্য থেকে সার উৎপাদনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ২ একর জায়গা প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। জায়গা নির্ধারণ করে দ্রুত ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।

পৌরবাসীর এ সমস্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এসব আবর্জনা অন্যত্র ফেলার জন্য জায়গার  খোঁজ করছি। পৌরসদরে ২ একর জায়গা পাওয়া খুব কঠিন বিষয়। ইতোমধ্যে আমরা পৌরসদরের ২নং ওয়ার্ড সামিয়ার পাড়া, ৪নং ওয়ার্ড ছমদর পাড়া এবং ৭নং ওয়ার্ড ভোয়ালিয়া পাড়ায় কিছু সরকারি খাস জমি চিহ্নিত করেছি। সহকারি কমিশনার (ভূমির) সাথে আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, বর্জ্য অপসারণ মূলত পৌরসভার দায়িত্ব। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ যদি প্রশাসনিক কোন সহযোগিতা চায় প্রশাসন সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছে। ডাম্পিং স্টেশনের জন্য যদি পৌর কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহনের জন্য চায় তবে আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।  

-সিভয়েস/এসএইচ/কেএম

সাতকানিয়া প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়