Cvoice24.com

ছয় ব্যাটারের ‘ডাক’, ১০৩ রানে অলআউট বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ১৭ জুন ২০২২
ছয় ব্যাটারের ‘ডাক’, ১০৩ রানে অলআউট বাংলাদেশ

ছবি-সংগৃহিত

অ্যান্টিগা টেস্টে ৪৫ রানে ছয় উইকেট হারানো সফরকারী বাংলাদেশ শেষপর্যন্ত ১০৩ রানে অলআউট হয়েছে। শুরুতে তামিম, মাঝে সাকিব ছাড়া বাকিরা ছিলেন যাওয়া আসার মিছিলে। জয়, মুমিনুল, শান্ত, সোহান, মুস্তাফিজ ও খালেদরা ‘ডাক’ মেরেছেন। টিকে থাকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন লিটন-মিরাজ। 

পরে ব্যাট করতে নেমে  দিন শেষে দুই উইকেটে ৯৫ রান তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র‍্যাথওয়েট ৪২ এবং এনক্রুমার বোনার ১২ রান নিয়ে শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন। 

টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই আউট হন মাহমুদুল হাসান জয়। রোচের বলে স্লিপে বনারের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ৭ টেস্টের ক্যারিয়ারে এর মধ্যেই পাঁচ বার শূন্য রানে আউট। গোল্ডেন ডাক দু’বার।

রোচের পরের ওভারের প্রথম বলেই বোল্ড শান্ত। ৫ বলে শূন্য শান্ত। এ নিয়ে টানা ৫ ইনিংসে দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে আউট হলেন তিনি। আরেক প্রান্তে তামিম ইকবাল তিনটি বাউন্ডারিতে চাপ সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। তবে আরেকটি ধাক্কা হয়ে আসে মুমিনুলের আউট। এবারের সিলসের বলে শক্ত হাতে ডিফেন্স করে স্লিপে ধরা পড়েন মুমিনুল। অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর প্রথম ইনিংসে রানে ফেরা হলো না তার। দুঃসময়ের চক্রে থাকা মুমিনুল টানা ৮ ইনিংসে আউট হলেন দু’অঙ্ক ছোঁয়ার আগের।

১৯ রান করে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঁচ হাজার টেস্ট রান পূর্ণ করেন তামিম। দলের রানও তখন ১৯। পরে লিটন দাস এসে একটু ভরসা দেন দলকে। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ২৬।

দলীয় ৪১ রানের মাথায় দুই উইকেটের পতন। জোশেপের বলে সিলভার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম ইকবাল। ৪৩ বলে চারটি চারে ২৯ রান করেন তিনি। পরের ওভারে মায়ার্সের বলে আউট লিটন। ৩৩ বলে দুই চারে লিটনের রান ১২।

দলীয় ৪৫ রানে ষষ্ঠ উইকেটের পতন। মায়ার্সের বলে এলবির শিকার নুরুল হাসান সোহান। ২ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি কিপার ব্যাটার।

এমন অবস্থায় দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দু’জনে অবিচ্ছিন্ন থাকে লাঞ্চ পর্যন্ত। লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই আউট মেহেদী হাসান মিরাজ। ২২ বলে দুই রান করা মিরাজ সিলসের বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে সিলভার হাতে। ভাঙে ম্যাচের সর্বোচ্চ রানের (৩২) জুটি। সাকিব ছিলেন তখনো অপ্রতিরোধ্য। একপর্যায়ে তিনি তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৮তম ফিফটি। তারপরই ছন্দপতন। ৬৭ বলে সর্বোচ্চ ৫১ রান করে ফেরেন সাকিব। এর আগে ফেরেন মোস্তাফিজ। তিনিও শূন্য। শেষ উইকেট পতন খালেদকে দিয়ে। তিনিও শূন্য রানে ফেরেন। বাংলাদেশের ইনিংসে শূন্য রানের ব্যাটারের সংখ্যা ৬।

বল হাতে সিলস ও জোশেপ নেন তিনটি করে উইকেট। রোচ ও মায়ার্স নেন দু’টি করে উইকেট।

পরে ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের দাপট ও পিচের মান বিচার করে খেলে ধৈর্যের চরম পরীক্ষা দিয়েছেন স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। একই সঙ্গে সফরকারী ফিল্ডিংয়েও সেই পুরোনো রোগ ফুটে উঠেছে। হাত গলিয়ে বের হয়ে গেছে একাধিক ক্যাচ। না হলে দিনের খেলা শেষে সুবিধাজনক অবস্থানেই থাকতে পারত বাংলাদেশ দল। মুমিনুল হক, লিটন দাসদের জন্য মুস্তাফিজ, এবাদতের নিয়ন্ত্রিত বোলিং রঙ হারিয়েছে, ধূসর হয়েছে।

উইন্ডিজের ইনিংসের তৃতীয় ও মুস্তাফিজের দ্বিতীয় ওভারের একটি বল লেগে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন ব্র্যাথওয়েট। ব্যাটে-বলে ঠিকমত সংযোগ হয়নি। ক্যাচ যায় লেগ গালিতে, কিন্তু মুমিনুল ধরতে ব্যর্থ হন। শূন্য রানে জীবন পান উইন্ডিজ অধিনায়ক। পরে ইনিংসের ২৮তম ওভারের মুস্তাফিকের করা চতুর্থ বলে ফিরতে পারতেন রেমন রেইফার। প্রথম স্লিপে এবার ক্যাচ মিস করেন লিটন। যদিও একটু কঠিন ছিল। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও ধরতে পারেননি ক্যাচ। ৪ রানে জীবন পান তিনি। 

ওই ওভারের পরের বলেই দ্বিতীয় জীবন পান ব্র্যাথওয়েট। তখন তার রান ১৫। এবারও ক্যাচ হাতছাড়া করেন লিটন। লেগ সাইডের বল ফ্লিক করার চেষ্টা করছিলেন ব্র্যাথওয়েট, বল যায় গালিতে। লিটন বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়েও তালুবন্দি করতে পারেননি। 

যে কারণে মুস্তাফিজ-এবাদতদের আগুন ঝড়া বোলিংয়ের পরও কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৫ ওভার ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে মাত্র ১৫ রান তুলে চা বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা। 

দিনের তৃতীয় ও শেষ সেশনে প্রায় দেড় বছর টেস্টে ফেরা মুস্তাফিজের হাত ধরেই আসে প্রথম সাফল্য। ইনিংসের ২৬তম ওভারে ক্যাম্পবেলকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান কাটার মাস্টার। আউটসাইড অফের বল ডিফেন্স করেছিলেন, কিন্তু ইনসাইড এজ হন তিনি। বল সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তার আগেই বেল পড়ে যায়। ৭২ বলে ১ চারে ২৪ রান করেন এই ওপেনার।

খানিক পর দলকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন এবাদত। ইনিংসের ৩৪তম ওভারে এবাদতের করা স্টাম্প বরাবর ফুলার লেন্থের বল রেইফার আড়াআড়ি শট খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল ব্যাটের কানা ছুঁয়ে যায় উইকেটের পেছনে। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ ধরেন নুরুল হাসান সোহান। ২৬ বলে ১১ রান করেন রেইফার। ভাঙে ২৮ রানের জুটি।

প্রথম দিনের খেলা শেষে ২ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ৯৫ রান তুলেছে উইন্ডিজ। যেখানে হাতে ৮ উইকেট রেখে বাংলাদেশের থেকে আর ৮ রানে পিছিয়ে আছে স্বাগতিক শিবির। অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র‍্যাথওয়েট ১৪৯ বলে ৪২ এবং এনক্রুমার বোনার ৪৩ বলে ১২ রান নিয়ে শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন।

বল হাতে সফরকারীদের হয়ে মুস্তাফিজ ও এবাদত ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়