Cvoice24.com

নম্বর-প্রশংসাপত্রের জন্য টাকা আদায়ের অভিযোগ মোহরা এসকেকিউ গার্লস স্কুল ও কলেজের বিরুদ্ধে

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:২২, ২১ জানুয়ারি ২০২৩
নম্বর-প্রশংসাপত্রের জন্য টাকা আদায়ের অভিযোগ মোহরা এসকেকিউ গার্লস স্কুল ও কলেজের বিরুদ্ধে

চট্টগ্রাম নগরের মোহরা ছায়েরা খাতুন কাদেরীয়া (এস কে কিউ) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নম্বরপত্র ও প্রশংসাপত্র তুলতে জোরপূর্বক অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে দুই ঘন্টা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে টাকা না নেওয়ার সিদ্ধান্তে নম্বর ও প্রশংসাপত্র দেওয়ার ঘোষণা দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। 

যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি— টাকা আদায়ের বিষয়টি সত্য নয়। তবে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে কলেজ শাখায় রেখে দেওয়ার কৌশল হিসেবে টাকা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো টাকা আদায় করা হয়নি। স্কুল হিসেবে সুনাম থাকলেও কলেজ শাখা সেভাবে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করতে পারছে না স্কুল থেকে কলেজে উন্নীত হওয়া এসকেকিউ হাই স্কুল ও কলেজটি। 

জানা যায়, এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নম্বর ও প্রশংসাপত্র তুলতে ২ হাজার ৪০০ টাকা দিতে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ। না হয় একই প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখায় ভর্তি হতে বলা হয়। আর ভর্তি না হলে অথবা টাকা না দিলে এসব কাগজ দিবে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকজ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক প্রতিবাদ জানালে স্কুলের শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এ ঘটনায় স্কুলের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা স্কুলের সামনের ব্যস্ততম ওয়াসা সড়কটি প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। 

সোহেল নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘আমাদের যে বাচ্চারা এবার এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হবে তাদেরকে টেস্টিমোনিয়াল দিচ্ছে না স্কুলের টিচাররা। সেটার জন্য ২ হাজার ৪০০ টাকা দাবি করেছে। তারা বলছে হয় এই স্কুলেই ভর্তি হতে হবে নয় টাকা দিতে হবে। আবার কারও কারও থেকে আরও কম টাকা চাওয়া হয়েছে। এরপর বাচ্চারা আজকে আন্দোলন করলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে আন্দোলনের মুখে আগামীকাল ২টায় টাকা ছাড়া নম্বর ও প্রশংসাপত্র দেওয়া হবে বলেছেন অধ্যক্ষ।’  

আনো্য়ার নামের আরেক অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়েটা এসএসসি পাস করেছে। গোল্ডেন এ প্লাস পাইছে। স্কুল থেকে প্রথমে টেস্টিমোনিয়ালের জন্য ২৪০০ টাকা চাইছে। পরে ৬০০ টাকা দিতে বলে। বলছে এই স্কুলেই ভর্তি হইতে হবে নইলে টাকা দিতে হবে। এজন্য আজকে অনেক আন্দোলন হইছে। আন্দোলনের পরে আর কোনো টাকা নেয় নাই। বলছে টাকা ছাড়া কালকে ২টা বাজে টেস্টিমোনিয়াল দিয়ে দিবে।’ 

আরেক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট বা টেস্টিমোনিয়াল নিতে কোনো ফি লাগার কথা না। কিন্তু মোহরা এস কে কিউ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল তাদের স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করছে। যা কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য না। কারণ আমার বাচ্চাকে আমি কোথায় পড়াবো সেটা আমার সিদ্ধান্ত। এখান থেকে পাস করেছে এখন আমি অন্য কলেজে ভর্তি করাবো। কিন্তু তারা (স্কুল কর্তৃপক্ষ) বলছে হয় ভর্তি হইতে হবে নয় টাকা দিতে হবে।’

স্কুলের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা স্কুলের সামনের ব্যস্ততম ওয়াসা সড়কটি প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। 

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোহরা ছায়েরা খাতুন কাদেরীয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ হাসিনা মমতাজ সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের স্কুল এবং কলেজ একসাথে। তাই আমরা বাচ্চাদের বলি অন্য কোথাও না গিয়ে এইখানেই ভর্তি হয়ে যেতে। আমি প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে বাচ্চাগুলোকে রাখার জন্য একটা কৌশল অবলম্বন করেছি। কিন্তু কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। বা কখনো নিবো না। আমার এখানে সিসি ক্যামেরা সব আছে। আমি কারও কাছে এক টাকাও নেইনি। আমি আমার প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কলেজে শিক্ষার্থী বাড়ানোর জন্য বলেছি। এটা আমি সবসময় করি। কিন্তু টাকা নিয়েছি বা নিবো এটা আমি করবো না।’

এমন কৌশল অবলম্বন করা কি সঠিক হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট দিয়ে দিয়েছি। ৪০ জনের মতো নিয়ে গেছে। কারও থেকে টাকা নেইনি। আমি ওদেরকে বলেছি, যারা যারা সরকারি কলেজে চান্স পেয়েছো বা সাইন্স নিবা তারা চলে যাও। কিন্তু যারা ভালো সরকারি কলেজ পায়নি তারা যেন এখানেই ভর্তি হয়। আমাদের তো মেয়েদের কলেজ। তাদের থেকে একটা টাকাও নেই না। তাহলে আমাদের কলেজটার সুনাম বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে একটা টাকাও নেয়নি। শুধুমাত্র কলেজে শিক্ষার্থী বাড়ানোর জন্য একটা কৌশল অবলম্বন করেছি। তবে কারও থেকে টাকা নেয়নি।’

নম্বরপত্র-প্রশংসাপত্র আটকে রেখে কলেজে ভর্তি করাতে পারে কিনা— এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক জাহেদুল হক সিভয়েসকে বলেন, ‘টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। ট্রান্সক্রিপ্ট আটকে ভর্তি আটকাতে পারবে না। কারণ শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আবেদন করেছে। অনলাইনে যে যেখানে চান্স পেয়েছে সে সেই কলেজে ভর্তি হবে। জোরপূর্বক ভর্তি করানোর কোনো সুযোগ নেই। কোনো স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ট্রান্সক্রিপ্ট বা টেস্টিমোনিয়াল নিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এসকেকিউ’র বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবো।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়