Cvoice24.com

মহেশখালীতে বন্ধ হচ্ছে না পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ

মহেশখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:৪৬, ৫ জুন ২০২৩
মহেশখালীতে বন্ধ হচ্ছে না পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ

পাহাড়ি দ্বীপ বললেই চলে আসে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার কথা। বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেষেই এই দ্বীপটি গড়ে উঠেছে। এখানে সোনাদিয়া, ধলঘাটা ও মাতারবাড়িসহ আরো কয়েকটি ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। দ্বীপজুড়েই রয়েছে নানান জীববৈচিত্র্য, পশু-পাখি, পাহাড়ী-বন, বন্যপ্রাণী, প্যারাবন, খাল, বিল, পুকুর-নদী, জলাশয় ইত্যাদি।

পরিবেশের উপাদান সমৃদ্ধ দ্বীপটিতে নিয়মিত চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী নানান কাজের প্রতিযোগিতা। প্রকাশ্যে এসব কাজ চললেও পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা নেই সংশ্লিষ্টদের। মাঝেমধ্যে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করে এবং বনবিভাগ কয়েকটি মামলা দায়ের করেই নিজেদের দায় শেষ করেন। এরপর ফের একই অবস্থা, যেই লাউ সেই কদু। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- পাহাড় কাটা, বনের গাছ কাটা, বন্যপ্রাণী শিকার, প্যারাবন নিধন, ঝাউগাছ নিধন, নদী দখল, পুকুর-জলাশয়-খাল ভরাট, বালি উত্তোলন, কৃষি জমির ধরন পরিবর্তন সহ পরিবেশ বিনষ্টকারী কাজগুলো জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালীরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নিয়মিত করে যাচ্ছে। কিন্তু সেসব কাজ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। 

স্থানীয়রা জানান- প্রতিদিন রাতের অন্ধকারে স্কেভেটর দিয়ে উপজেলার হোয়ানক, কালারমারছড়া, বড়মহেশখালী, শাপলাপুর এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির কাজ চলছে হরদম। আর এসব মাটি পরিবহনের কাজ করা হয় প্রায় অর্ধশতাধিক ডাম্পার দিয়ে। যেসব গাড়ি ও চালকদের কোন লাইসেন্স নাই। তারা আরো জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে দ্বীপকে রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধের বাইরে সৃজন করা হয়েছিল বিশাল আকৃতির প্যারাবন। সেইসব প্যারাবন কেটে মাছ ও লবনের প্রজেক্ট তৈরী করে দখলে রেখেছে প্রভাবশালীরা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন- কিছুদিন আগে বগাচতর, এরশাদের ঘোনা, শাহাব উদ্দীনের ঘোনা ও সিকদারের ঘোনায় অভিযান চালিয়ে বাঁধ কেটে দেয় বনবিভাগের লোকজন। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই সেসব বাঁধ পুনরায় দখলে নেয় প্রভাবশালীরা। 

তবে বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে- চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই সরকারি বনভূমিতে অবৈধ প্রবেশ করে গাছ কর্তন, সরকারি কাজে বাঁধাদান, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ক্ষয়ক্ষতি সাধন ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ তুলে তিনটি মামলা দায়ের করেছে সংশ্লিষ্ট বনবিট কর্মকর্তা। ওই তিন মামলায় মোহাম্মদ সিকদার, মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন ও এরশাদ উল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ৬০ জনের নাম উল্লেখসহ শতাধিককে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২২ কোটি ৬১ লাখ ৭৭ হাজার ৯২০ টাকা। 

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- যে তিনটি স্থানে প্যারাবন কেটে ঘের নির্মাণের অভিযোগে মামলা হয়েছে সেই তিনটি ঘেরগুলো পুনরায় দখলে নিয়ে মাছ চাষের কার্যক্রম শুরু করেছে স্বয়ং মামলার আসামিরাই। 

তবে এই বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি মহেশখালী বনবিভাগের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একাধিকবার ফোন দিয়েও বক্তব্য নেয়া যায়নি বন কর্মকর্তা জুলফিকার আলীর। 

আরও জানা গেছে- পাহাড়ের মাটি ও খালের বালি পরিবহনের কাজে ব্যবহারের জন্য দুটি ডাম্পার কিনেছে ইউএনও'র ব্যক্তিগত গাড়ি চালক আবু বক্কর নামের এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডাম্পার গাড়ির সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে। 

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের নির্বাহী সদস্য গিয়াস উদ্দীন বলেন, ইউএনও মহেশখালীতে এসে পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ করছে এবং তিনিই মূলত বালি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ ইয়াসিন জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ব্যক্তিগত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এর কোন সত্যতা নেই। 

এদিকে শাপলাপুর পাহাড়ী অঞ্চলে বনায়নের জায়গা পরিষ্কারের নামে পাহাড়ে আগুন লাগিয়েছে বনবিভাগের লোকজন। এতে বড় গাছ, পশুপাখির আবাসস্থল, জীববৈচিত্র্যসহ পানের বরজ পুড়ে যায়। আর আগুনের ভয়ে লোকালয়ে চলে আসে বনের বানর ও বিভিন্ন পশুপাখি। 

অপরদিকে সোনাদিয়া দ্বীপটিও রক্ষা পায়নি পরিবেশ বিধ্বংসী কাজের হাত থেকে। সেখানে অবৈধ কটেজ নির্মাণ করে পর্যটন ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে কতিপয় ব্যক্তি। অথচ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসব কটেজ উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর দুই বার পত্র প্রেরণ করা হলেও, তা উচ্ছেদ হয়নি এখনো। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মহেশখালী শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লোকজন কার্যকর ভূমিকা না রাখলে মহেশখালীর পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ বন্ধ হবে না। এখানে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব অবহেলা রয়েছে। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়