Cvoice24.com

লালদীঘির পিচঢালা সড়কে ১০০ খুঁটির ওপর প্রস্তুত ‘বলীযুদ্ধের’ মঞ্চ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:১৭, ২৪ এপ্রিল ২০২২
লালদীঘির পিচঢালা সড়কে ১০০ খুঁটির ওপর প্রস্তুত ‘বলীযুদ্ধের’ মঞ্চ

পেরেক-হাতুড়ির মিলনে একটু একটু করে গড়ে উঠছে বলীখেলার মঞ্চ! ছবি : প্রতিবেদক।

আট ফুট লম্বার বড় বড় বাঁশের খুঁটি। নিচে পিচঢালা রাস্তা হওয়ায় বিশেষভাবে স্থাপন করা হয়েছে সেগুলো। সংখ্যায় ‘ওরা’ প্রায় ১০০টি। এরপর বাঁশগুলোর আগায় লাগানো হচ্ছে কাঠের তক্তা। পেরেক-হাতুড়ির মিলনে একটু একটু করে গড়ে উঠছে বলীখেলার মঞ্চ!

ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলার ‘যুদ্ধের’ জন্য এভাবেই স্থাপন করা হচ্ছে অস্থায়ী রিং। লালদীঘি মাঠের কর্নারে চৌরাস্তার মোড়ে শনিবার দুপুর থেকেই শুরু হয়েছে ২০ বাই ২০ হাতের এই মঞ্চ তৈরির কাজ। আয়োজকরা জানিয়েছেন— আজ রোববার বিকেলের মধ্যেই পুরোপুরি গড়ে উঠবে রিং–টি। 

আজ রোববার দুপুরে লালদীঘি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ১০ জনের শ্রমিকদল মঞ্চ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর মধ্যেই ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাঁশের খুটিতে তক্তা লাগানোর পর তার ওপর ঢেলে দেওয়া হবে বালির আস্তরণ। সেই বালিতেই লড়বেন অন্তত ১০০ জন বলী।

বলী খেলা অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল সোমবার (১২ বৈশাখ)। তবে আজ থেকে লালদীঘিকে ঘিরে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে তিন দিনের মেলা। এবার ঐতিহ্যবাহী বলী খেলার ১১৩তম আসর।

বলীখেলার মঞ্চ তৈরির কাজ করা শ্রমিকদের একজন মোহাম্মদ হুমায়ুন। তিনি বলেন, ‘আমরা ১০জন শ্রমিক টানা কাজ করে যাচ্ছি। অন্তত ১০০টি বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বলীখেলার মঞ্চ। আশা করছি বিকেলের মধ্যে পুরোপুরি কাজ শেষ করতে পারব।’ 

বলী খেলা ও মেলা কমিটির সভাপতি স্থানীয় কাউন্সিলর জহরলাল হাজারীও বললেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘বলীখেলার মঞ্চ তৈরির কাজ একেবারে শেষের দিকে। আজকের মধ্যে মঞ্চ তৈরি হয়ে যাবে। সুন্দরভাবে মেলা ও বলী খেলা শেষ করতে পারব বলে আমরা আশাবাদী।’

লালদীঘিকে ঘিরে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে তিন দিনের মেলা। ছবি : মনজুর মোরশেদ।

বাংলা-বিহার-ওডিশার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর এ দেশে ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়। একসময় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়। শুরু হয় স্বদেশি আন্দোলন। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং একই সঙ্গে বাঙালি যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর প্রেরণা থেকেই চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর বলীখেলা বা কুস্তি প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করেন। 

১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ লালদীঘি ময়দানে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি। ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামী-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন। সেই থেকে প্রতি বছরের বৈশাখ মাসের ১২ তারিখ এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে গত দুই বছর করোনায় ছেদ পড়েছিল সেই চেনা দৃশ্যে। এবারও লালদীঘি মাঠ প্রস্তুত না হওয়ায় মেলা হওয়া নিয়ে শঙ্কা জেগেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত মাঠে নয়, হচ্ছে রাস্তায়।

সেজন্য মাঠে নয়, রাস্তায় স্থাপন করা হচ্ছে বলীখেলার মঞ্চ। নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী এই বলীখেলার এবারের আসরে কার হাতে উঠবে শিরোপা? 

জব্বরের বলীখেলার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন (২০১৯ সাল) কুমিল্লার শাহজালাল বলী। জব্বারের বলীখেলায় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন রামুর দিদার বলী। তিনি সর্বোচ্চ ১৩ বার বিজয়ী হয়েছেন। বর্তমানে দিদার বলী এ খেলা থেকে অবসরে আছেন। 

এখন দেখার বিষয়— পুরোনো কেউ? না নতুন কারও হাতে? সেটি দেখার জন্য অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে আরও একদিন। সোমবার সন্ধ্যা নামার মুখেই জানা যাবে কে হলো ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলার নতুন চ্যাম্পিয়ন!

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়