Cvoice24.com

‘হ্যালো পুলিশ স্টেশন’— তরুণদের সচেতন করতে ‘লেখক’ হলেন ওসি মহসীন

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ৩ মার্চ ২০২২
‘হ্যালো পুলিশ স্টেশন’— তরুণদের সচেতন করতে ‘লেখক’ হলেন ওসি মহসীন

তরুণদের সচেতন করতে ‘লেখক’ হলেন ওসি মহসীন।

বইয়ের মলাটে হলুদ রঙের ওপর আঁকা বাংলাদেশের মানচিত্র। মানচিত্রের ঠিক মাঝে এক পুলিশ কর্মকর্তার প্রতিকৃতি। কালো সানগ্লাস চোখে হাস্যজ্জল মুখে যেন তিনি বলছেন, ‘হ্যালো পুলিশ স্টেশন’। আর মলাট বন্দী বইয়ের প্রচ্ছদে স্থান করে নেওয়া সেই পুলিশ কর্মকতা হলেন মোহাম্মদ মহসীন। যিনি ‘ওসি মহসীন’ নামেই বেশ পরিচিত। তিনি কথার যাদুকর। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়ায় যার সচেতনতামূলক ভিডিও বার্তা। আর তাঁর কর্মকাণ্ডের খ্যাতি জনসাধারণের মুখে মুখে। তবে এবারের অমর একুশে বইমেলাতে তিনি উপস্থিত হয়েছেন ব্যতিক্রমী একটি চরিত্র নিয়ে। চট্টগ্রাম নগর দাপিয়ে বেড়ানো চৌকস এ পুলিশ কর্মকর্তার নতুন পরিচয় তিনি ‘হ্যালো পুলিশ স্টেশন’ বইয়ের লেখক। দীর্ঘ ২০ বছরের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বইটি লিখেছেন তিনি। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

‘অনেক অপরাধ আছে, যা না জেনেই সবাই করে ফেলে। আবার এমন কিছু অপরাধ আছে, যা মানুষ অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা করে না। কিন্তু করার পর কিংবা ধরা পড়ার পর হুঁশ ফেরে! এসব মানুষের জন্যই ওসি মহসীনের ‘হ্যালো পুলিশ স্টেশন’। সাধারণ মানুষের জন্যই, তাদেরকে সচেতন করার জন্যই তিনি লেখক হয়ে ওঠেছেন। অক্ষরবৃত্তের প্রকাশনায় বইটিতে ৪০টি বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন লেখক মহসীন।

‘১৪ বছরের কিশোরীর অদম্য প্রেমের গল্প’ নামের লেখায় অভিভাবকদেরও সচেতন করা এবং কিশোর বয়সের এমন কিছু অপরাধকে তুলে এনেছেন বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে। চোরাই মোবাইল কেনার কুফল নিয়ে লিখেছেন ‘কষ্টের অর্থে কেনা মোবাইলটাই যখন কষ্টের কারণ’। সাহায্যের নামে প্রতারণা, টিউশন মিডিয়ার নামে প্রতারণা, ফেসবুক ও বিকাশে প্রতারণার ফাঁদ চেনার উপায় যেমন এসেছে বইটিতে, তেমনি ফেনসিডিলের নামে মানুষ কী খাচ্ছে, কিশোরদের ‘ঘুঁটি’ বানিয়ে যেভাবে মাদকের কারবার চলছে, তা-ও এসেছে বইটিতে। প্রেমিকাকে জন্মদিনের উপহার দিতে গিয়ে প্রেমিকের চুরি করার ঘটনা নিয়ে ‘প্রেম যখন জেলে ঢোকায়’। ইভটিজিংয়ের বিষয়ে তরুণদের জন্য সচেতনতামূলক লেখা ‘মজার সুখে সাজার মুখে’। বন্ধুদের সঙ্গে ‘দুষ্টুমিই’ যে কাল হতে পারে অনেক সময় তাই নিয়ে লেখা ‘ভয় দেখানোর ভয়’। অন্যের নামে ফেববুক আইডি খোলা, ইনবক্সে অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে বিরক্ত করা ও ভুয়া সংবাদ শেয়ার করার পরিণাম কি হতে পারে তা নিয়েও লেখা ছিল বইটিতে। 

ভাইরাল হওয়ার নেশায় আর কিছু লাইক-কমেন্টের আশায় যারা যাচাই-বাছাই না করেই পোস্ট করেন, শেয়ার করেন তাদের পরিণতি নিয়ে ‘ভাইরাল হওয়ার ভাইরাস’ শিরোনামের লেখা রয়েছে বইটিতে। ‘শিকারে গিয়ে স্বীকারে’ নামের শিরোনামে লেখায় তুলে এনেছেন অনেকেই অবৈধ কাজে লেনদেন করে পাওনা আদায়ে পুলিশের কাছে যান। তারা যেভাবে বিপদে পড়েন। ‘বন্ধুত্বের ব্যবসায় বেহাত ২০ লাখ’, ‘নিষিদ্ধ প্রেমের অভিশপ্ত গল্প’, ‘ভালোবাসা তাকে ফতুর করেছে’, ‘সুখে থাকলে কি ভূতে কিলায়’, ‘ভাবিয়া করিও বিয়ে, করিয়া কাঁদিও না’, ‘বাবাকে নিয়ে টানাটানি’, ‘হায়রে বাবা! হায়রে ইয়াবা’, ‘ঝরে পড়া ফুলের গল্প’, ‘যে গল্পের শেষ নেই’, ‘হত্যা দিয়ে শুরু, আত্মহত্যা দিয়ে শেষ’, ‘দান করতে সাবধান’, ‘প্রকৌশলীর অপকৌশলে পরাস্ত বাবা’, ‘বাবাই যখন ধর্ষণ করান তার মেয়েকে’, ‘৯০ হাজার টাকার লোভে ৯ লাখ টাকা গচ্চা’।

এছাড়া বইটির একেবারে শেষে পুলিশকে ফাঁসাতে গিয়ে মাছ ব্যবসায়ীর ফেঁসে যাওয়ার ঘটনা ছিল। সামাজিক নানা অপরাধের চিত্র আর সচেতনতামূলক বার্তা নিয়েই ছিল বইয়ের প্রতিটি লেখা।

লেখক হবার গল্প প্রসঙ্গে মোহাম্মদ মহসীন সিভয়েসকে বলেন, ‘মানুষকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন সময় ফেসবুকে লেখালেখি করতাম। যাতে এসব ঘটনা থেকে অন্তত মানুষ প্রতারিত না হয় বা সচেতন হন। এসব সচেতনতামূলক ভিডিও বার্তা দেখে দেশ বিদেশের অনেক মানুষ উপকৃত হয়েছে। আসলে বই লিখবো এ রকম কোনো চিন্তাই করিনি। যখন দেখলাম এসব লেখা মানুষের উপকারে আসবে; বিশেষ করে তরুণদের। তখনই বই বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মূলত মানুষের চাহিদার প্রেক্ষিতে মানুষের চাওয়ার জন্যই আমি লেখক হতে চেষ্টা করেছি। বলা যায়, অনেকদিনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চেষ্টার ফল এই বই।’

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সত্যিকথা বলতে অক্ষরবৃত্তের সাহস পেয়েই বই বের করেছি। যদি বলেন বই বের করার সাহস কোথায় পেলাম তবে বলবো অক্ষরবৃত্ত দিয়েছে।’

লেখক হবার পিছনে অনুপ্রেরণা কার— এমন প্রশ্নে মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘আমি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কাজ করেছি। তারাই আমার লেখক হবার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। আমি সবসময় চাই তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করতে। তাদের সচেতন করতে। তারা সচেতন থাকলে অনেক অপরাধ হবে না এবং কেউ চাইলেও তাদের ভিকটিম করতে পারবে না। আর লেখক হওয়া কিন্তু সহজ কাজ না। লেখক হওয়া পুলিশিং থেকেও কঠিন।’

ওসি মহসীন না লেখক মহসীন কোন পরিচয় দিতে পছন্দ করেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি ওসি মহসীন হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করি। ওসি মহসীন হয়েই আমি মানুষের হৃদয়ে থাকতে চাই।’

প্রথম বই প্রকাশের পর সাড়া কেমন পাচ্ছেন এর জবাবে লেখক মহসীন বলেন, ‘আমি অভিভূত। এতটা প্রতিক্রিয়া, এতটা সাড়া পাবো তা আমার চিন্তার বাইরে ছিল। আমি যেহেতু একজন পুলিশ কর্মকর্তা আমার কাজ সাধারণ মানুষের সঙ্গে। মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যেই আমার এই লেখা। বলা যায়, এটাও এক ধরনের পুলিশিং।’

-সিভয়েস/এসআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়