Cvoice24.com

৮ বছরে পাহাড় খেকোদের ঘাড়ে পরিবেশের ৪৩ মামলা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৫১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
৮ বছরে পাহাড় খেকোদের ঘাড়ে পরিবেশের ৪৩ মামলা

৪০ বছর আগে চট্টগ্রামে পাহাড় ছিলো প্রায় ২০০টিরও অধিক। পরিবেশ ফোরামের তথ্যমতে তার ৬০ শতাংশই বিলুপ্ত। দুই যুগের বেশি সময় ধরে শহরাঞ্চলে ৬০ শতাংশ আর গ্রামাঞ্চলে ৪০ শতাংশ পাহাট কেটে সাবাড় করেছে পাহাড় খেকোরা। তবে তার বিপরীতে গত ৮ বছরে তাদের ঘাড়ে চেপেছে মাত্র ৪৩ মামলা। এরমধ্যে ২৭টি মামলা হয়েছে গত বছরের শুরু থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত। অন্যদিকে জরিমানা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি।

পাহাড় খেকোরা সতর্কতা, নোটিশ আর জরিমানার পাঠ চুকিয়ে পাহাড়ের বুক চিরে করেছেন আবাসিক এলাকা নতুবা বহুতল ভবন। এভাবে পাহাড় গিলে সাবাড় করলেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে গুটিকয়েককে। ফলে পাহাড় খেকোদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরকে ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধা’র কাজ দেওয়া হয়েছে। পাহাড় রক্ষণাবেক্ষণের সুস্পষ্ট কোন দায়িত্ব তাদের ঘাড়ে পড়েনি। পরিবেশ আইনের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগাচ্ছে পাহাড়খেকোরা।

পরিবশে অধিদপ্তরের তথ্যমতে, পাহাড় কাটার দায়ে পরিবেশ আদালত ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে গত আট বছরে মামলা হয়েছে ৪৩টি। তারমধ্যে গত দুই বছরেই মামলার পরিমাণ বেশি। এরমধ্যে ২০১৫ সালে ৪টি, ২০১৬ সালে ৩টি, ২০১৭ সালে ২টি, ২০১৮ সালে ৩টি, ২০১৯ সালে ৩টি, ২০২০ সালে ১টি, ২০২১ সালে ১০টি এবং চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৭টি মামলা করা হয়েছে পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে। আর জরিমানা করা হয়েছে মোট ৫ কোটি ৬৪ লাখ ৬৮ হাজার ২৫০ টাকা। 

অন্যদিকে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে ৩টি অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয় ১১ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে ১১টি অভিযানে জরিমানা করা হয় ১৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে ৯টি অভিযানে ৭ লাখ ৬৫ হাজার ২৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। পরের বছর ২০১৯ সালে ২০টি অভিযানে জরিমানা করা হয় ৪৪ লাখ ৬ হাজার ৩৬০ টাকা। ২০২০ সালে ৯৫টি অভিযানে জরিমানা করা হয় ২ কোটি ৮২ লাখ ৯৫ হাজার ৬৪০ টাকা। ২০২১ সালে ১২৩টি অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয় ১ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার ৪০০ টাকা এবং চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৬টি অভিযানে জরিমানা আরোপ করা হয় ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৬০০ টাকা। 

সবশেষ ৮ বছরের রেকর্ড ভেঙে অনুমোদনের বাইরে প্রায় ৪ গুণের বেশি পাহাড় কাটার কারণে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৩ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। যদিও বিষয়টি এখন গড়িয়েছে আদালতে।
 
পরিবেশবিদরা বলছেন, পাহাড় কাটায় পরিবেশের যে পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তাতে এ ধরনের জরিমানা কেবল নামমাত্রই। এতে শাস্তির পরিবর্তে নামমাত্র জরিমানা পরিশোধ করে পাহাড় কাটায় দ্বিগুণ উৎসাহ পাচ্ছে ভূমিদস্যুরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের তথ্যমতে, ৪০ বছর আগে চট্টগ্রামে পাহাড় ছিল ২০০টি, যার ৬০ শতাংশই আজ বিলুপ্ত। এরমধ্যে গত দুই যুগে গ্রামে প্রায় ৪০ শতাংশ এবং শহরে ৬০ শতাংশ পাহাড় কেটে ধ্বংস করেছে। এছাড়া বেশির ভাগ পাহাড় কাটা হয়েছে নগরের পাহাড়তলী, খুলশী, বায়েজিদ, লালখান বাজার, মতিঝরনা, ষোলশহর ও ফয়’স লেক এলাকার। অথচ পরিবেশ আদালতে নামেমাত্র জরিমানায় পার পেয়ে যাচ্ছে এই পাহাড় খেকোরা। 

পরিবেশবিদ ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রিরা যখন বলে সরকারের হাত অনেক বড়। কিন্তু হাত কোথায় যায়? হাত তো কোনো কাজ করে না। যারা মন্ত্রী হয়, তাঁরা বাঁশ-কাঠ সবকিছু লুটপাট করার মানসিকতায় থাকে।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম নিয়ে হতাশার সুরে তিনি বলেন, ‘এখন পরিবেশ অধিদপ্তরে যারা আছেন তাঁরা হয় এই তাড়নার সাথে সম্পৃক্ত নয় অথবা তাঁরা নির্লিপ্ত। যার কারণে আজকে যে পাহাড় আছে কালকে তা নেই।’

এই পাহাড় কাটার শেষ কোথায়? শুধু জরিমানা জরিমানা খেলায় পাহাড়ের অস্তিত্ব কতটুকু টিকে থাকবে, তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে’ যোগ করেন এই পরিবেশ বিশেষজ্ঞ।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক সিভয়েসকে বলেন, ‘আইনে বলা আছে যদি কেউ পাহাড় কাটে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন রক্ষণাবেক্ষণ করবে জমির মালিক। পরিবেশ অধিদপ্তর তো জমির মালিক না। তবে আমাদের উপর আইন প্রয়োগ করার বিধান বলা আছে। আর কোথাও পাহাড় কাটার খবর পেলে অবশ্যই অ্যাকশন নিতে হবে। আমরা তাই করি। কিন্তু আমাদের আইনে পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড় সংরক্ষণ করবে এ ধরনের কোনো কথা বলা হয়নি।’
 
তিনি আরও বলেন, পাহাড় কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। যদি সেখানে পরিবেশের অনুমতি না থাকে। যেহেতু দণ্ডনীয় অপরাধ সেখানে ক্ষতির পরিমাণ বুঝে ক্ষতিপূরণ আরোপ করা হয়।’

সিভয়েস/এসআর/এএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়