লালবোটে নামতে গিয়ে ডুবে যাওয়া ব্যক্তি মগধরার মান্নান, ছবি দেখে শনাক্ত করলো মেয়ে
সিভয়েস প্রতিবেদক
সার্ভিস বোটের যাত্রীদের ছবি দেখে মান্নানকে শনাক্ত করেছে তার মেয়ে।
জাহাজের সারেং আব্দুল মান্নান (৬০) কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম আসেন চিকিৎসা করাতে। শহরের হালিশহর মেয়ের বাসায় ছিলেন তিনি। সকালে সন্দ্বীপ যাওয়ার উদ্দেশ্যে মেয়ের বাসা ছাড়েন মান্নান মাস্টার। কুমিরা ঘাটেপৌঁছানোর পর আর খোঁজ নেই তার। বন্ধ রয়েছে মুঠোফোনটিও। তিনি মগধরার এক নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
এদিকে বৈরি আবহাওয়ায় কুমিরা গুপ্তছড়া ঘাটের গুপ্তছড়া অংশে সার্ভিস বোট থেকে লালবোটে নামতে গিয়ে সন্দ্বীপ চ্যানেলে এক বৃদ্ধ ভেসে গেছে এমন গুঞ্জন থাকলেও গুপ্তছড়া কুমিরা ঘাট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিলো। এর মধ্যে আব্দুল মান্নানের মেয়ে এক প্রত্যক্ষদর্শীর দেয়া সার্ভিস বোটের যাত্রীদের ছবি দেখে একজনকে শনাক্ত করে জানিয়েছেন তিনিই তার পিতা আব্দুল মান্নান। অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শী তানভীর সেই ব্যক্তির ছবি দেখিয়ে নিশ্চিত করেছে ছবির ওই ব্যক্তিকেই সকালে সন্দ্বীপ চ্যানেলে ডুবে যেতে দেখেছেন তিনি।
আব্দুল মান্নানের মেয়ে মাহমুদা আক্তার সিভয়েসকে বলেন, ‘আমার আব্বা কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম আসেন চিকিৎসা করাতে। হালিশহরে আমার বাসায় ছিলেন তিনি। সকালে সন্দ্বীপ যাওয়ার জন্য কুমিরা ঘাটে যান। এরপর থেকে উনার খোঁজ নাই। উনার মোবাইলও বন্ধ। তিনি একটি স্টেপের সাদা শার্ট ও একটা কালো প্যান্ট পড়া ছিলেন।’
এদিকে সার্ভিস বোটে থাকা যাত্রীদের একটি ছবি তুলেছিলেন ওই বোটে থাকা তানভীর চৌধুরী। তানভীর চৌধুরীর সেই ছবি থেকে তার পিতা আব্দুল মান্নানকে শনাক্ত করেন মেয়ে চাদনী।
চাদনীর শনাক্ত করা ওই ব্যাক্তিকেই সকালে নদীতে ডুবে যেতে দেখেছেন বলে নিশ্চিত করে তানভীর বলেন, ‘আমার সামনে যিনি নদীতে পড়ে যান তিনি আর তার আগে তোলা ছবিতে যে লোককে চাদনী নিজের বাবা বলে দাবি করছেন তিনি একই ব্যক্তি।’
যদিও সকাল থেকে ঘাট কর্তৃপক্ষ বলে আসছিলো নৌকা থেকে কোন পুরুষ নদীতে পড়েনি। একজন নারী পড়েছিল তাকে তোলা হয়েছে। সে সময় এক পুরুষের জামা কাপড় ভিজে যায়। যিনি ভেজা কাপড়ে বাড়ি চলে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, 'আমাদের কাছে এখনো কেউ আসেনি। তবে দুজন লোক চট্টগ্রাম থেকে আসার পথে একেবারেই নিখোঁজ হয়েছে এটা জানতে পেরেছি। তাদের পরিবারের সদস্যরা থানায় আসলে আমরা জিডি করে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ইজারাদার জানিয়েছিলেন একজন নদীতে পড়েছিল তিনি উপরে উঠে বাড়ি চলে গেছেন।’
এক্ষেত্রে যেহেতু দুজন নিখোঁজ আছে সেহেতু নৌবাহিনী বা কোস্টগার্ডের সাহায্যে অভিযান চালাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে এর মধ্যেই আমি ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি।’
দিনভর গুঞ্জনের মধ্যে নদীতে কেউ পড়েনি বলা ইজারাদার এস এম আনোয়ার হোসেন এই মুহুর্তে কি বলতে চান সে বিষয়ে জানতে তার মোবাইলে কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এর আগে শুক্রবার সকাল ১০ টায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া নৌঘাট উপকূলে সার্ভিস বোট (যাত্রীবাহী ট্রলার) থেকে লাইফ বোটে (লাল বোট) নামতে গিয়ে এক যাত্রী নিখোঁজ হওয়ার খবর জানা যায়। সার্ভিস বোটে ও ঘাটে থাকা একাধিক ব্যক্তি লালবোটে উঠতে গিয়ে একজন সাগরে ডুবে গেছে এমনটা নিশ্চিত করলেও ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। এমনকি এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ভিডিওতে এএকজনকে সাগরে ভেসে যেতে দেখাও যাচ্ছিলো।
দুপুরে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তানভীর মাহমুদ সিভয়েসকে বলেছিলেন, ‘আমরা সন্দ্বীপের কূলে যাওয়ার পর লালবোট দিয়ে যাত্রীদের সার্ভিস বোট থেকে কূলে নিয়ে পৌঁছে দেয়ার সময় এই ঘটনা ঘটে। প্রথমে দুইটি বোট যাত্রীদের কূলে নামিয়ে দেয়। তৃতীয় লালবোটটিতে উঠার সময় ওই লোকটি পা ফসকে নদীতে পড়ে যায়। সাথে সাথেই লালবোট ও সার্ভিস বোট থেকে বৃদ্ধের উদ্দেশ্যে রশি ছুড়ে মারা হয়। তবে তিনি সেটা ধরতে পারেননি তাকে স্রোত দক্ষিণ দিকে টেনে নিতে থাকে। ওই সময় লালবোটটাও ঘুরিয়ে তার দিকে নেয়া হয়। কিন্তু লালবোট ঘুরাতে কিছুক্ষণ সময় লাগছিলো। এতে করে লোকটা অনেক দূরে সরে যায়।’
স্রোতের সাথে পেরে না উঠে এক পর্যায়ে লোকটি ডুবে যায় নিশ্চিত করে তানভীর মাহমুদ বলেন, ‘তবুও কিছুক্ষণ লালবোট তার দিকে এগোয়। কিছুটা কাছাকাছি গিয়ে আবারও রশি ছুড়ে। সেবারও ওই বৃদ্ধ রশি ধরতে ব্যর্থ হয়। এরপর বোট আরও কাছে নিয়ে একজন তার দিকে হাত বাড়িয়েছিল ওই মুহুর্তেই লোকটা ডুবে যায়। আমার সামনেই তিনি ডুবে গেছেন। এরপরও সেখানে আমরা ২০ মিনিট ছিলাম। কিন্তু ২০ মিনিটের মধ্যে তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে স্পীডবোট দিয়েও তাঁকে খোঁজা হয়।’
ডুবে যাওয়া লোকটির বিবরণ দিয়ে সেসময় তানভীর মাহমুদ বলেছিলেন, ‘ডুবে যাওয়া ওই বৃদ্ধের বয়স আনুমানিক ৬০ বছর হবে। তার গায়ে সাদা শার্ট ও প্যান্ট ছিলো। সম্ভবত তার সাথে তার কোন আত্মীয় স্বজন ছিলেন না। কারণ তেমন কাউকে ব্যক্তিগতভাবে তার জন্য কথা বলতে দেখিনি। যদিও যাত্রীরা সকলেই প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছিল তবে তাদের মধ্যে কেউই তার স্বজন ছিল বলে মনে হয়নি।'
অন্যদিকে সাইফুল ইসলাম নামে আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী যিনি চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে সন্দ্বীপ ঘাটে অবস্থান করছিলেন তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘একজন লোক নদীতে পড়ে গেছেন এটা আমরা নিশ্চিত। এরপরও আমি অনেকক্ষণ ঘাটে ছিলাম। কিন্তু তাকে পাওয়া গেছে বা তিনি উঠে বাড়িতে চলে গেছেন এমন কিছুই শুনিনি। বাড়িতে আসার পর এখন শুনছি যে উনি উঠে বাড়িতে চলে গেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেছিলেন, ‘একজন লোক নদীতে পড়েছেন এমনটা শুনেছি। ঘাট ইজারাদার বলছেন যিনি পড়েছেন তিনি উঠে চলেও গেছেন। তবে সেই যাত্রীর বিষয়ে কেউই কোন তথ্য এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে দিতে পারেনি। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছি।’