মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য
তদন্ত কমিটি করতেই ১৬ দিন ‘খেল’ মাউশি

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:২০, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
তদন্ত কমিটি করতেই ১৬ দিন ‘খেল’ মাউশি

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান সচিব ও সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে উঠা পরীক্ষার ফল জালিয়াতির অভিযোগগুলো সরেজমিনে তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। বুধবার (১৭ এপ্রিল) মাউশির সহকারী পরিচালক মো. তরিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানা যায়। 

যদিও এর আগে গত ১ এপ্রিল একই বিষয়ে তদন্তের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলা বিষয়ক শাখার উপ-সচিব মো. শাহীনুর ইসলাম। ওই চিঠিতে 'চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান সচিব ও সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে উপযুক্ত কর্মকর্তা দ্বারা ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।'

অথচ মাউশি এই তদন্ত কমিটি গঠন করতেই সময়ক্ষেপণ করেছে। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনার ১৬ দিন পর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মাউশি।

তদন্ত কমিটির তিন সদস্য হলেন— মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশান উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. আমির হোসেন, মাউশি ঢাকা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (এইচআরএম) আশেকুল হক ও সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট (ইএমআইএস সেল) খন্দকার আজিজুর রহমান। এ কমিটিকে সরেজমিনে তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী সুস্পষ্ট মতামতসহ দুই প্রস্থ তদন্ত প্রতিবেদন ৭ কর্মদিবসের মধ্যে অধিদপ্তরে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্ট, চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান (বিএলএফ কমান্ডার) অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে ফল জালিয়াতির অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাউশিকে সচিবের ফল জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। 

অন্যদিকে, মন্ত্রণালয়ের আদেশে গঠিত সেই তদন্ত কমিটির চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছিল অভিযোগকারীকে। কিন্তু মাউশির গঠিত তদন্ত কমিটির অফিস আদেশ দেওয়া হয়নি অভিযোগকারীকে।

এ বিষয়ে বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তাকে (সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথ) পদে রেখে সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব কিনা সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। ইতিমধ্যে তিনি সাজাপ্রাপ্ত কিবরিয়াকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে আলামত নষ্ট করে চলেছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আদেশে উল্লেখ করেছিলো। অথচ কমিটিই হলো ১৫ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর। এখন যেহেতু তিনি (বোর্ড সচিব) বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন তাই তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ম্যানিপুলেট করা তার জন্য সহজ কাজ হবে।’

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর তদন্ত কমিটি দেরিতে গঠন করার প্রসঙ্গে জানতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বোর্ড সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে। প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে পাশ করিয়েছেন, এমন সন্দেহে উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন জানিয়েছেন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। সে সময় রহস্য উন্মোচনে তদন্ত এবং প্রভাবমুক্ত পুনঃনিরীক্ষণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষাবিদেরা। কিন্তু সেটিও একসময় ধামাচাপা পড়ে যায়। পুনঃনিরীক্ষণ থামাতে গত ৫ নভেম্বর নগরের পাঁচলাইশ থানায় জিডি করেন বোর্ড সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ। 

পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আব্দুল আলীম ও অধ্যাপক ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে প্রতারণা, কম্পিউটারে বেআইনি প্রবেশসহ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজমকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়