Cvoice24.com

নৌকা মার্কায় ভোট দিতে চট্টগ্রামের মানুষদের ওয়াদা করালেন প্রধানমন্ত্রী

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৫৬, ৪ ডিসেম্বর ২০২২
নৌকা মার্কায় ভোট দিতে চট্টগ্রামের মানুষদের ওয়াদা করালেন প্রধানমন্ত্রী

পলোগ্রাউন্ডের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দীর্ঘ এক দশক পর পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশ্য জনসভায় ভাষণ দিতে এসে উপস্থিত মানুষদের নৌকা মার্কায় আগামীতেও ভোট দেওয়ার ওয়াদা করালেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘যাওয়ার আগে আপনাদের কাছ থেকে শুধু চাই একটা ওয়াদা— আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, সেভাবে সুযোগ পেয়েছি। আগামীতে আপনারা ভোট দেবেন নৌকা মার্কায়। হাত তুলে বলেন।’

এসময় উপস্থিত জনগণ হাত তুলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নৌকায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা করেন। 

রোববার (৪ ডিসেম্বর) দুপুর ৩ টা ৪৫ মিনিটে পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার ৫০ মিনিটের বক্তব্যজুড়ে ছিল দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা। তিনি দেশে রিজার্ভ নিয়ে ছড়ানো গুজবে কান না দেওয়ার জন্য মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপি খুনি দল, অগণতান্ত্রিক দল। তারা ক্ষমতায় এলে মানুষের সম্পদ লুটপাট করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নে কাজ করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সারাটা জীবন এ দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন। জীবনে কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। সেই ৪৮ সালে আমাদের মাতৃভাষার আন্দোলন, বাংলা ভাষা পাওয়ার অধিকার। এ অধিকার আদায়ের জন্য তিনি সংগ্রাম করে গেছেন। সেই পাঁচ দফা আন্দোলন থেকে নিয়ে ছয় দফা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা; আর এই ছয় দফা দিয়ে চট্টগ্রামেই তিনি জনসভা করেছিলেন। আজকে সেই স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি। স্বাধীন দেশে তিনি ফিরে এসেছিলেন, একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ। মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এ সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই যে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে কোনো একটি টাকা রিজার্ভ নেই, কোনো কারেন্সি নোট নাই, সমস্ত দেশ বিধ্বস্ত। রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ ভাঙ্গা; স্কুল কলেজ মসজিদ মন্দির সব ভাঙ্গা। এ অবস্থায় তিনি হাতে নিয়ে; তিনি একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিটি শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন, মানুষের খাদ্য নিশ্চয়তা দিয়েছেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন মাত্র সাড়ে ৩ বছরে। তারমধ্যে এ বাংলাদেশকে স্বল্প উন্নত দেশের মর্যাদা দিয়েছিল জাতীয় সংঘ। সেই মর্যাদা তিনি আমাদের এনে দিয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘স্বজনহারা বেদনা কি কষ্ট, এটা আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি আমরা জানি। ১৫ আগস্ট শুধু আমার বাবা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকেই হত্যা করেনি। একইসঙ্গে আমার মাকে হত্যা করেছে। আমার ভাই মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, তার নব বিবাহিত বধূ সুলতানা তাদেরকে হত্যা করেছে। আমার ভাই মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, তার স্ত্রী ফারবিন জামালকে হত্যা করেছে। আমার ১০ বছরের ছোট ভাই শেখ রাসেল, কি অপরাধ ছিল তার? তাকে হত্যা করেছে। আমার একমাত্র চাচা শেখ আবু নাছের তাকে হত্যা করেছে। সে পঙ্গু ছিল, মুক্তিযোদ্ধা ছিল।’

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, ‘আমার পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি আর আমার ছোট বোন শেখ রেহেনা বিদেশে ছিলাম। মাত্র ১৫ দিন আগে বিদেশে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভাবতেও পারিনি; হঠাৎ একদিন আমরা এতিম হয়ে যাব। এরপর ছয়টা বছর দেশে আসতে পারিনি। জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, আমাকে দেশে আসতে দেয়নি। রেহেনার পাসপোর্টটা রিনিউ করে দেয়নি। বরং খুনিদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি, বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। আর শুকরিয়া আদায় করি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে। ছয় বছর পর আমি বাংলাদেশে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েও অনেক বাধা অতিক্রম করি। যেখানে যুদ্ধ অপরাধীরা ক্ষমতায়, আবার বাবা-মায়ের হত্যাকারীরা ক্ষমতায় আমি সেই দেশের সবকিছু ত্যাগ করে ফিরে এসেছিলাম কেন, এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য। যে মানুষের জন্য আমার বাবা সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। আমার মা জীবনে কিচ্ছু চাননি, তার জীবনটাও তিনি ত্যাগ স্বীকার করেছেন এদেশের মানুষের জন্য, স্বাধীনতার জন্য।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ বাবা-মা সব হারিয়ে ফিরে এসেছি বাংলার মানুষের জন্য। কেন— এ দেশের মানুষ দু’বেলা পেট ভরে ভাত খাবে, তাদের বাসস্থান হবে, চিকিৎসা হবে, শিক্ষা হবে, উন্নত জীবন পাবে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারীদের সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবো। আমরা যেন সেই ভাবে বাংলাদেশকে গড়তে পারি। আপনাদের দোয়ায় আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, ‘১৫ আগস্ট যাদের হারিয়েছি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া চাই। আপনারা দোয়া করেন সেই সঙ্গে আপনাদের সহযোগিতা চাই—  এ বাংলার মাটিতে আবার যেন ওই যুদ্ধাপরাধী, খুনীর দল ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে; তারজন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এ বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে আমরা দিব না। কারণ, ওই জামায়াত-বিএনপি খুনীর দল, যুদ্ধাপরাধীর দল। জাতির পিতার হত্যাকারীদের মদদদানকারীর দল। আমাকেও বারবার হত্যা করার চেষ্টা করেছে। এরা যেন বাংলাদেশের মানুষের রক্তচুষে খেতে না পারে, আর যেন তারা এ দেশে আসতে না পারে।’

‘তাই যাওয়ার আগে মানুষের কাছ থেকে শুধু চাই একটা ওয়াদা— ‘বলেন আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, সেভাবে সুযোগ পেয়েছি। আগামীতে আপনারা ভোট দেবেন নৌকা মার্কায়। হাত তুলে বলেন।’— যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।  

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকদিন পর আবার দেখা হলো। ২০১৮  নির্বাচনের আগে এসেছিলাম। আজকে আসার সময় আমি দেখেছি, রাস্তায় অনেকে হয়তো চোখের দেখায় দেখতে পাচ্ছি না। আপনারা যতদূরেই থাকেন, আপনারা আছেন আমার হৃদয়ে-অন্তরে। বাবা-মা, ভাই হারিয়ে আপনাদের কাছেই আমি ফিরে পেতে চাই আমার বাবা-মা, ভাইয়ের ভালোবাসা। আপনারাই আমার পরিবার। আপনাদের কাছেই আমার একমাত্র আশ্রয়। আপনাদের কাছে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। বিদায়ের আগে বলে যেতে চাই— ‘নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি দেবার কিছু নেই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই।’

এরআগে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের অপেক্ষার প্রহর শেষে পলোগ্রাউন্ড মাঠের জনসভায় এসে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলেটারি একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ শেষে তিনি হেলিকপ্টারে করে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে নামেন। সেখান থেকে সিআরবি হয়ে পলোগ্রাউন্ডে মাঠে আসেন। মাঠে এসেই ৩০টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং চার প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। 

এরআগে বেলা ১২টা থেকেই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঞ্চালনায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের স্থানীয় এমপি, কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় জনসভার আনুষ্ঠানিকতা। বক্তব্যে নেতারা চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর নেয়া নানা প্রকল্পের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন। আগামীতেও প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়ী করার আহ্বান জানান। 

এদিন সকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুপুরের জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা পলোগ্রাউন্ডমুখী স্রোতে যুক্ত হয়েছেন। ভোরের আলো ফুটতেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রং বেরংয়ের টি শার্ট ও বাদ্য যন্ত্র নিয়ে জনসভাস্থলের আশাপাশে এসে অবস্থান নিতে থাকেন। এরপর সিআরবি, পুরোনো রেলস্টেশন, টাইগারপাস দিয়ে বানের স্রোতের মত নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে প্রবেশ করছেন। এসময় স্লোগোনে-স্লোগানে মুখর জনসভাস্থল ও চট্টগ্রামের রাজপথ।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়