Cvoice24.com

রাতভর মুসল্লিদের ইবাদত-বন্দেগি-জেয়ারত
মসজিদ মাজার কবরস্থানে ভিড়

রবিউল রবি, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
মসজিদ মাজার কবরস্থানে ভিড়

কবরস্থানে মুসল্লিদের ভিড়। কেউ কোরআন তেলোয়াত করছেন, কেউ আবার ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। মসজিদ-মাজারে চলছে ইবাদত-বন্দেগি-জেয়ারত। মহান আল্লাহর কাছে দু'হাত তুলে জানা-অজানা ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। ফরিয়াদ জানাচ্ছেন যাবতীয় অনিষ্ট থেকে রক্ষার।

পবিত্র শবে বরাতে রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে নগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ, দামপাড়ার হযরত খাজা গরিবুল্লাহ শাহ (রহ.) মাজার, মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।

গরীবুল্লাহ শাহ (রহ.) মাজার সংলগ্ন কবরস্থান এলাকায়  কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর বিশেষ দিনগুলোতে তারা কবরবাসী স্বজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় তাদের কবরের সামনে এসে এভাবেই আল্লাহর কাছে দু’আ করেন। তাদের যেন আল্লাহ জান্নাতবাসী করে—সেই ফরিয়াদ জানান আল্লাহর কাছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি কবরস্থানের সামনে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে মোনাজাত করছেন অনেকে। প্রিয়জনের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআন পড়ছিলেন। এছাড়া, মাজারের ভেতর ও বাইরে ছিল মানুষে পরিপূর্ণ। যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। স্বজনদের কবর জেয়ারত করতে এসেছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে।

মোহাম্মদ এনাম নামে এক মুসল্লি বলেন, ‘আমার বাবা আজ থেকে সাড়ে ৩ বছর আগে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সেই থেকে প্রতিবছর শবে বরাতসহ বিশেষ সব দিনে আমি তার কবরের সামনে এসে দোয়া করি এবং জেয়ারত করি।’

দাদার কবর জিয়ারত করতে আসা হালিম বলেন, ‘এই কবরস্থানেই আমার দাদা শায়িত আছন। তাই তার জন্য আমি দোয়া করতে এসেছি, যেন আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করে। আমার বাবাও আমার সাথে এসেছেন।’

সন্তানসহ কবর জিয়ারত করতে আসা মোহাম্মদ রফিকুল বলেন, ‘আমার সন্তানকে নিয়ে আমার বাবার কবর জিয়ারত করতে এসেছি। প্রতিবছর এই দিনে আমি আমার সন্তানকে নিয়ে কবর জিয়ারত করে যাই। আমার বাবার আত্মার শান্তির জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি। এখানে এলে মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। আমাদেরও একদিন চিরঅন্ধকার কবরে যেতে হবে—এই কথা মনে করাতেই সন্তানকে নিয়ে আসি।’

মসজিদে মুসল্লির ভিড়

সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামেও যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পবিত্র শবে বরাতের রাত পালন করছে মুসলিম উম্মাহ। নগরীর প্রত্যেকটি মসজিদে দেখা গেছে মুসল্লির ভিড়। হাতে জায়নামাজ এবং তসবিহ নিয়ে পবিত্র বরাতের নামাজ আদায় করতে বাবা-চাচার সাথে এসেছে শিশুরাও। 

এশারের নামাজের পর থেকে নগরের বিভিন্ন মসজিদ, কবরস্থান এবং মাজার ঘুরে দেখা গেছে, এশার নামাজ শেষে ইবাদত বন্দেগি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ভিড় করছেন নানা বয়সের মুসল্লিরা।

মহিমান্বিত এই রাতে অতীতের পাপ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানান তাঁরা।

সরেজমিনে নগরের খুলশী এলাকার গরিবুল্লাহ শাহ হাউজিং সোসাইটি জামে মসজিদে দেখা গেছে, এশার নামাজ শেষে চলছে শবে বরাতের বিশেষ আলোচনা। খানিক বাদে বাদে দরুদও পড়ছেন মুসল্লিরা। অনেকে বরাতের নফল নামাজ আদায় করছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে এই মসজিদে হয়েছে বিশেষ মোনাজাত। 

ডেবারপাড়ের বাসিন্দা মোহাম্মদ আনিস বলেন, ‘আজকের এই পবিত্র রাতে এশার নামাজ আদায়ের পর শবে বরাতের নফল নামাজ আদায় করেছি। হুজুর দেশ ও জাতির কল্যাণে বিশেষ মোনাজাত করলেন। আমি আমার পরিবারের সবার জন্য এবং মরহুম দাদা-দাদীর জন্যে আল্লাহর কাছে দু’আ করেছি।’

আনিসের চাচা হোসাইন বলেন, ‘ভাতিজাকে নিয়ে এসেছি বরাতের নামাজ আদায়ের জন্য। আজ একটি দুঃখের খবর, আমাদের এক প্রতিবেশী ভাই আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গিয়েছেন। তার নামাজে জানাজাও আদায় করলাম। এখন বরাতের নামাজ আদায় করে বাসার দিকে যাচ্ছি।’

মাজারেও ভিড়

রাত ১১টার দিকে হযরত খাজা গরিবুল্লাহ শাহ মাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাজারের ভেতরে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। দলে দলে শিশু, তরুণ ও বৃদ্ধ মুসল্লিরা ভিড় করছেন মাজার জেয়ারতের জন্য। বর্ণিল আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে পুরো মাজার এলাকা। 

মাজার জিয়ারত করতে আসা হাসনাত হাসান বলেন, ‘মাজারে এসে পবিত্র কুরআন পাঠ করেছি এবং বিশেষ মোনাজাত করেছি পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্যে।’

দামপাড়া থেকে আসা সেলিম জানান, বরাতের নামাজ আদায়ের পর মনোবাসনা পূরণে মাজারে এসেছেন। মাজার জেয়ারত ও পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেছেন তিনি। 

মাজারের বাইরে দোকানিদের পসরা

এদিকে, মাজারের বাইরে পসরা বসেছে বিভিন্ন খাবার ও কাপড়ের দোকানের। সেখানে ছিলো আতর, টুপি, মেসওয়াক, তসবিহ, মাস্ক, আগরবাতি, মোমবাতি, জায়নামাজ, পাঞ্জাবি, পাজামা, নামাজ শিক্ষা ও দোয়া-দরুদের বই, মুখরোচক নানা খাবার, শরবত, ভেলপুরি, ফুসকা, আংটি, কসমেটিকস দোকানের।

এসব দোকানকে ঘিরে মানুষের ভিড় জমেছে রাস্তার পাশে। অনেকে কিনছেন টুপি আতর কিংবা জায়নামাজ। এছাড়া খাবারের দোকানগুলোতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। 

নামাজ শেষে দলবেঁধে আসা একদল তরুণকেও দেখা গেছে ঘুরে বেড়াতে।

ভিক্ষুকদের জন্য ঈদ

মাজারের ঠিক বাইরের সরু রাস্তায় যেন বসেছে ভিক্ষুকদের ‘হাট’। দুই পাশের হাঁটার রাস্তায়  সারিবদ্ধভাবে বসা শতাধিক নারী ও পুরুষ ভিক্ষুক। তারা আল্লাহ ও নবীর নামে জারি গেয়ে মাজারে আগতদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টায় ব্যস্ত। এর মধ্যে মাজার, কবর জেয়ারত শেষে বেরিয়ে সারিবদ্ধভাবে সবাইকে টাকা দিয়ে যাচ্ছেন মুসল্লিরা।

মূলত বছরের কয়েকটি দিনে তারা সহযোগিতা বেশি পান। তার মধ্যে অন্যতম শবে বরাতের রাত। কারণ, এদিন অন্যান্য সব দিনের তুলনায় মসজিদ-মাজারে মুসল্লিদের ভিড় থাকে কয়েকগুণ বেশি। আর অনেকে এদিন উদার হস্তে দানখয়রাত করে থাকেন। তাই এই দিনটি তাদের জন্য ‘ঈদ’।

প্রসঙ্গত, শবে বরাতে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় রাতভর ইবাদত করেন মুসল্লিরা। নফল নামাজ, জিকির আসকার, কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সময় কাটান ইবাদাতকারীরা। তবে নগরে আতশবাজি ফোটানো  চোখে পড়েনি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়