জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার শিব নারায়ন দাশ আর নেই

সিভয়েস২৪ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:২৬, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার শিব নারায়ন দাশ আর নেই

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ন দাশ আর নেই। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ৯২৫টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। শিব নারায়ন দাশের বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। 

এর আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ১ এপ্রিল রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শিব নারায়ণ দাশ। সেখান থেকে ডাক্তারের পরামর্শে তাকে বিএসএমএমইউ-তে স্থানান্তর করা হয়।

তিনি এক ছেলে ও স্ত্রীসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন গুণগ্রাহী ও সহকর্মী রেখে গেছেন।

শিবনারায়ন দাশের ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ জানান, তার বাবার মরদেহ বারডেমের মরচুয়ারিতে রাখা হবে। তার দেহ এখানে দান করা হবে এবং কর্নিয়া দান করা হবে সন্ধানীতে।

জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত শিব নারায়ণ দাসের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত পতাকা দিয়েই হয়েছিল স্বাধীনতার সংগ্রাম। যার অন্যতম নকশাকার ছিলেন শিব নারায়ণ দাস। তিনি তার কর্মের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।। তার মৃত্যুতে জাতি একজন আদর্শবান দেশপ্রেমিককে হারালো।

বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত এই পতাকা ধরেই হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে প্রথম বাংলাদেশের এই পতাকা ওড়ানো হয়েছিল।
লাল-সবুজের ভেতরে হলুদ রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত ওই পতাকার নকশা যারা করেছিলেন, তাদের একজন সে সময়ের ছাত্রলীগ নেতা শিব নারায়ণ দাশ।

১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৮ নম্বর কক্ষে বসে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী ওই পতাকার নকশা তৈরি করেছিলেন ‘জয়বাংলা বাহিনীর’ জন্য। এ পতাকাই পরবর্তীতে ১৯৭১-এর দুই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলিত হয়।

১৯৭০ সালের সাত জুন ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশ গ্রহণের কথা ছিল। এই জন্য ছাত্রদের নিয়ে একটি জয়বাংলা বাহিনী, মতান্তরে 'ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী' গঠন করা হয়। ছাত্র নেতারা এই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে শিবনারায়ন দাশের নকশা করা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ন দাসের নকশা করা পতাকার মধ্যে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ, ও তার ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটূয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়