চট্টগ্রামে বই পৌঁছাতে ধীরগতি

প্রকাশিত: ১৫:০৩, ২৩ নভেম্বর ২০২০
চট্টগ্রামে বই পৌঁছাতে ধীরগতি

চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে এ বছর চট্টগ্রামে বই পৌঁছছে ধীরগতিতে। অন্যান্য বছর অক্টোবর থেকে চট্টগ্রামে বই আসা শুরু হলেও বিদ্যমান মহামারি পরিস্থিতিতে  বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বই বন্টনে যুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।  

চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর চট্টগ্রামের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বই পাবে মোট প্রায় ২ কোটি ২ লাখ ১ হাজার ৯২০টি। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, নানা কারণে এ বছর বইয়ের মুদ্রণ কাজ শুরু হতে দেরি হয়।  প্রাথমিকের বই জেলা-উপজেলায় পাঠানো হলেও প্যাকেটিং সমস্যার কারণে মাধ্যমিকের বই পাঠাতে দেরি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিস বলছে, গত সপ্তাহ থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বই বন্টন শুরু হয়। অন্যান্য বছর এই সময়ে জেলার সব উপজেলায় বই পৌঁছে গেলেও এবার অনেক পিছিয়ে ও ধীরগতিতে হচ্ছে বই বন্টন ও বিতরণ কর্মসূচী। চট্টগ্রামে এ বছরও  মাধ্যমিক পর্যায়ে ২ হাজার ৬৬টি বিদ্যালয়ের ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৪৩ জন শিক্ষার্থীকে ১ কোটি ৫৩ লাখেরও বেশি বই দেওয়া হবে। 

চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম হোসাইনী সিভয়েসকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলায় মাধ্যমিক শিক্ষায় দেড় কোটি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত চট্টগ্রামে  মাধ্যমিক শিক্ষার বই এসেছে মাত্র ৪০ লাখ।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত সপ্তাহ থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে পাঠানো বইগুলো জেলার বিভিন্ন উপজেলা শিক্ষা অফিসে সরবরাহ হচ্ছে। উপজেলা অফিস থেকে বিদ্যালয়গুলোতে বই পাঠানো হবে।’

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রমতে, ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, রাউজান ও কোতোয়ালীসহ কয়েকটি থানা-উপজেলায় সীমিত পরিসরে মাধ্যমিক স্তরের বই পৌঁছানো শুরু হয়েছে।  

চট্টগ্রামে প্রাথমিকে মোট বইয়ের চাহিদা গত বারের মতই অপরিবর্তিত। চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলা ও মহানগরের ৬ থানায় প্রাথমিকে মোট বইয়ের চাহিদা ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ও মোট ৪ হাজার ৩৮৮টি বিদ্যালয়ে মোট ১০ লাখ ১৮ হাজার ২২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জেলার প্রতিটি উপজেলায় সময়মতো বই পৌঁছানো অনেকটা চ্যালেঞ্জে মুখে এখন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক অতিরিক্ত শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ জহির উদ্দিন সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে এনসিটিবির বই মুদ্রণের কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় চট্টগ্রামে সব উপজেলায় বই এখনো যাওয়া শুরু হয়নি।’ 

তিনি বলেন, ‘জেলার মোট চাহিদার মাত্র ২১ ভাগ বই এখন পর্যন্ত এসেছে। ইতোমধ্যে স্বল্প পরিসরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা, কোতোয়ালী ও রাউজানে  উপজেলা শিক্ষা অফিসে বই পৌঁছেছে। এটি চলমান থাকবে এ বছরের শেষ পর্যন্ত। 

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সিভয়েসকে বলেন,  ‘আমরা এখনো বই আসার ব্যাপারে উপজেলায় কোন তথ্য পাই নি। অন্যান্য বছরে নভেম্বর থেকেই বই আসা শুরু হয় এ বছর সবকিছু বন্ধ ও লকডাউনে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র মতে, ২০২১ সালে শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৩৬ কোটি বই ছাপানো হয়েছে। তার মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের জন্য প্রায় ১০ কোটি ৫৪ লাখ হবে এবং মাধ্যমিকের বই রয়েছে প্রায় ২৪ কোটি ৪১ লাখ।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে বই ছাপানোর জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। 

এছাড়াও চলতি বছর মাধ্যমিকে চার ধরনের মোট ১১টি বইয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এগুলো হল, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বসভ্যতার ইতিহাস। এই তিন বিষয়ের আছে মোট ৮টি বই। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির আনন্দপাঠ বা দ্রুতপঠন বইগুলো নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার এ বছরের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে সংসদ টিভিসহ অনলাইন পাঠদান ও পাঠ মূল্যায়নের ভিত্তিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমতাবস্থায় দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে ১ জানুয়ারির আগে নতুন বই তুলে দেওয়া রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারে জন্য।

-সিভয়েস/এইচবি/এএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়