চসিকের ৭১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪২টির প্রধান ‘ভারপ্রাপ্ত’

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৫৯, ৩ মার্চ ২০২৩
চসিকের ৭১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪২টির প্রধান ‘ভারপ্রাপ্ত’

কুলগাঁও সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সিতাংশ বিকাশ কর। ২০২০ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হয়েই দায়িত্ব পালন করছেন দুই শিফটে শ্রেণি কার্যক্রম চলা এ বিদ্যালয়ে। যদিও এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দুইজন সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ তিনজন শিক্ষক থাকার কথা। অথচ গত তিন বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত হয়েই দায়িত্ব পালন করছেন এ সহকারী প্রধান শিক্ষক। 

শুধু এ বিদ্যালয়েই নয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৭১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই চলছে এভাবে।  আবার সাত প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাজ সামলাচ্ছেন সহকারী শিক্ষক।

দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকা, পদোন্নতি বন্ধ, এমপিও জটিলতা এবং প্রধান শিক্ষকের পরীক্ষায় উর্ত্তীণ না হওয়ার কারণে চসিকের ৫৯ শতাংশ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। 

অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের অভিযোগ— প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করলেও পাচ্ছেনা না সুযোগ-সুবিধা। এমনকি নিয়োগের বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে অনেক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত হয়েই যেতে হবে অবসরে। 

চসিক সূত্রে জানা যায়, চসিক পরিচালিত ৭১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫টি বালিকা, ৯টি বালক এবং ১৪টি বালক-বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৪১ শতাংশ বিদ্যালয়ে আছে প্রধান শিক্ষক। এসকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও চসিক পরিচালিত আরও ২৩টি কলেজ ও ৯টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। তারমধ্যে ১৯টি কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে। বছরের পর বছর এসব প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষকেরা ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক বিদ্যালয়ে আবার সহকারী শিক্ষকও নেই।  

জানা যায়, কুলগাঁও সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে দিবা ও প্রাত শাখা মিলে মোট শিক্ষক আছেন ২৪ জন। কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি। শিক্ষক-সংকটে থাকা এ বিদ্যালয়ে একজনই সামাল দিচ্ছেন তিন শিক্ষকের দায়িত্ব। এরমধ্যে প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় ভারপ্রাপ্ত প্রধানকে। এ কারণে এতো সংখ্যক শিক্ষার্থীর পাঠদানে হিমশিম খাচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এতে করে পাঠদানও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা।

একই অবস্থা পশ্চিম মাদারবাড়ি সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপা চৌধুরী। তিনিও ২০১৮ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হয়েই দায়িত্ব পালন করছেন এ বিদ্যালয়ে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে পোস্তারপাড় আসমা খাতুন সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব বাকলিয়া সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ, আলকরণ সু: আহমদ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, অপর্ণাচরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ, কাট্টলী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ইমারাতুন্নেসা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ফতেয়াবাদ বহুমূখী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ, ফতেয়াবাদ শৈলবালা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ নগর সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আলকরণ নুর আহমদ সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব বাকলিয়া সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, পাথরঘাটা সিটি কর্পোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, হালিশহর আলহাজ মহব্বত আলী সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, ছালেহ জহুর সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী আবদুল আলী সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, জুলেখা আমিনুর রহমান সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, আয়ুব বিবি সিটি কর্পোরেশন স্কুল এন্ড কলেজ, ভোলানাথ মনোরমা সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, সিটি কর্পোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ এবং সিটি কর্পোরেশন হাতে খড়ি স্কুল এন্ড কলেজ। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সিভয়েসকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পাঠদান বাদ দিয়ে দাপ্তরিক কাজে ব্যাংকের পাশাপাশি সভা-সমাবেশ, ট্রেনিং, বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে প্রায় দিনই বিভিন্ন অফিসে যেতে হচ্ছে। এমনিতেই শিক্ষক সংকট তার উপর অনেক জনের দায়িত্ব একা পালন করা লাগে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রোমোশন নেই, এমপিওভুক্ত হয়নি, তেমন সুযোগ সুবিধাও পাচ্ছিনা। কিন্তু দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।’

একই বিষয়ে পোস্তারপাড় আসমা খাতুন সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন সিভয়েসকে বলেন, ‘আমি ২০২০ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব পালন করছি। ১৯ সালে প্রধান শিক্ষকের পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হই। কিন্তু যে স্কুলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেটা আমিই নেইনি। কারণ আমার বাসা থেকে অনেক দূরে ছিল।’

আরেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘বছরের পর বছর সহকারি প্রধান শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় অনেক স্কুলে নেতৃত্ব সংকট সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকদের অনেকেই তাদের মানতে চান না। প্রধান শিক্ষক থাকলে প্রতিষ্ঠান অবশ্যই আরও ভালো চলতো। কারণ অনেকের প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই। এ রকম লোককে দায়িত্ব দিলে অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেতে ঘুষ, দুর্নীতি ও এসিআর হারানোর বা গায়েবের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে। তাই প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হলে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি ফেরার পাশাপাশি গুনগত ও মানসম্মত পাঠদানের পরিবেশ আবার ফিরে আসবে বলে আমি আশাবাদি।’

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বরাবরের মতো তাকে পাওয়া যায়নি।

সিভয়েস/এসআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়