৭ ঘণ্টা পর মহাসড়ক ছাড়লো সলিমপুরের ‘দখলদাররা’, যান চলাচল শুরু

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ও সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ২৩ আগস্ট ২০২২
৭ ঘণ্টা পর মহাসড়ক ছাড়লো সলিমপুরের ‘দখলদাররা’, যান চলাচল শুরু

বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরের প্রবেশদ্বার সিটি গেট এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে ৭ ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে জঙ্গল সলিমপুরের ‘দখলদাররা’। পরে পুলিশ টিয়ার শেল ও লাঠিচার্জ করলে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ এবং তাদের উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসন করার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন দখলদাররা। এসময় যান চলাচল বন্ধ থাকায় মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে জঙ্গল সলিমপুরের ‘দখলদাররা’। এসময় সড়কের উভয় পাশে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় এবং যান চলাচল বন্ধ থাকে। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের সরানোর চেষ্টা করলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ টিয়ার শেল ও লাঠিচার্জ করে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিলে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত নগরের ফৌজদারহাট-বায়েজিদ সংযোগ অবরোধ করে রাখে তারা। এসময় ওই সড়ক দিয়েও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। তাদের দাবি— পানি-বিদ্যুতের সংযোগ দিতে হবে এবং উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসন করতে হবে। এরপর ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড ও ফৌজদারহাট-বন্দর সড়কের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে তারা বিকেল ৫টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বারবার তাদের সঙ্গে কথা বলে শান্ত করার চেষ্টা করেন। পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে তাদের ফিরে যেতে বারবার অনুরোধ করলেও তাতে কর্ণপাত করছিলেন না অবরোধকারীরা। 

অন্যদিকে যানজটে আটকা পড়ে অবর্ণনীয় দুর্দশায় পড়েন হাজার-হাজার মানুষ। এক পর্যায়ে বিকেল ৫টার দিকে স্থানীয়রা এসে অবরোধকারীদের সরে যেতে অনুরোধ করতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। এরপর স্থানীয়দের ধাওয়ায় বায়েজিদ সড়কের ১ নম্বর ব্রিজের উপর অবস্থান নেয় অবরোধকারীরা। সেখান থেকে পাথর ছুড়তে থাকে সড়কে। পাথরের আঘাতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন এবং ১২টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর কিছুক্ষণ উভয়পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ এগিয়ে এলে অবরোধকারীরা জঙ্গল সলিমপুরের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি (তদন্ত) মো. হোসাইন। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘আলীনগরের বাসিন্দারা সড়ক অবরোধ করেছে। তবে আমরা লিংক রোড সড়কটি ব্লক করে দিলে তারা অন্য জায়গায় চলে যায়। এখন সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক।’

এর আগে, কারাগার স্থানান্তরসহ সরকারি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে সরকারি পাহাড় দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে জেলা প্রশাসন। কয়েকদফা চালানো অভিযানে দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। তবে প্রথমদিনেই উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারা উচ্ছেদে বাধা দেয়ার পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের চেষ্টা করে।

উল্লেখ্য, সরকার আলীনগর ও পুরো জঙ্গল সলিমপুর নিয়ে একটি বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করে। স্পোর্টস কমপ্লেক্স কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তর করা হবে, আইকনিক মডেল মসজিদ, জাতীয় তথ্যকেন্দ্র, নভোথিয়েটার ও ইকোপার্ক করার পরিকল্পনা নেয় সরকার। সেই অনুযায়ী এখানে তথ্য মন্ত্রী, ভূমি মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও সরকারী বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা দফায়-দফায় পরিদর্শন করেন। গত ১৫ জুলাই শুক্রবার স্থানীয় সরকার চট্রগ্রাম বিভাগের উপ পরিচালক বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল, সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মং মারমা ও সীতাকুন্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম ও সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালা উদ্দিন আজিজ আলীনগর পরিদর্শনে যান। 

পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে চেয়ারম্যানের গাড়ি থেকে নামিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আরিফকে বেধড়ক মারধর করে ইয়াসিন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। সরকারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে জনপ্রতিনিধিকে মারধর করার ঘটনাকে সরকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। তারা বার্তা দিতে চেয়েছে যে এখানে কারো প্রবেশ নিষেধ। এ ঘটনা হতবাক করে দেশবাসীকে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়