পরিবহন ধর্মঘট বর্বরতা ছাড়া কিছুই নয়: ক্যাব

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:২৯, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
পরিবহন ধর্মঘট বর্বরতা ছাড়া কিছুই নয়: ক্যাব

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ বলেছেন,  গণপরিবহন, শ্রমিক ও মালিকরা দেশের আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছেন। বারংবার দেশের জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায় করার কারণে তারা বেপরোয়া হয়ে গণপরিবহনের লাইসেন্স, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যা করবে আর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিকার করতে চাইলেই মানুষকে জিম্মি করে ধর্মঘট ডাকবে। এটা নিছক বর্বরতা ছাড়া কিছুই নয়। 

রবিবার (২৮ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দেশকে অচল করার ষড়যন্ত্র থেকে বেড়িয়ে এসে জরুরি ভিত্তিতে কর্মবিরতির নামে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করার আহবান জানান তারা।

ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, তারা যদি আইনের শাসনে প্রতি বিশ্বাসী হয় তাহলে আইনগতভাবেই তাদের বিরুদ্ধে কোনো অন্যায় হয়ে থাকলে তার প্রতিকার চাইতে পারতো। একই সাথে নিরাপদ গণপরিবহনের দাবিতে চুয়েট শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।

বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, মো. সেলিম জাহাঙ্গীর ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান এসব মন্তব্য করেন।  

বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ বা অন্য যারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত সবাই সরকারি দলের নেতা বা কর্মী। আর তাঁরাই বিভিন্ন সময়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দাবি আদায়ের জন্য জনগণকে বারবার জিম্মি করেন। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। সরকার দলীয় নেতা-কর্মী হিসেবে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এধরনের কর্মকাণ্ড থেকে তাদের বিরত থাকা উচিত।

নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিনিয়তই সড়ক দুর্ঘটনার কারণে যে সমস্ত মূল্যবান জীবন হারিয়ে যাচ্ছে, তার ক্ষতিপূরণ কি কোনভাবেই সম্ভব? অথচ তারা অদক্ষ চালক, লাইনেসন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো বন্ধ করলে এ ঘটনার অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব হতো। আর এই চিহ্নিত স্বার্থান্বেষী মহল গণপরিবহণ সেক্টরে নৈরাজ্য সৃষ্টি, নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজি অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে জিম্মি করে বারবার এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কাজে জড়িত হলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এই মহলটি জনগণের বহুল প্রত্যাশিত নতুন সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়িয়ে আইন বাস্তাবায়নে বাধা দিচ্ছে। 

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, গণপরিবহণ মালিক ও শ্রমিকদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে প্রণোদনা দেবার কারণে তাঁরা বারবার জনগণকে জিম্মি করে এ ধরনের অবৈধ ধর্মঘট ও কর্মবিরতি আহবানসহ আইন প্রয়োগে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে বারবার বাধা দিলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় পুরস্কার হিসাবে তাদেরকে মন্ত্রী, এমপি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা বানাচ্ছে। আর এ খাতে অন্যতম অংশীজন ভোক্তারা কোনো প্রণোদনা দূরের কথা, আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সদস্যও হতে পারছে না। ফলে, সড়কে নৈরাজ্য থামছে না। 

তারা বলেন, সড়ক পরিবহন খাতে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরাই মিলে তাদের মতো করে যাবতীয় নীতি প্রণয়ন ও সবগুলি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। বিএরআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করে প্রতিকার পাওয়া কঠিন। কারণ, সবকিছুর ওপর পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরাই সবকিছুর ওপর রাজত্ব করছে। সড়ক পরিবহন খাতে নৈরাজ্য থামাতে হলে ভোক্তা ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সম অংশগ্রহন নিশ্চিত জরুরি।

গণপরিবহন সেক্টরে যেকোন দাবি-দাওয়া আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে ক্যাব নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, একশ্রেণীর পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা আইন প্রয়োগের আগেই আইন সম্পর্কে বিভ্রান্তি ও ভীতি সৃষ্টি করে পরিবহন খাত উত্যপ্ত করছে। 

প্রসঙ্গত, শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে জরুরি সভা শেষে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে চার দফা দাবিতে রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দেয় বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

এর আগে, ২২ এপ্রিল ওই ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এতে আহত হন আরও এক শিক্ষার্থী। এই ঘটনার প্রতিবাদে টানা চারদিন সড়ক অবরোধ করে চুয়েট শিক্ষার্থীরা। এতে ৩টি বাস পুড়িয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছে পরিবহন শ্রমিকেরা।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আগামী ১১মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়