ধর্মঘট প্রত্যাহারের আশায় আগাম টিকিট বিক্রি

শারমিন রিমা, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
ধর্মঘট প্রত্যাহারের আশায় আগাম টিকিট বিক্রি

সকাল গড়িয়ে দুপুর। বেলা বাড়ছে অথচ সব বাস কাউন্টারই ফাঁকা। নেই যাত্রীদের আনাগোনাও। অলস সময় কাটছে টিকিট বিক্রেতাদের। শহরে যেন আজ ঈদের ছুটি। শহর ছাড়ার তাগিদে অন্যদিন যেখানে যাত্রীদের হাঁকডাকে মুখর থাকে কাউন্টার, সেখানে আজ পিনপতন নিরবতা। চিরচেনা কদমতলী ও স্টেশন রোড বাসস্ট্যান্ড যেন অচেনা জায়গাতে পরিণত হয়েছে। আর তার কারণ চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। 

রবিবার (২৮ এপ্রিল) ভোর থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হয়। তবে সকাল থেকে চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার কোনো রুটে গাড়ি না ছাড়লেও ধর্মঘট প্রত্যাহারের আশায় আগাম টিকিট বিক্রি হচ্ছে কাউন্টারে। গুটিকয়েক যাত্রী কাউন্টারে এসে টিকিট কাটলেও বেশিরভাগই কাটছেন ফোনে ফোনে। বিকেল থেকে গাড়ি ছাড়ার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন গুটিকয়েক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। আর এমন চিত্রই দেখা যায় নগরের কদমতলী  ও স্টেশন রোড বাসস্ট্যান্ডের কাউন্টারগুলোতে। 

সরেজমিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা যায়, যেখানে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লায় ৩৬ আসনের বাসভর্তি হয়ে শহর ছাড়ে সেখানে আজ শহর ছাড়ার তাড়ায় নেই কেউ। গাড়ির অপেক্ষায় নেই যাত্রীও। এর মধ্যে কিছু কিছু বাস কাউন্টার বন্ধ থাকলেও বেশিরভাগ কাউন্টারই ছিল খোলা। দুই একজন করে যাত্রী আসছেন বাস ছাড়ার খবর নিতে। কেউ হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন আবার কেউ কেটেছেন রাতের টিকিট। 

এ নিয়ে কথা হয় সিলেটগামী যাত্রী রফিকুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কালকে ফেসবুকে দেখলাম ধর্মঘট। কেউ বলছে গাড়ি চলবে আবার কেউ বলছে চলবে না। তাই খবর নিতে এসেছিলাম। কাউন্টার থেকে বললো দিনের বেলায় কোনো গাড়ি ছাড়বে না। তবে চাইলে রাতের টিকিট করতে পারি। যেহেতু আজই আজেন্ট সিলেট যেতে হবে তাই টিকিট করলাম। বাকিটা জানি না কী হয়।’

একই প্রসঙ্গে ঢাকা ও সিলেটগামী এনা পরিবহনের সেলস এক্সিকিউটিভ আবিদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা কোনো গাড়ি ছাড়িনি। অফিসের অর্ডার তাই আমি কাউন্টারে এসে বসে আছি। আশা করছি ধর্মঘট প্রত্যাহার হয়ে যাবে। রাতে গাড়ি ছাড়ার সম্ভাবনা আছে।’ 

কতজন যাত্রী এসে ফেরত গেছে এ বিষয়ে সৌদিয়া কোচ সার্ভিসের ম্যানেজার মাহবুব রহমান বলেন, ‘৩টা থেকে টিকিট বিক্রির একটা নির্দেশনা আছে। আমাদের বাসের বেশিরভাগ ৩৬ সিট। এর মধ্যে কিছু ৪০ সিটেরও আছে। আমাদের বেশিরভাগ যাত্রী দূরপাল্লার তারা রাতেই যায়। ৬ থেকে ৭ জন এসে ফেরত গেছে।’
তবে ধর্মঘট প্রত্যাহার হোক বা না হোক রাতে গাড়ি ছাড়ার কথা জানিয়েছেন ইউনিক পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, মামুন এন্টারপ্রাইজের টিকিট বিক্রেতারা। 

এ বিষয়ে ইউনিক পরিবহনের সেলস এক্সিকিউটিভ মো. সবুজ বলেন, ‘আগাম টিকিট বিক্রি করছি। বিকেলের দিকে একটা নিদের্শনা চলে আসবে। যাত্রীরা কাউন্টারে না এলেও ফোন করেই বুকিং দিয়ে রাখছে।’

যদি ধর্মঘট প্রত্যাহার না হয় তখন বাস চলবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘কেউ যদি প্রত্যাহারের পরে যেতে যায় যাবে নতুবা টিকিটের টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। তবে আশা করছি রাতে বাস চলবে। 

অনেকটা একই মন্তব্য হানিফ এন্টারপ্রাইজের সেলস এক্সিকিউটিভ মো. সাঈদের। তিনি বলেন, ‘টিকিট বিক্রি চলছে। আমাদের ঢাকার সকালের ট্রিপেও গাড়ি ছেড়েছে। তবে এখন বন্ধ আছে। রাতে চলবে। যদিও মানুষজন এসে গাড়ি না পেয়ে ফেরত গেছে। তবে ওই সংখ্যা কম। দিনের বেলায় যেতে না পারলেও রাতের গাড়িতে যাবে।’

অন্যদিকে, স্টেশন রোডের বিআরটিসি বাস কাউন্টার, বাঁধন পরিবহন, মাসুম এন্টারপ্রাইজ, গ্রীন লাইন পরিবহন, শ্যামলী এন আর সার্ভিসসহ বেশ কয়েকটি বাস কাউন্টার বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।

কাউন্টার বন্ধ করতে করতে কথা হয় মামুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকার আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ধর্মঘট একদিন মানা যায়। সাধারণ মানুষের কাছে এসব ধর্মঘট কোনো মানেই রাখে না। প্রত্যাহার না করলেও গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হবে। এই সরকারের আমলে এমন ধর্মঘট, হরতাল এসবের পরোয়ানা করে না সাধারণ মানুষ।’ 

এদিকে, আজ (রবিবার) দুপুরে পরিবহন ধর্মঘট নিরসনের জন্য পরিবহন মালিক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে বসার কথা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী দপ্তরের প্রতিনিধিদের। এরপরই ধর্মঘট প্রত্যাহারের আশা দেখছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। 

প্রসঙ্গত, শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে জরুরি সভা শেষে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দেয় বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

এর আগে, ২২ এপ্রিল ওই ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এতে আহত হন আরও এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার প্রতিবাদে টানা চারদিন সড়ক অবরোধ করেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা। এতে ৩টি বাস পুড়িয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আগামী ১১ মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়