আনোয়ারার রহিমা ঘর পেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিলেন নিজের সেলাই করা কাঁথা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ২৬ এপ্রিল ২০২২
আনোয়ারার রহিমা ঘর পেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিলেন নিজের সেলাই করা কাঁথা

আনোয়ারা উপজেলার বারাখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা থেকে যুক্ত হন রহিমা খাতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারাখাইন ইউনিউনের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পের রহিমা খাতুন চার মেয়ে নিয়ে ভাড়া বাসায় দিন কাটাতেন অভাবে অনটনে। সেই রহিমা এখন থাকেন পাকা ঘরে। পেয়েছেন দুই শতক জমির মালিকানাও। তার ভাষ্যমতে তা হলো— এ যেন ফাইভ স্টার হোটেল! বাড়ি যেমন সুন্দর; তেমনি একদিকে পাহাড় আর অন্যদিকে সমুদ্র। সেই সুখানুভূতি নিয়েই মঙ্গলবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে হাজির হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে। 

যাঁর উপহার হিসেবে এই জমি-ঘর। তাও আবার রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পেরে কি সেই সুযোগ হাতছাড়া করবেন কেউ? তেমন সুযোগ হাতছাড়া করেননি আনোয়ারা উপজেলার বারাখাইন ইউনিউনের রহিমা খাতুনও। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের কাছ থেকে মাইক পেয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চট্টগ্রামের ভাষায় জানতে চান— ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসসালামু আলাইকুম। কেন আছোন অনে?

এরপর চোখে আনন্দ অশ্রু নিয়ে এক নাগাড়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বলে গেলেন তার না বলা অনেক কথা। রহিমা খাতুন শেষ দিকে এসে প্রধানমন্ত্রীকে নিজের হাতে সেলাই করা দুটি কাঁথা দেখিয়ে উপহার দেওয়ার মনোবাসনার কথা জানান। আর সঙ্গে সঙ্গেই সরকার প্রধানও তা নিতে সানন্দে রাজি হয়ে গেলেন। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ঘর উপহার পাওয়া রহিমা থেকে কাঁথা দুটি গ্রহণও করেছেন। এখন সেগুলো ড্রাইওয়াশ করে প্রধানমন্ত্রীর বাসায় পাঠানোর অপেক্ষা।  

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকালে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ঈদের উপহার হিসেবে প্রায় ৩৩ হাজার পরিবারকে ঘর তুলে দেওয়ার সময় গণভবন থেকে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আনোয়ারা উপজেলার বারাখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা থেকে যুক্ত হন রহিমা খাতুন। 

এসময় রহিমা খাতুন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসসালামু আলাইকুম। কেন আছোন অনে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেরে সরাসরি চাই এরে অনোল্লে কথা হইবার মতো ভাষা আর মুখোদি নো আইয়ির। অনেরে দেহিয়েরে এতো যে খুশি লাগের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার নাম রহিমা। আর চার গো মেয়ে। আই চার গো মেয়ে লই ভাড়া বাসাত ছিলাম। আর অনেক বছর ভাড়া বাসাত থাহনর পর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আই এক্কান বিল্ডিং পাই। বাড়ি ইয়েন যে এতো যে সুন্দর, এতো যে সুন্দর স্থান অত পায়। চারদিকে...একদিকে পাহাড় অন্যদিকে সমুদ্র। বিল্ডিং দেখলে মনে হয় ফাইভ স্টার হোটেলের মতো। আমি মনে করি, আমার বিল্ডিংটা ফাইভ স্টার হোটেল।’

এসময় গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত থাকা প্রধানমন্ত্রীর মুখেও ছিল হাসির ঝিলিক। শেখ হাসিনা এসময় বলেন, ‘একটা ঘর পেলে মানুষের সব কিছু পেয়ে যায়। এই ঘর পেয়ে মানুষ যখন হাসে তখন সব চেয়ে বেশি ভালো লাগে। মানুষ যেন মানুষের মতো বাঁচতে পারে সেটিই আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য। জাতির পিতা এটাই তো চেয়েছিলেন। ঈদের আগে  আজ আশ্রয়ণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে ৩২ হাজার ৯০৪ জনকে ঘর উপহার দিচ্ছি। আমি বলবো, এটা ঈদ উপহার। অবহেলিত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করার বিষয়টি অব্যাহত থাকবে।’

আনোয়ারা উপজেলার বারাখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা থেকে যুক্ত থাকা রহিমা খাতুন সরকার প্রধানকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা প্রায় ৪০ জন মানুষ আপনার ঘর পাইছি। ছোট বাচ্চাদেরকে আমি আরবি পড়াই। আর এই যে দেখছেন, এটা আমার মেয়ে, আনোয়ারা সরকারি কলেজে পড়ে। এ মেয়ে সব বাচ্চাদেরকে বাংলা, অংক, ইংলিশ এগুলো শিখায়। সব মিলে আমাদের প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকা ইনকাম হয়। এ ইনকামের টাকা থেকে আমি একটা ফ্রিজ নিয়েছি, প্রতিদিন আপনাকে দেখতে পারি মতো একটা টিভি নিয়েছি। প্রতিদিন যেন আপনাকে দেখতে পারি। ... সেজন্য টিভি নিয়েছি। এখন আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো আছি।’   

এসময় গণভবন থেকে যুক্ত হওয়া প্রধানমন্ত্রী রহিমা খাতুনের উদ্দেশ্যে ছুঁড়েন ফ্লাইং কিস। 

এরপর আবেগাপ্লুত হয়ে পড়া উপকারভোগী রহিমা খাতুন সরকার প্রধানকে উদ্দেশ্য করে হাতে নেওয়া দুটি কাঁথা দেখিয়ে আরও বলেন, ‘আমি আপনার দেওয়া ঘরের মধ্যে বসে বসে এ দুইটা কাঁথা সেলাই করছি। আপনার থেকে অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই এ কাঁথাগুলো নিতে হবে আমার কাছ থেকে। আমার থেকে মূল্যবান আর কিছু দেওয়ার নাই। এ দুইটা কাঁথা আমি বসে বসে সেলাই করছি। এ দুইটা কাঁথা আপনি আমার কাছ থেকে নিবেন। 

প্রতি উত্তর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাথা নাড়িয়ে বলেন, ‘অবশ্যই! অবশ্যই।’ 

বিষয়টি সর্ম্পকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দুটি নিজ হাতে সেলাই করা কাঁথা উপহার দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন উপকারভোগী রহিমা খাতুন। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে আমরা তার কাছ থেকে কাঁথা দুটি কিনে নিয়েছি। বেসিকলি এই কাঁথা দুটি পুরনো কাপড় দিয়ে সেলাই করা। এসব নকশী কাঁথা না। তাই আমরা ড্রাইওয়াশ করতে দিব। তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসায় তা পাঠানো হবে।’ 

জেলা প্রশাসক আরও জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে তৃতীয় পর্যায়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য নির্মিত ঘরগুলো এবারের ঈদ উপহার হিসেবে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার সারা দেশে ৩২ হাজার ৯০৪টি গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রমের সঙ্গে চট্টগ্রামের ১৪ টি উপজেলায় ১২১৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান করা হয়।  

এর মধ্যে পটিয়া উপজেলায় ৮৫টি, কর্ণফুলীতে ১০টি, আনোয়ারায় ১৩০টি, বোয়ালখালীতে ৪৫টি, চন্দনাইশে ৬৫টি, সাতকানিয়ায় ২৮টি,‌ লোহাগাড়ায় ১৪৫টি, বাঁশখালীতে ১২০টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৭০টি, রাউজানে ৫৬টি, হাটহাজারীতে ২৪টি, ফটিকছড়িতে ৩৯০টি, সীতাকুণ্ডে ২৮টি ও‌ মিরসরাইয়ে ২০টি সহ সর্বমোট ১২১৬টি ভূমিহীন অগ্রিম পরিবারকে ঘর প্রদান করা হবে। 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আরো জানান, এর আগে চট্টগ্রাম জেলায় প্রথম পর্যায়ে ১৪৪৪টি  এবং ২য় পর্যায়ে ৬৪৯ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ঘর প্রদান করা হয়। 

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে ৩য় পর্যায়ে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম আনোয়ারা উপজেলার ৬নং বারখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,‌ বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের উপকারভোগী ও প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়