সন্দ্বীপে যাত্রীবাহী বোট থেকে নামতে গিয়ে ‘নিখোঁজ’ বৃদ্ধের খোঁজ মিলেনি দিনভর
সিভয়েস প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া নৌঘাট উপকূলে সার্ভিস বোট (যাত্রীবাহী ট্রলার) থেকে লাইফ বোটে (লাল বোট) নামতে গিয়ে এক যাত্রী নিখোঁজ হয়েছেন। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান মেলেনি। পাশাপাশি নিখোঁজ ব্যক্তির পরিচয়ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সার্ভিস বোটে ও ঘাটে থাকা একাধিক ব্যক্তি লালবোটে উঠতে গিয়ে একজন সাগরে ডুবে গেছে এমনটা নিশ্চিত করলেও ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। এমনকি এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ভিডিওতে একজনকে সাগরে ভেসে যেতে দেখাও যাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, নিখোঁজ ব্যক্তি একজন বৃদ্ধ। সকাল সাড়ে ১০ টায় চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ যাওয়া সার্ভিস বোট থেকে লালবোটে উঠার সময় ওই বৃদ্ধ নদীতে পড়ে গেছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তানভীর মাহমুদ সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা সন্দ্বীপের কূলে যাওয়ার পর লালবোট দিয়ে যাত্রীদের সার্ভিস বোট থেকে কূলে নিয়ে পৌঁছে দেয়ার সময় এই ঘটনা ঘটে। প্রথমে দুইটি বোট যাত্রীদের কূলে নামিয়ে দেয়। তৃতীয় লালবোটটিতে উঠার সময় ওই লোকটি পা ফসকে নদীতে পড়ে যায়। সাথে সাথেই লালবোট ও সার্ভিস বোট থেকে বৃদ্ধের উদ্দেশ্যে রশি ছুড়ে মারা হয়। তবে তিনি সেটা ধরতে পারেননি তাকে স্রোত দক্ষিণ দিকে টেনে নিতে থাকে। ওই সময় লালবোটটাও ঘুরিয়ে তার দিকে নেয়া হয়। কিন্তু লালবোট ঘুরাতে কিছুক্ষণ সময় লাগছিলো। এতে করে লোকটা অনেক দূরে সরে যায়।’
স্রোতের সাথে পেরে না উঠে এক পর্যায়ে লোকটি ডুবে যায় নিশ্চিত করে তানভীর মাহমুদ বলেন, ‘তবুও কিছুক্ষণ লালবোট তার দিকে এগোয়। কিছুটা কাছাকাছি গিয়ে আবারও রশি ছুড়ে। সেবারও ওই বৃদ্ধ রশি ধরতে ব্যর্থ হয়। এরপর বোট আরও কাছে নিয়ে একজন তার দিকে হাত বাড়িয়েছিল ওই মুহুর্তেই লোকটা ডুবে যায়। আমার সামনেই তিনি ডুবে গেছেন। এরপরও সেখানে আমরা ২০ মিনিট ছিলাম। কিন্তু ২০ মিনিটের মধ্যে তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে স্পীডবোট দিয়েও তাঁকে খোঁজা হয়।’
ডুবে যাওয়া লোকটির বিবরণ দিয়ে তানভীর মাহমুদ বলেন, ‘ডুবে যাওয়া ওই বৃদ্ধের বয়স আনুমানিক ৬০ বছর হবে। তার গায়ে সাদা শার্ট ও প্যান্ট ছিলো। সম্ভবত তার সাথে তার কোন আত্মীয় স্বজন ছিলেন না। কারণ তেমন কাউকে ব্যক্তিগতভাবে তার জন্য কথা বলতে দেখিনি। যদিও যাত্রীরা সকলেই প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছিল তবে তাদের মধ্যে কেউই তার স্বজন ছিল বলে মনে হয়নি।'
এদিকে ঘাট ইজারাদারের লোকজন দাবি করছেন, যিনি নদীতে পড়ে গেছেন তিনি উঠে বাড়িও চলে গেছেন। যদিও এর স্বপক্ষে এখন পর্যন্ত কোন প্রমাণ তারা উপস্থাপন করেন নি।
অন্যদিকে সাইফুল ইসলাম নামে আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী যিনি চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে সন্দ্বীপ ঘাটে অবস্থান করছিলেন তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘একজন লোক নদীতে পড়ে গেছেন এটা আমরা নিশ্চিত। এরপরও আমি অনেকক্ষণ ঘাটে ছিলাম। কিন্তু তাকে পাওয়া গেছে বা তিনি উঠে বাড়িতে চলে গেছেন এমন কিছুই শুনিনি। বাড়িতে আসার পর এখন শুনছি যে উনি উঠে বাড়িতে চলে গেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘একজন লোক নদীতে পড়েছেন এমনটা শুনেছি। ঘাট ইজারাদার বলছেন যিনি পড়েছেন তিনি উঠে চলেও গেছেন। তবে সেই যাত্রীর বিষয়ে কেউই কোন তথ্য এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে দিতে পারেনি। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছি।’
তবে সন্দ্বীপ চট্টগ্রাম যাতায়াত করতে গিয়ে নদীতে পড়ে নিখোঁজ হওয়া ও ঘাট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সেটি অস্বীকার করার একাধিক ঘটনা আছে। আজকের পত্রিকার সন্দ্বীপ প্রতিনিধি মিজানুর রহমান টিটু যিনি নিজেও এমন একটি ঘটনার ভুক্তভোগী।
তিনি সিভয়েসকে বলেন ,‘কয়েক বছর আগে আমার এক জেঠাতো ভাই ভুট্টো চৌধুরী একই কায়দায় নিখোঁজ হয়েছিলেন। তিনি সরকারি চাকরি পেয়েছিলেন। চাকরী পাওয়ার পর তিনি ঢাকা থেকে সন্দ্বীপ আসছিলেন। ঘাটে এসেও উনার মায়ের সাথে উনার কথা হয়েছিল। এরপর আর তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে আমরা জানতে পারি বৈরি আবহাওয়ার কারণে তিনি বোট থেকে পড়ে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা ঘাট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে ঘাট কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছিল কোন যাত্রী নয় মালের বোঝা নদীতে পড়েছিল। কিন্তু আমার জেঠাতো ভাইকে আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশ্য পরিবার ছাড়া অন্য কারও পক্ষ থেকে তাকে খোঁজাও হয়নি।’
এর আগে গত ২০ এপ্রিল সন্দ্বীপ উপকূলে একই ঘাটের চলাচলকারী একটি স্পিডবোট দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিন শিশুসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছিল। তার আগে ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল লালবোট ঢুবে ২৩ জন মানুষ মারা যান। তারও আগে একই ঘাটে সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা নিজেও জাহাজ থেকে নামতে গিয়ে নদীতে পড়ে যান।
চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে সব ঘাট বন্ধ রেখে একমাত্র ঘাট হিসেবে সচল রাখা হয়েছে কুমিরা গুপ্তছড়া নৌঘাটটি। সেই ঘাটে ব্যাপক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে গত এক যুগ ধরে ক্রমাগত কথা বলছেন দ্বীপটির বাসিন্দারা। তবে এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোন পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নিতে দেখা যায়নি।