Cvoice24.com

ঈদে ৩৬ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে চট্টগ্রামে!

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৫২, ২৩ মার্চ ২০২৩
ঈদে ৩৬ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে চট্টগ্রামে!

ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। ছবিটি বুধবার টেরীবাজার এলাকা থেকে তোলা।

বছর ঘুরে আবার এলো পবিত্র রমজান মাস। সারাবছর এ মাসটির দিকেই মুখিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। কেননা রোজার শুরুতেই ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় ঈদের আগমনী বার্তা। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত— সবারই টার্গেট ঈদের নতুন জামা। তাই ব্যবসায়ীরা বছরজুড়ে অপেক্ষায় থাকেন ঈদ বাজারের জোয়ার ধরতে। এবার ঈদ বাজার ঘিরে চট্টগ্রামে ৩৬ হাজার কোটি টাকার ব্যবসার প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। করোনার ধকল কাটিয়ে ব্যবসায়ীদের জন্য এটি দ্বিতীয় ‘ঈদ’।

ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, চট্টগ্রাম মহানগর ও আশপাশে প্রায় ৩ লাখের মতো দোকান রয়েছে। এরমধ্যে ৬২ হাজার পোশাকের দোকান। বাকিগুলো জুতা, কসমেটিকস, বেল্ট, লুঙ্গি, টুপি, আতরসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর। সবমিলিয়ে এবার প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা। যদিও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কমবেশিও হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।

নগরজুড়ে সাজসাজ রব

বাহারি আলোকসজ্জায় বর্ণিল হয়ে উঠেছে নগরের সব অভিজাত মার্কেট-শপিং মল। শুধু অভিজাত নয়, মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তদের বিপণী বিতান-দোকানপাটগুলোও ঝলমলে করছে আলোতে।

নগরের সানমার ওসান সিটি, ইউনেস্কো সেন্টার, খুলশি টাউন সেন্টার, এপোলো শপিং কমপ্লেক্স, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, আমিন সেন্টার, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, আখতারুজ্জামান সেন্টার, অলংকার শপিং কমপ্লেক্স, ফিনলে স্কয়ার, কেয়ারি, লাকি প্লাজা, সেন্ট্রাল প্লাজা, পাহাড়তলি সিডিএ মার্কেট ও নিউ মার্কেট বর্ণিল সাজে সেজেছে। এসব শপিংমলগুলোতে বাহারি ডিজাইন ও নকশার পোশাক পণ্য মজুদ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এর পাশাপাশি নগরের রেয়াজুদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরিবাজার, তামাকুমুন্ডি লেনসহ ছোট বড় বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করেছেন। 

বুধবার (২২ মার্চ) নগরের নিউমার্কেট, জিইসি, প্রবর্তক মোড়, খুলশী, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে বাহারি ডিজাইন ও রঙের পোশাক এনে দোকানের ভেতরে ও প্রদর্শনীতে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি রিয়াজুদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরিবাজার, তামাকুমুন্ডি লেনে পোশাক পণ্যের পাশাপাশি থরে থরে সাজানো হয়েছে জুতা, কসমেটিকস, গয়নাসহ বিভিন্ন পণ্য। পুরোপুরি ঈদের বাজার জমে না উঠলেও ঈদ বাজারের আমেজ শুরু হয়েছে শবে বরাতের পর থেকে।
  
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবছর পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের ভালো মজুদ রয়েছে। দশ রোজার পর ক্রেতা সমাগম বাড়বে। 

তিন দেশ থেকে আমদানি হয়েছে পোশাক 

রোজার ঈদকে উপলক্ষ্য করে প্রতিবছরই বিদেশি পণ্য আমদানি হয়। এবছর ভারত, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এসব দেশ থেকে শাড়ি, থ্রিপিস, প্যান্ট, শার্টসহ বিভিন্ন পোশাক আমদানি করা হয়েছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে এবছর আমদানি করা পোশাকের দাম কিছুটা বেড়েছে। ফলে বেচাবিক্রি কেমন হবে তা নিয়ে শঙ্কায় সময় পার করছেন তারা।

নগরের মিমি সুপার মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, বিদেশ থেকে পোশাক আনতে গেলে কয়েক মাস আগে থেকে পণ্যের বুকিং দিতে হয়। ডলার রেট বেশি থাকার কারণে আমাদের আমদানি খরচ বেড়েছে। তাই পোশাক মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে এবার দামটাও বেড়েছে। তার উপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ নানাবিধ সংকটে সময় পার করছেন। তাই আমরা এত টাকা বিনিয়োগ করার পরও কতটা সাড়া পাবো বুঝতে পারছি না। তবুও আশা রাখি এবছর আমাদের বেচাবিক্রি ভাল হবে। 

ফিনলে স্কয়ার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদ ইফতেখার বলেন, ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। বিপুল পণ্য মজুদ আছে। ক্রেতারা যাতে পছন্দসই কেনাকাটা করতে পারেন সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। 

পোশাক, জুতা, কসমেটিকস নিয়ে প্রস্তুত ২১ হাজার ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী 

চট্টগ্রামের যেকোনো মানুষের কাছে অতি পরিচিত নাম জহুর মার্কেট। দেশি-বিদেশি গার্মেন্টস পোশাকের সরবরাহ বেশি এখানে। ছোট-বড় সব বয়সে মানুষের চাহিদার জোগান দিতে থরে থরে সাজানো আছে শার্ট, প্যান্টসহ নানা ধরনের পোশাক সামগ্রী। জহুর মার্কেট ছাড়াও চট্টগ্রাম নগরে ২১ হাজার ভ্রাম্যমান হকার দোকান রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ১৪ হাজার হকার দোকানে পোশাক, জুতা, কসমেটিকস পণ্য বিক্রি হয়। পুরো রোজার মাসে হকারের প্রতিটি দোকানে গড় আয় থাকে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। 

জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান যুগ্ম সদস্য সচিব মো. ফজলুল আমিন বলেন, জহুর হকার্স মার্কেটের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। প্রতিবছরই বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে সাধারণ মানুষ জহুর হকার্স মার্কেটে ভিড় করেন। কারণ এখানে সুলভ মূল্যে সব ধরনের পণ্য পাওয়া যায়। এবছরও আমাদের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দামের পোশাক সংগ্রহ করেছেন। আশা করছি সপ্তাহখানেক পরে ঈদের বেচাবিক্রি শুরু হবে। এবারো ভালো সাড়া পাবো এমনটাই আশা আমাদের। 

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, এখন তো করোনা নেই, লকডাউন নেই। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের সকল ব্যবসায়ী পণ্য মজুদ করেছেন। এখন শুধু দোকানে ক্রেতা আসার পালা। প্রতি বছরই রোজার শুরুতে ক্রেতার আনাগোনা এমনিতেই কম থাকে। রোজার মাঝামাঝি সময়ে মূল বেচাকেনা শুরু হবে।

সংকটে চট্টগ্রামের ২৫শ ফ্যাশন ও বুটিক হাউস 

বিদেশি পোশাকের কারণে প্রতিবছর ব্যবসায় মার খাচ্ছে চট্টগ্রামের ২৫শ ফ্যাশন ও বুটিক হাউস ব্যবসায়ী। এরমধ্যে প্রায় ১২শ বুটিক হাউস পোশাক প্রস্তুত করে থাকেন। 

তবে ফ্যাশন ও বুটিক হাউস ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশি পোশাকের কারণে প্রতিবছরই আশানুরুপ ব্যবসা করা সম্ভব হয় না। অথচ বিদেশি পোশাকের চাইতে দেশিয় পোশাকের গুণগত মান কোন অংশে কম নয় বলে দাবি তাদের। 

ঝাউতলার পাপ্পু বুটিক হাউসের স্বত্বাধিকারী খালেদ জাফর (পাপ্পু) সিভয়েসকে বলেন, ২৬ বছর ধরে বুটিকসের কাজ করছি। আগে ঈদ উপলক্ষ্যে আমাদের মা বোনেরা প্রচুর কাজের অর্ডার দিতেন। এখন চায়না ও ভারতীয় কাপড়ের সয়লাব হওয়ায় দিনকে দিন আমাদের ক্ষতি বেশি হচ্ছে। এখন আমরা আগের মত কাজ পাচ্ছি না। আগে যেখানে সারা দিন-রাত কাজ করতে হতো এখন ওইভাবে কাজ নেই বললেই চলে। তবে এখনো সময় আছে। দেখা যাক কি হয়।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়