এবার বিক্রি হচ্ছে না কোটি টাকার ভারী যন্ত্রপাতি
সিভয়েস প্রতিবেদক
![এবার বিক্রি হচ্ছে না কোটি টাকার ভারী যন্ত্রপাতি এবার বিক্রি হচ্ছে না কোটি টাকার ভারী যন্ত্রপাতি](https://www.cvoice24.com/media/imgAll/2022September/Untitled-3-2209111605-2305161117.jpg)
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিভিন্ন সময় আমদানি করা রাসায়নিক পণ্য, জ্বালানি তেল, প্লাস্টিক পণ্য বার বার নিলামে তুলেও সাড়া পায়নি কাস্টমস। এবার সে তালিকায় নতুন করে যুক্ত হতে চলেছে রাইস মিল মেশিন, এয়ার কন্ডিশনার (এসি), গাড়ির যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন ভারী যন্ত্রপাতি। বিগত পাঁচ বছরে আমদানি হওয়া প্রায় তিন কোটিরও বেশি টাকা দামের এসব যন্ত্রাংশের প্রতি কোন আগ্রহ নেই বিডারদের (ক্রেতা)। ফলে বন্দরসহ নগরের বিভিন্ন ডিপোর ভেতরে জায়গা দখল করে আছে ভারী পণ্যগুলো।
২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রাইস মিল মেশিন, রাউন্ড লগ (গোলাকার কাঠের টুকরো), এলিভেটর স্পেয়ার পার্টস (খুচরা যন্ত্রাংশ), এয়ার কন্ডিশনার (এসি), ফোর স্টোক ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আমদানি হয়। এসব পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৮১ টাকা। ভারী হওয়ায় এসব পণ্যের সঠিক ওজন নিরুপণ করতে পারছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর আগে বিক্রি করতে কয়েক দফা ভারী পণ্যগুলো নিলামেও উঠেছিল। তবে প্রতিবারই বিডারদের কাছ থেকে কোন সাড়া পায়নি কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা।
অলস পড়ে আছে তিন কোটি টাকার ভারী যন্ত্রপাতি
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রাইস মিল মেশিন আমদানি হয়েছিল। মেশিনটি বর্তমানে বন্দরের এন শেডে পড়ে আছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩৮ হাজার টাকা। ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৫৩ পিস রাউন্ড লগ (গোলাকার কাঠের টুকরো) আমদানি হয়েছিল। বর্তমানে চালানটি চট্টগ্রামে ইনকনট্রেড লিমিটেড নামের ডিপোতে রয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে চায়না থেকে ৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা দামের ৩৬ পিস এলিভেটর স্পেয়ার পার্টস (খুচরা যন্ত্রাংশ) আমদানি হয়।
২০১৯ সালে ছয় ইউনিট এয়ার কন্ডিশনার (এসি) আমদানি হয়েছিল। ৬ লাখ ৭ হাজার টাকা মূল্যের পণ্য চালানটি বর্তমানে বন্দরের সিসিটি ইয়ার্ডে পড়ে আছে। পরের বছর ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয় ৬০ ইউনিট ফোর স্টোক ইঞ্জিন। ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকার চালানটি বর্তমানে বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ডে পড়ে আছে। পাশাপাশি ২০২২ সালে ওয়েস্ট পেপার (কাগজ) আমদানি হয়েছিল। ৫৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা দামের চালানটি বর্তমানে এলায়েন্স পোর্ট লিমিটেড নামের ডিপোতে রয়েছে।
নিলামে তুললেও বিমুখ ক্রেতা
কাস্টমসের নথি যাচাই করে দেখা গেছে, সাত বছর আগে আমদানি করা রাইস মিল মেশিনগুলো ২০১৮ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত পর পর ২০ বার নিলামে তোলা হয়েছিল। ২০২১ সাল থেকে ৩৬ পিস এলিভেটর স্পেয়ার পার্টস (খুচরা যন্ত্রাংশ) নিলামে তোলা হয়েছিল চার বার। গতবছর ও চলতি বছরের শুরুতে মোট দুই বার নিলামে তোলা হয়েছিল ছয় ইউনিট এয়ার কন্ডিশনার। ২০২১ ও ২২ সালে দুইবার নিলামে তুলে কোটি টাকার ৬০ ইউনিট ফোর স্টোক ইঞ্জিন বিক্রি করতে চেয়েছিল কাস্টমস। সূত্র জানায়, যন্ত্রাংশগুলো বছরের পর বছর পড়ে থাকা, গুণগত মান ঠিক না থাকা ও ওজনে ভারী হওয়ায় ক্রেতা টানতে পারছে না কাস্টমস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাস্টমস হাউসের এক কর্মকর্তা সিভয়েসকে বলেন, বিভিন্ন শেডে কিছু ভারী যন্ত্রপাতি রয়েছে। ভারী হবার কারণে এদের সঠিক ওজন নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। গত এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত নিলামে অধিকাংশ পণ্য বিক্রি হলেও মেশিনারিজ পণ্যগুলোতে কোন ক্রেতা পাওয়া যায়নি।
প্রচুর চাহিদা তবুও শেডে নয় বছরের পুরনো ফেব্রিক্স পণ্য
২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চায়না থেকে কালো রঙ্গের দুই রোল গার্মেন্টেসের ফেব্রিক্স পণ্য আমদানি হয়। চালানটি ২০১৪ সাল থেকে টানা ১৯ বার বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে কাস্টমস। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে আমদানি করা ২২ হাজার টাকা দামের এক রোল ফেব্রিক্স পণ্য গতবছর ছয়বার নিলামে তুলেও বিক্রি হয়নি। ২০১৭ সালে আমদানি করা তিন রোল ফেব্রিক্স পণ্য বিক্রি করতে ১৮ বার নিলামের আয়োজন করে কাস্টমস। বিক্রি করতে না পারায় পণ্যগুলো বন্দরের বিভিন্ন শেডে পড়ে আছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি নতুন করে আট লটে ৩৫০ রোল ফেব্রিক্স পণ্য বিক্রির চেষ্টা করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সবমিলিয়ে এসব পণ্যের বিক্রয়মূল্য প্রায় ৩৮ লাখ ৬৬ হাজার ৩০৩ টাকা। কাস্টমসের দাবি, নতুন করে তোলা ফেব্রিক্স পণ্যগুলোর গুণগত মান ভালো আছে। তাই পণ্যগুলো নিলামে তুললে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, আমাদের দেশে ফেব্রিক্স পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তবে আমদানি করার পর পণ্যের গুণগতমান খারাপ পেলে অনেক সময় আমদানিকারকরা এসব পণ্য খালাস করে না। পাশাপাশি ফেব্রিক্স পণ্যের গুণগতমান ঠিক না থাকায় বিডাররাও এসব পণ্য কিনতে আগ্রহ দেখায় না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গার্মেন্টস খাতে নির্দিষ্ট ডিজাইন, কোয়ালিটি বা সাইজের ফেব্রিক্স পণ্য ব্যবহার করা হয়। তাই অনেক সময় ফেব্রিক্স এর গুণগতমান ভালো থাকা স্বত্ত্বেও কারখানা মালিকরা নিলামে অংশ নিতে পারেন না।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার নাহিদুন্নবী বলেন, বিভিন্ন শেডে পড়ে থাকা মেশিনারিজ, কেমিক্যাল, টেক্সটাইল, ফেব্রিক্স মটর পার্টসসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির চেষ্টা চলছে। তাই প্রতি মাসেই নিলামের আয়োজন করা হচ্ছে। কারণ আমরা চাই পণ্যগুলো বিক্রি হয়ে যাক। পাশাপাশি গত এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত নিলামে আমরা বেশকিছু ফেব্রিক্স পণ্য বিক্রি করতে পেরেছি। একেবারে পুরনো হয়ে গেলে বা গুণগতমান হারালে ক্রেতার আগ্রহ কম থাকে। কারণ ক্রেতারা দেখেশুনেই নিলামে অংশ নিচ্ছেন। তবে আমরা নতুন করে যে ফেব্রিক্স পণ্যগুলো নিলামে তুলবো সেগুলো আপাতদৃষ্টিতে গুণগতমান ভাল আছে বলে মনে হয়েছে। তাই আশা করছি ভবিষ্যতেও আমরা ভালো সাড়া পাবো।
সিভয়েস/টিএম