Cvoice24.com

তিনশো কোটি টাকা পাচারে জড়িত চট্টগ্রামের ১২ সিএন্ডএফ এজেন্ট

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:১১, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
তিনশো কোটি টাকা পাচারে জড়িত চট্টগ্রামের ১২ সিএন্ডএফ এজেন্ট

টিশার্ট, টপস ও লেডিস ড্রেস রপ্তানির নামে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পাচার করা হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ১০ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান ও চট্টগ্রামের ১২টি সিএন্ডএফ এজেন্টের যোগসাজশে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদিআরব, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এ টাকা পাচার হয়েছে। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) পাঠানো কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১ হাজার ২৩৪ চালান দেখিয়ে ৯ হাজার ১২১ মেট্রিকটন পণ্য রপ্তানির কথা বলে তারা মোট ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলার পাচার করেছে। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

ঢাকার ওই রপ্তানিকারক ১০ প্রতিষ্ঠানগুলো হল—সাভারের প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, গুলশানের ফ্যাশন ট্রেড, উত্তরার এমডিএস ফ্যাশন, গাজীপুরের হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড, বনানীর থ্রী স্টার ট্রেডিং, মিরপুরের ফরচুন ফ্যাশন, কচুক্ষেতের অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড, গাজীপুরের পিক্সি নিটওয়্যারস লিমিটেড, শাহবাগের স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড ও ক্ষিলখেতের ইডেন স্টাইল টেক্স।
অর্থ পাচারে জড়িত ওই পোষাক কারখানার সাথে জড়িত চট্টগ্রামের ১২ সিএন্ডএফ এজন্টরা হলেন— নগরের আগ্রাবাদের এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পরাগ এসএমএস লিমিটেড ও এনএইচ কর্পোরেশন, নগরের খাতুনগঞ্জের রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল ও পান বেঙ্গল এজেন্সী লিমিটেড, নগরের দেওয়ানহাট এলাকার এম এ জে শিপিং কর্পোরেশন, সুগন্ধা এলাকার জে জে  এসোসিয়েটস্, বায়েজিদ এলাকার এক্সপ্রেস ফরোয়ার্ডারস, সদরঘাট এলাকার মেসার্স এ কে এন্টারপ্রাইজ ও এম/এস এ.কে এন্টারপ্রাইজ এবং ফকিরহাটের কে আর এস সি এন্ড এফ লিমিটেড।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের পাঠানো তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে ঢাকার প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড ৩৮৩টি ও ২০২০ সালে ৮টি পণ্যের চালান সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়াায় রপ্তানির কথা বলে ৯২ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ২৪৫ টাকা পাচার করে। ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০, এ তিন  বছরে ঢাকার ফ্যাশন ট্রেড নামের প্রতিষ্ঠানটি মোট ২৪৬টি পণ্য চালান দেখিয়ে ৬৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার ২৩৬ টাকা পাচার করেছে। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালে গাজীপুরের হংকং ফ্যাশন লিমিটেড সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, নাইজেরিয়া, কুয়েত, কানাডায়  ৪০ কোটি ৬৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬ টাকা পাচার করে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ৫৯টি পণ্যচালান রপ্তানির দেখিয়ে ১২ কোটি ৯৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৩ টাকা পাচার করে মিরপুরের ফরচুন ফ্যাশন।

এছাড়াও ২০২০ সালে ঢাকার কচুক্ষেত এলাকার অনুপম ফ্যাশন লিমিটেড ৭ কোটি ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ২০৩ টাকা পাচার করে পোষাক রপ্তানি দেখিয়ে। একই বছরে  টঙ্গির পিক্সি নিট ওয়্যারস লিমিটেড ৫ কোটি ৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৪১ টাকা ও ঢাকা শাহবাগের স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড ২ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৯০২ টাকা ও ইডেন স্টাইল টেক্স ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৬ টাকা পাচার করেছে। এ টাকা পাচার হয়েছে ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, পানামাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

বারবার রপ্তানির নামে দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে এবং এতে চট্টগ্রামের সিএন্ডএফ এজেন্টদের সক্রিয় সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে তা উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সিভয়েস প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিটা সভায় সকল সদস্যদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত না হবার আহ্বান জানাই। তবুও লোভের ফাঁদে পড়ে অনেকে এসব কাজে জড়িত হচ্ছেন। কাজেই অপরাধী যেই হোক না কেন তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য পাঠানোর সাথে জড়িতদের সকল স্তরে নজরদারি বাড়াতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বশির আহমেদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো টি -শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, পোলো শার্ট, ইত্যাদি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, নাইজেরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি দেখিয়ে অর্থ পাচার করেছে। এই দশটি প্রতিষ্ঠানকে পর্যালোচনা করলে বিল অব এক্সপোর্ট ও ইএক্সপিতে দেওয়া তথ্যের মধ্যে অমিল পাওয়া যায়। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং অনুসন্ধানসহ ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সর্বশেষ