দেশি পেঁয়াজের বিদায়, অস্থির হচ্ছে বাজার
মিনহাজ মুহী, সিভয়েস২৪
শেষ দিকে এসে বাজারে ঝাঁজ বাড়াচ্ছে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ। ভারতীয় পেঁয়াজের অভাবে অস্থির বাজারে স্বস্তি দেয়া এ পেঁয়াজের দাম বাড়ছে দিনে দিনে। সরবরাহ কমার অজুহাতে পাইকারি বাজারে একলাফে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
পাইকাররা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাচ্ছে। বাইরে থেকেও পেঁয়াজ আসছে না। চোরাইপথে কিছুটা পেঁয়াজ এলেও চাহিদার তুলনায় নগন্য। সবমিলিয়ে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, ফলে দাম বাড়ছে। দুয়েক দিনের মধ্যে সরবরাহ না বাড়লে পেঁয়াজের বাজার আরো অস্থিরতা সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে।
বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের তথ্যমতে, বর্তমানে পাইকারিতে প্রতিকেজি পেঁয়াজ (মুড়িকাটা) ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বুধবারও বিক্রি হয়েছিল প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৯৫ টাকায়।
আমিনুল ইসলাম নামে এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় বাজারে সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া দেশি পেঁয়াজ (মুড়িকাটা) এখন শেষের দিকে। সেই কারণে এসব পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। তাই দামও বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য অবশ্যই আমদানি করতে হবে। সামনে রমজানকে কেন্দ্র করে পেঁয়াজ আমদানি না হয় তাহলে দাম আরও বাড়বে। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে এসেছে। যা আছে তাতে কাভার করা সম্ভব না। পেঁয়াজের সংকট আছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘বর্তমানে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। সামনে রমজান। এ সময় সরকারিভাবে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। কিছু পেঁয়াজ আমদানি না করলে সংকট দেখা দেবে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে পেঁয়াজের দাম।’
খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘এখন তো মুড়িকাটা পেঁয়াজ শেষ পর্যায়ে। আমদানিও নেই। পেঁয়াজের দাম ভারতেও বেশি, এখানেও বেশি। এখন দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকা আর ভারতীয় ১১৫ টাকা।’
রমজানকে কেন্দ্র করে বাড়তে পারে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দাম বাড়া-কমা আমাদের হাতে কিছুই নেই। সরকারিভাবে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। আমদানি খবর না পাওয়া পর্যন্ত দাম কখন বাড়ে কখন কমে কিছুই বলতে পারছি না। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ আসতে শুরু করলে দাম কমে যাবে।’
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘কৃষকদের কাছে আর পেঁয়াজ নেই। তাদের পেঁয়াজ তোলা শেষ। এখন দাম বেড়েছে। আমাদের যখন দেশি পেঁয়াজ শেষ; রমজান উপলক্ষে সরকারের উচিত ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করার পারমিটের ব্যবস্থা করা। যদি পেঁয়াজ আমদানি করা যায় তাহলে আবার দাম কমে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামনে পেঁয়াজের চাহিদা আরও বাড়বে। যদি এর মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি না হয় তাহলে দাম আরও বাড়তে পারে।’
এদিকে পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। চট্টগ্রামের বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কোনো পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে খুচরা বাজারেও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, ‘শুক্রবার রাতেও মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১০০ টাকায় বিক্রি করেছি। তবে শনিবার দাম বেড়েছে। ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।’
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানের বাড়তি দামে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়েছে তাই আমাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমাদের কেনা দাম হিসাব করতে হয়। সেই দাম হিসাব করেই আমরা বিক্রি করি।’