Cvoice24.com

পুঁজিবাজারে হতাশা : খুঁড়িয়ে চলার শঙ্কা

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ৭ জুন ২০২৪
পুঁজিবাজারে হতাশা : খুঁড়িয়ে চলার শঙ্কা

নাজুক পুঁজিবাজারের হাল ধরতে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কৌশলের দিকে তাকিয়েছিলো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। তারা চেয়েছিলো, সরকার যেন ব্যাংকের উপর ঋণ নির্ভর না হয়। সরকার পুঁজিবাজারের উপর আস্থা রাখলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও আশ্বস্ত হবে। পাশাপাশি চেয়েছিলো প্রণোদনা। অথচ জাতীয় অর্থ বাজেট ২০২৪-২৫ পুঁজিবাজারের প্রস্তাবনার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। উল্টো যোগ করেছে মূলধনী মুনাফার ওপর কর। তাই হতাশ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

জাতীয় অর্থবাজেট ২০২৪-২৫ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে বিশাল এ প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে এক লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। সবচেয়ে বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে অর্থবাজারের ব্যাংক খাত থেকে। ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রে থেকে গতবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার কোটি টাকা থাকলে এবার তা কমিয়ে আনা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকায়। এছাড়া অন্যান্য খাত থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনী মুনাফায় কোনো কর না বসলেও ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা অর্জন করলে তার ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। তবে করপোরেট প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে যে মুনাফাই করুক, সেই মুনাফার ওপর কর আরোপ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি যদি তাদের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার বাজারে ছাড়ে, তাহলে ওই কোম্পানির ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে কর্পোরেট কর আগের মতোই ২০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। শর্ত পূরণ না করলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে এ করহার হবে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর যেসব কোম্পানি পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের কম শেয়ার বাজারে ছাড়বে, তাদের ক্ষেত্রে শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে কর্পোরেট করহার হবে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ ধরনের কোম্পানির ক্ষেত্রে যারা শর্ত পালন করবে না, তাদের ক্ষেত্রে এ করহার হবে ২৫ শতাংশ।

জোবায়ের নামে একজন শেয়ার বাজারের ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারী বলেন, ‘এখন বাজারের অবস্থা খুব খারাপ। বিনিয়োগকারীরা ক্যাপিটাল গেইন তো দূরের কথা, লোকসানে আছে। তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত করহার ব্যবধান কমানো হয়েছে। এতে নতুন করে ভালো কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার উৎসাহ পাবে না। করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ায় মানুষ শেয়ার বাজার থেকে সরে আসবে। একই অবস্থা সঞ্চয়পত্রেও হবে। ব্যাংকের এফডিআরে লাভ বেশি হলে সরকারের সঞ্চয়পত্র মানুষ কিনবে কেন?’

বাজেট পর্যালোচনা নিয়ে কথা হলে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুর রহমান মজুমদার এফসিএ সিভয়েস২৪-কে বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের কোনো পরিকল্পনা প্রতিফলিত হয়নি। বরং আমরা দেখেছি, সাময়িক অর্থনীতিতে যে প্রেশার রয়েছে সেটাকে মোকাবেলা করায় মনযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, যদি ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেট স্ট্র্যাকচার ইনক্লুডিং ক্যাপিটাল মার্কেটকে রি-অর্গানাইজ করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া না হয়, তাহলে সাময়িক স্বস্তিদায়ক যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেটাও শেষ পর্যন্ত কতটুকু স্বস্তি দিতে পারবে তা প্রশ্ন।’

বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করার যোগান নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্যাপিটাল মার্কেটে যেসব প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিলো- বিশেষ করে মানি মার্কেটে (ব্যাংকিং খাত) যে অব্যবস্থাপনা, সেখান থেকে চাপ কমিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেটকে আরও সম্প্রসারণ করার কথা বলা হয়েছে এবং বন্ড মার্কেটের জন্য যা বলা হয়েছিলো, তার কোনো প্রতিফলন আমরা দেখি নাই। ক্যাপিটাল মার্কেটের গুণগত সম্প্রসারণ করার কথা যা বলছিলাম, সম্প্রসারণ করতে গেলে লিস্টেড কোম্পনির সংখ্যা যেমন বাড়াতে হবে, বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও বাড়াতে হবে। এ জায়গায় বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত করার মতো কোনো ইলিম্যান্ট (উপাদান) আছে বলে আমাদের মনে হয় না।’

অর্থবাজারকে শক্তিশালি করতে সরকারের আগ্রহ কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেট স্ট্র্যাকচারকে শক্তিশালি করা প্রয়োজন। মানি মার্কেটটা উইক (দুর্বল) হয়ে আছে। আবার ক্যাপিটাল মার্কেটও এগুতে পারছে না। এটা ঠিক করতে হলে একটা টেকসই মার্কেট কাঠামো দরকার। এ কাঠামো গড়ে তুলতে হলে পলিসি বাজেটে থাকা দরকার। সেটা মনে হচ্ছে সরকারের প্রাইয়োরিটির (অগ্রাধিকার) মধ্যে নাই। পলিসি সার্পোট হলে বাজারের একটা সম্প্রসারণ হতো। ভালো কোম্পানির সংখ্যা বাড়তো। বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়তে পারতো। পলিসি না থাকায় এখন ঝুঁকি থাকবে, সময় বেশি লাগবে।’

পুঁজিবাজারে মন্দা ঠেকাতে বাজেটে কোনো প্রতিফলন দেখা না যাওয়া প্রসঙ্গে কথা হয় অর্থনীতিবিদ আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সেলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ক্যাপিটাল খাতটা অনেক বড়। সে তুলনায় বাংলাদেশেরটা সংকুচিত। এর একটি কারণ হলো- পুঁজিবাজারে যারা বিনিয়োগ করছেন, তাদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট না। কোথায় বিনিয়োগ করলে এই বাজার থেকে লাভ আসবে তা না বোঝার কারণে কিছু লোক এ বাজার থেকে ফায়দা তুলে শক্তিশালি হয়ে উঠছে। সরকার যদি পলিসি ঠিক করার মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে যে অর্থ বাইরে চলে গেছে, সেগুলো ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতো, তাহলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসতো। কিন্তু বাজেটে সে ধরনের কোনো উদ্যোগের প্রতিফলন দেখা যায়নি।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়