এবার নগরে নামছে এসি বাস

রবিউল রবি, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১২:১০, ৬ মে ২০২৪
এবার নগরে নামছে এসি বাস

চট্টগ্রাম নগরে গণপরিবহনের অবস্থা খুবই নাজুক। প্রায় সব-রুটেই লক্কর-ঝক্কর বাসের ভিড়ভাট্টা। এবার লক্কর-ঝক্কর বাসের দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে যাচ্ছেন কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত ১৪ নম্বর রুটের যাত্রীরা। ওই পথে নামছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস। ইতোমধ্যে ১৩টি বাস প্রস্তুত করা হয়েছে রাস্তায় নামানোর জন্য। মে মাসের শেষ দিকে রাস্তায় নামবে এসব বাস। যেখানে সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ২০ টাকা, সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে বিশেষ ছাড়। 

‘চট্টলা চাকা’ ব্যানারে বাসগুলো চলবে শান্তি পরিবহন লিমিটেডের অধীনে। বাসগুলোর চ্যাসিস ভারতীয় টাটা কোম্পানির এবং বডি তৈরি দেশে। বাসের আসন সংখ্যা ৩৮টি। কাউন্টারভিত্তিক সার্ভিস হওয়ায় আসনের অতিরিক্ত যাত্রী ওঠার সুযোগ থাকবে না বাসটিতে। 

ট্রাফিক পুলিশ বলছে, কোম্পানিভিত্তিক কাউন্টার সার্ভিস বাড়লে যাত্রীদের সেবার মানও বাড়বে। ঢাকার আদলেই বন্দরনগরীতে চালু হবে এ সার্ভিস। এ উদ্যোগে শতভাগ সুফল আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে তুলনামূলক ভালো সার্ভিস পাবে যাত্রীরা। 

জানা গেছে, ২০২৩ সালের মার্চে মাসে এসি বাস সার্ভিসের অধীনে ৩০টি বাস চলাচলের অনুমতির জন্য বিভাগীয় নগর পরিবহন কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর আবেদন করেন শান্তি এক্সপ্রেস প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মনজুর আলম চৌধুরী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নগরের সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এই বাস সার্ভিস চালুর সুপারিশ করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি (আরটিসি)। এরপর চলতি বছরে মেলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অনুমতি। 

শান্তি এক্সপ্রেস (প্রাঃ) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আমাদের ২০টি বাসের মধ্যে ১৩টি বাস শিগগিরই রাস্তায় নামবে। রোজার ঈদের পরেই এ সার্ভিস চালু করার কথা ছিলো। ডলার সংকটের কারণে খানেকটা দেরি হয়েছে। এসি বাস হওয়ায় আমাদের কাউন্টার একটু কম হবে শুরুতে। কাউন্টারগুলো যাত্রীর চাপ অনুযায়ী হলুদ এবং লাল—ক্যাটাগরিতে ভাগ করে দেওয়া হবে।’

ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সব পর্যায়ের যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে আমরা সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা সর্বোচ্চ ১০০ টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিগগিরই ভাড়ার চার্ট অনুমোদনের জন্য বিআরটিএ’তে পাঠানো হবে। নন এসি বাস এবং রাজধানীতে চলাচল করা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত অন্যান্য বাসের সাথে সমন্বয় করেই এই বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। আমাদের বাসে সিটের বাইরে যাত্রী নেওয়ার সুযোগ নেই। যাত্রীরা নিরাপদে-নির্বিঘ্নে এই বাসে আরোহন করতে পারবেন।’ 

শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা রাখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসে হাফ ভাড়া নেওয়ার প্রজ্ঞাপন না থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কার্ড সিস্টেম করা হবে। ওই কার্ড দিয়ে যাতায়াত করলে তারা নির্দিষ্ট পরিমাণে ভাড়া ছাড় পাবে।’

‘চট্টগ্রাম শহরে পায়ে চালিত রিকশার কারণে বেশি যানজট হচ্ছে। নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ মোড়ে যদি এসব রিকশা তুলে দেওয়া হয় তবে যানজট অনেকটাই কমে আসবে। তখন মানুষ গণপরিবহণমুখী হবে। এটা আমাদের একটি দাবি। আর ট্রাফিক সিস্টেমকেও আরও আধুনিক করতে হবে।’-যোগ করেন তিনি।

কাউন্টারভিত্তিক বাসের ফলে পারমিটবিহীন বাসের আধিক্য কমে যাবে উল্লেখ করে নগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন টিটো সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘কোম্পানিভিত্তিক কাউন্টার সার্ভিস চালু হলে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং যেমন বন্ধ হবে একইসাথে যাত্রীদের সেবার মানও বাড়বে। তবে, কাউন্টার সার্ভিসের শর্তগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলতে হবে। এই উদ্যোগকে আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাবো।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কাউন্টারভিত্তিক বাস সার্ভিসের ফলে নগরীতে ফিটনেস এবং পারমিটবিহীন বাস চলাচল আস্তে আস্তে কমে যাবে। ইতোমধ্যে আমরা জরিপ করে অনেক বাসের পারমিট বাতিলের জন্য বিআরটিএ’তে সুপারিশও করেছি।’ 

ঢাকার আদলেই চট্টগ্রামেও কাউন্টারভিত্তিক এ বাস সার্ভিস সেবা দিবে জানিয়ে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘কোম্পানিভিত্তিক গণপরিবহন চালু হলে যাত্রীরা নানামুখী সুবিধা পাবে। একই কোম্পানির একাধিক বাস যখন থাকবে তখন টাইমিং, রুট, স্টাফ, গাড়ির কন্ডিশন—সবই ঠিক থাকবে। সবকিছু মিলিয়ে ঢাকার গণপরিবহনে যেভাবে এসি বাস সেবা দিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেরকম উদ্যোগই চট্টগ্রামে নেয়া হচ্ছে। নতুন যেকোনো উদ্যোগে শতভাগ সুফল আসতে কিছুটা সময় লাগলেও বর্তমান সিস্টেমের চেয়ে এটি তুলনামূলক ভালো হবে।’ 

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘এই সেবা চলমান থাকবে কিনা সেটি প্রশ্ন। কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের ওপর নির্ভর করবে সেটি। তবে, সড়কে লক্কর-ঝক্কর বাস যেগুলো আছে, সেগুলো থেকে যাত্রীরা পরিত্রাণ পাবে। নতুন গাড়ি আসলে মানুষজন অবশ্যই সুবিধা পাবে।’

আইনের সমপ্রয়োগ না হলে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আসবে না দাবি করে তিনি বলেন,  ‘সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক বিভাগের আরও আন্তরিক হয়ে কাজ করতে হবে। দায়িত্বরতদের জবাবদিহীর আওতায় আনতে হবে। তাদেরকে সড়ক পরিবহন আইনের প্রয়োগ সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করতে হবে। আর আইন প্রয়োগ সবার জন্য হতে হবে সমান।’

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি একটি সভার পরে ‘চট্টলা চাকা’ বাস সার্ভিসের অনুমোদন দেওয়া হয়। গণপরিবহন মালিকদের এ ব্যাপারে আমরা সবসময় উৎসাহিত করছি। এক্ষেত্রে যাত্রীদের সেবার মানও অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।’

এর আগে ২০১৬ সালে ৬টি বাস দিয়ে নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত ১৪ নম্বর রুটে এসি বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয় প্রিমিয়ার ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস (প্রা.) লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান। তবে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরুর আগেই উদ্যোগটি ভেস্তে যায়।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়