Cvoice24.com

যুবলীগ নেতার ‘কামাই’ বেশি, আ. লীগের কম!

মিনহাজ মুহী, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৫:২৮, ২৬ মে ২০২৪
যুবলীগ নেতার ‘কামাই’ বেশি, আ. লীগের কম!

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থী। একজন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র হারুনুর রশিদ। অন্যজন চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম। ভোটের লড়াইটা যেন ‘দুই সেয়ানায়’। স্থানীয় ‘বাঘা নেতা’ বদিউল আলম, দক্ষিণের আওয়ামী লীগ নেতা প্রদীপ দাশ আর উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি নুরুল আবছার মাঠে নামলেও পরে ‘হারুনের সমর্থনে’ পিছু হটেন তিনজনই। যুবলীগ নেতা দিদারের সঙ্গে আয়ের দৌড়ে বেশ পিছিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা হারুন! তবে ‘দেনা’ বেশি যুবলীগ নেতার।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম বছরে একাই কামাই করেন ৫ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। স্ত্রী-পুত্রেরসহ মিলিয়ে তা ঠেকে ৫ কোটি ৩৮ লাখে। এর মধ্যে স্ত্রীর আয় ৭ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা। আর ছেলের ৪ লাখ ৯৫ হাজার। তিনজনের মূল আয় ব্যবসা থেকেই। এর বাইরে মাত্র ২০ হাজার টাকা আয় আসে দিদারের। স্ত্রীর আসে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা হারুনের ‘নানাবিধ’ আয়। ২ কোটি ৬ লাখ ৬১ হাজার ৩৪০ টাকা আসে তাঁর ব্যবসা থেকে। তাঁর আয়ে যোগান দেন স্ত্রীও। ব্যবসা করে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। ‘পৌর মেয়র হারুন’ বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ভাড়া থেকে পান ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

তবে দেনার বোঝা ভারী যুবলীগ নেতা দিদারের। ইউসিবিএল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখা ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক নাসিরাবাদ শাখায় তাঁর ঋণ ১০ কোটি ৩৭ লাখ ১৬ হাজার ৫৪৩। এর মধ্যে ইউসিবিএল থেকে ঠিকাদারি কাজের জন্য নিয়েছেন ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার ৫৪৩ টাকা। আর ব্যাংকের এক শাখাতেই হারুনুর রশিদের ঋণ ৭ কোটি ৮৭ লাখ ৯৯৩ টাকা। কি কারণে ‘দেনা’ তা উল্লেখ নেই। তবে এ দেনা ইসলামী ব্যাংক পটিয়া শাখায় বলে হলফনামায় ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

সহায়-সম্পদ

তাঁর স্ত্রী, পুত্র সন্তান নিয়ে ‘সম্পদশালী’ যুবলীগ নেতা দিদার। নগদ অর্থসহ ১৪ কোটি ৩ লাখ ৯ হাজার ৪২৬ টাকা সহায়-সম্পদ তাঁদের। অন্যদিকে দুই বারের মেয়র হারুনুর রশিদ অর্থবিত্ত-সম্পদে তাঁর চেয়ে পিছিয়ে। ১১ কোটি ৮১ লাখ ২২ হাজার ৭৯০ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। স্ত্রীর আছে ২১ লাখ ৩৮ হাজার ২১২ টাকার।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ‘বিত্তশালী’ দিদারের হাতে নগদ টাকা আছে ৩৬ লাখ ৭২ হাজার ৮৭৫ টাকা। ১ কোটি ৫ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৫ টাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা। ৭৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার একটি জীপ গাড়ি, ১ লাখ ৮ হাজার টাকায় কেনা ১০ ভরি স্বর্ণ, ৮০ হাজার টাকার আসবাবপত্র আছে তাঁর।

তাঁর স্ত্রীর হাতে ‘খুব বেশি’ নগদ টাকা নেই। বেশিরভাগ টাকা জমানো ব্যাংকে। ৩ লাখ ৫ হাজার ১০০ টাকা হাতে ‘রেখে’ ২০ লাখ টাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রেখেছেন তিনি। স্বামীর জীপ গাড়ি ছাড়াও তাঁর নিজের রয়েছে একটি প্রাইভেট কার। যার মূল দেখানো হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। ২ লাখ টাকার গয়নাগাটি, ৩০ হাজার টাকা ইলেকট্রনিক সামগ্রী আর মাত্র ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্রে যুবলীগ নেতা দিদারের স্ত্রীর সংসার। এছাড়া ছেলের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ডও রয়েছে তাঁর।

চট্টগ্রাম শহর, পটিয়া, ঢাকায় বাড়ি-ফ্ল্যাট, জমিজমায় বেশ সম্পদশালী যুবলীগ নেতা দিদার। স্থাবর সম্পদে পটিয়ার বাহুলী মৌজায় ৪ কোটি ২১ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় কেনা তিন কানি ১ কন্ট ৬ তিল পরিমাণ কৃষি জমি রয়েছে দিদারের। চট্টগ্রাম শহরে তাঁর রয়েছে ষোলশহরের ১৪৫৭ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আর ১১০ বর্গফুটের গ্যারেজ। যার মূল মূল্য ৩৩ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৬টাকা। এছাড়া পশ্চিম ষোলশহর মৌজায় ২৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকায় কেনা তিন গণ্ডার কিছু বেশি অকৃষি জমি। গ্রামে ৪ কোটি টাকার কৃষি জমি, ষোলশহরে ফ্ল্যাট-গ্যারেজ, জমি ছাড়াও কল্পলোক আবাসিক এলাকায় ২ দশমিক ৬৯ কাঠায় ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকার ‘দালান’ রাজধানী ঢাকার মতিঝিলে ১৩২০ বর্গফুটে ৩৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকায় কেনা ফ্ল্যাট, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে ৪ কাঠা জমিতে ১০ হাজার বর্গফুটের পুরাতন একটি দালানও রয়েছে তাঁর। যার মূল সাড়ে ৫ কোটি টাকা। স্ত্রী-সন্তানের কিছুই নেই।

নগদে ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকার মালিক এক সময়ের পৌর মেয়র হারুনুর রশিদের। ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৬২ টাকা হাতে আছে তাঁর স্ত্রীরও। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করেছেন ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ৫১৪ টাকা, স্ত্রীর নামে রাখা ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমূহের মূলধন আছেন ৮ কোটি ৬ লাখ ৬ হাজার ২৬৭ টাকা। স্ত্রীর নামেও ব্যবসার মূলধন আছে ৩ লাখ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস, সঞ্চয়পত্র বাবদও রয়েছে ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ১০ লাখ ৮৬ হাজার ২৫০ টাকা আছে স্ত্রীর। স্ত্রীর নামে নিজস্ব কোন গাড়ি নেই। ১৫ লাখ টাকার একটি ‘কার’ একমাত্র বাহন তাঁদের। ২০ হাজার টাকায় ২ ভরি স্বর্ণ কিনেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা হারুন, ৪ লাখ টাকায় ৪০ ভরি স্বর্ণ যুগিয়েছেন তাঁর স্ত্রী। স্বামী-স্ত্রী দুজনের দুটি টিভি, দুটি মোবাইল, আরেকটি ফ্রিজ মিলিয়ে আছে ৭০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক পণ্য। ৪০ হাজার টাকায় সংসারের আসবাবপত্র যুগিয়েছেন ‘পৌর মেয়র’ হারুন। এর মধ্যে চেয়ার, খাট সোফা তাঁর নিজেরই। ড্রেসিং টেবিল, ওয়ারড্রব, আলমারি, ডাইনিং টেবিল স্ত্রীর।

অস্থাবর সম্পদে ৬২ দশমিক ২ শতক কৃষি জমি। তাও ৬ লাখ ৩১ হাজার ৯৭২ টাকায়  কেনা। অকৃষি জমি রয়েছে ২ কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার টাকার। ৪০০ শতক যৌথ মালিকানায় যেখানে ৮০ শতক তাঁর। ১০ লাখ টাকার একটি ফ্যাক্টরি। তিনটি দালানে তাঁর ৬ ভাগের ১ অংশ, ২ ফ্যাক্টরিতে ২ অংশ ভাগে পড়বে। ভাগের সম্পত্তির মূল পড়ছে ১৬ লাখ টাকা। ২৩৬০ বর্গফুটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে হারুনেরও। ৬ ভাগের ১ অংশ পাবেন পৈত্রিক বাড়ি থেকেও।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়