ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং/
আশ্রয়কেন্দ্রে শিক্ষার্থী, তবুও পরীক্ষা নিল চবির আরবি বিভাগ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:১৯, ২৫ অক্টোবর ২০২২
আশ্রয়কেন্দ্রে শিক্ষার্থী, তবুও পরীক্ষা নিল চবির আরবি বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ।

ঘুর্ণিঝড় 'সিত্রাং' এর প্রভাবে ভেসে গেছে বহু উপকূলীয় অঞ্চল। দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে লোডশেডিং, গ্যাস ও পানির সংকট। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও বন্ধ ঘোষণা করেছে সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আরবি বিভাগ। 

ঘুর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এ আটকে পড়া উপকূলীয় অঞ্চলে পরীক্ষার্থীর কথা না ভেবেই রীতিমতো জোর করে পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এ বিভাগে। মঙ্গলাবর (২৫ অক্টোবর) আরবি বিভাগের মাস্টার্সের ৫০৩ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা ছিল।

জানা যায়, মাস্টার্সে অধ্যয়নরত হওয়ার সুবাদে অনেকেই নিজ গ্রামে, অনেকে টিউশনের সুবাদে ক্যাম্পাস থেকে খানিকটা দূরে অবস্থান করেন। তারা পরীক্ষার সময় এসে পরীক্ষা দিয়ে আবার ফেরত চলে যান।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে অনেক শিক্ষার্থীই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আসতে পারেননি। তাদের অনেকেই আবার স্বপরিবারে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন। এসব বিষয় বিভাগের শিক্ষকদের জানানোর পরেও তাতে কর্ণপাত না করে রীতিমতো জোর করেই পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এক পর্যায়ে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের মানবিক দিক সমর্থনে সকল পরীক্ষার্থীই পরীক্ষা বয়কট করেন। 

পরীক্ষার্থীরা জানান, মাস্টার্সে ৯১ জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা বয়কট করে। মাত্র ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পরীক্ষা শেষ করে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু শিক্ষকদের বিভিন্নরকম চাপের মুখে পড়ে এক পর্যায়ে ওই ৩০ শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে বসতে বাধ্য হন। বাকিরা উপকূলীয় বন্ধুদের অবস্থা বিবেচনা করে তাদের অবস্থানে অনড় থাকলেও বিভাগের শিক্ষকরা তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে রাজি হননি।

গতকাল রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা বিভাগটির মাস্টার্সে শিক্ষার্থী আবুল ফয়েজ। বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া এলাকার রত্নপুর গ্রাম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তিনি পরীক্ষায় অংশ নেন। ঘুর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর কারণে ফয়েজের গ্রাম ছিল পানিবন্দি।

ফয়েজ বলেন, 'ঘুর্ণিঝড়ের কারণে বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে আমাদের লোকালয়ে পানি ঢুকে। আমরা পুরো পরিবারসহ গতকাল রাতে আশ্রয় কেন্দে ছিলাম। নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ না থাকায় ফোনে সরাসরি কথা বলাও সম্ভব ছিল না। যেখানে জীবন বাঁচানো দায়, সেখানে পরীক্ষা! তবুও বিষয়টি আমি বিভাগের সভাপতিকে জানিয়ে ম্যাসেজও করেছি। কিন্তু তিনি বিষয়টি কর্ণপাত না করেই পরীক্ষা নিয়ে নিলেন। শিক্ষকরা আমাদের অসহায়ত্বের কথাও একবারও চিন্তা করলেন না।'

মাস্টার্সের আরেক পরীক্ষার্থী মঈনুল তালুকদার বলেন, ‘ঘুর্ণিঝড়ের কারণে আমাদের অনেক বন্ধুই আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন। বিভাগের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অফিসিয়াল যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে তাতে আমরা সবাই প্রতিকূল অবস্থার কথা জানিয়ে বারবার শিক্ষকদের অনুরোধ করেছিলাম পরীক্ষা স্থগিত করার জন্য। সভাপতি স্যারকে ফোন করেও বিষয়টি জানিয়েছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকদের এত আকুতি মিনতি করার পরও কিছুতেই আমরা শিক্ষকদের মন গলাতে পারিনি। তাঁরা জোর করে অনেককে ভয়ভীতি দেখিয়ে কিছু পরীক্ষার্থী নিয়ে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। আমরা শিক্ষকদের কাছ থেকে এর একটি সুন্দর সমাধান আশা করছি। অন্যথায় যদি প্রয়োজন পড়ে আমরা উপাচার্যের কাছে এ নিয়ে দাবি জানাব।’

এদিকে কোনো পরীক্ষার্থীই আশ্রয়কেন্দ্রে আটকে পড়ার খবর জানতেন না বলে জানিয়েছেন আরবি বিভাগের সভাপতি ড. মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ আটকা পড়লে সেটা আমাদেরকে জানাতে হবে। কিন্তু এটা আমাদেরকে কেউ জানায়নি। এ ব্যাপারে কেউ আমাদেরকে কোনো তথ্যও দেয়নি। তারা পরীক্ষা না দেয়ার জন্যই মূলত ঘুর্ণিঝড়ের অজুহাত দেখিয়েছে। বিভাগের সকল শিক্ষকদের সাথে মিটিং করেই আমরা পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়