Cvoice24.com

চবিতেও বেড়েছে চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২
চবিতেও বেড়েছে চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিদিনই আবাসিক হল ও আশেপাশের কটেজ থেকে প্রায় আট-দশজন চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয়ে মেডিকেলে যাচ্ছেন।

প্রতিবছর গ্রীষ্মে এ ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগের দেখা মিললেও এবার শরতে বেড়েছে এর প্রকোপ। চোখ জ্বলা, চুলকানি, খচখচে ভাব থাকা, চোখ থেকে পানি পড়া, চোখে বার বার সাদা ময়লা আসা, কিছু ক্ষেত্রে চোখে তীব্র ব্যথা এ রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ।

চিকিৎসকরা বলছেন, এটি এক ধরনের ভাইরাস জনিত রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটিকে কনজাংটিভাইটিস বা কনজাংটিভার বলা হলেও সমস্যাটি চোখ ওঠা নামেই পরিচিত। রোগটি ছোঁয়াচে, ফলে দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে আর বর্ষায় ও রিতু পরিবর্তনে অনেক সময় চোখ ওঠার প্রকোপ বাড়ে।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাঈম উদ্দিন গতকাল বুধবার থেকে চোখ উঠা রোগে আক্রান্ত। তিনি বলেন, ‘গতকাল থেকে আমার চোখ দুটি ছোট, লাল আর ফুলে গেছে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু ঔষধ ও একটা ড্রপ ব্যবহার করছি।’

আলাওল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইমাম ইমু বলেন, ‘চোখে কাটা কাটা বাজে। চুলকায়। আলোর দিকে তাকাতে পারি না। ঘুম থেকে উঠে দেখি দু’চোখ আটকিয়ে গেছে। তবে ড্রপ ব্যবহারের পর এখন আমি সুস্থ।’

এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী রেদওয়ান আহমদ বলেন, ‘বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি চোখ মেলতে পারছি না। ভাবলাম রাত করে ঘুমিয়েছি, তাই হয়তো এমন হয়েছে। কিন্তু না, বাম চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছে, চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে। পরে চবি মেডিকেলে গেলাম। সেখান থেকেছে এই রকমের টেবলেট ও একটা ড্রপ দিয়েছে। কিন্তু ড্রপটা মেডিকেলে নেই। এমনকি আশেপাশেরও কোন ফার্মেসিতে পেলাম না। পরে হতাশ হয়ে রুমে ফিরে এলাম।'

'এর দুইদিন আগে পাশের রুমের একজন ভাই এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরে ওনার কাছ থেকে ড্রপটা চেয়ে নিয়ে আসছি। এখন নিয়মিত ড্রপ দিচ্ছি চোখে- যোগ করেন রেদওয়ান।

বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের (ভারপ্রাপ্ত) চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, 'গত কিছুদিন ধরে আমাদের মেডিকেলে প্রতিদিনই প্রায় আট-দশজন করে কনজাংটিভাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে আসতেছে। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগে আক্রান্তরা সাধারণত পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। তবে, শর্ত হলো অন্যান্যদের থেকে একটু দূরে থাকতে হবে। কেননা, এটি কারো হলে তার আশেপাশের অন্যদেরও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।'

তিনি আরও জানান, 'গত কয়েকদিনে চোখের ড্রপের চাহিদা প্রচুর বাড়ায় আমাদের মেডিকেলেও এর সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের মেডিকেল থেকে সাধারণত স্কয়ার গ্রুপের 'SQ-Mycetin' নামের ড্রপটা দেয়া হয়। এটি চোখের জন্য সবচেয়ে ভালো। কিন্তু এটির সাপ্লাই এখন সারাদেশেই কমে গেছে। যার কারণে, সচরাচর এই ড্রপটা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে, অন্যান্য চোখের ড্রপগুলোও ব্যবহার করা যাবে। কেউ যেন চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া কোন চিকিৎসা না নেয়।'

চবির দুই নম্বর গেটের এক ফার্মেসি ব্যবসায়ী জানান, ‘মেডিকেল থেকে যে ড্রপটা প্রেসক্রিপশনে লিখে দেয় তা আমাদের কারোর কাছেই নেই। শেষ হয়ে গেছে। তবে, অন্য ড্রপ আছে। অনেকেই আবার চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই আসে চোখের ড্রপের জন্য। জোরাজোরি করলে না দিয়েও পারি না। তখন আমাদের কাছে যেগুলো আছে সেগুলোই তাদেরকে দেই।’

চোখ ওঠা রোগে করণীয়: 

চোখ ওঠা ছোঁয়াচে রোগ। বাতাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে, তবে সবচেয়ে বেশি ছড়ায় বার বার হাত চোখে দিলে। হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে। চোখের পানি সাবধানে টিস্যু দিয়ে মুছে নিতে হবে। ব্যবহার করা সেই টিস্যু সাবধানে নিরাপদ স্থানে ফেলতে হবে। যাতে করে রোগ না ছড়ায়।

চোখ ঘষা বা চুলকানো থেকে বিরত থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে আই ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। রোগীর ব্যবহার করা সামগ্রী অন্যদের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। এক চোখে সমস্যা দেখা দিলে অন্য চোখকে সংক্রমণ থেকে নিরাপদে রাখতে হবে। সমস্যা এক সপ্তাহের মধ্যে না সারলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়